মিয়ানমার ছায়া সরকার ও মার্কিন প্রতিনিধির বৈঠক

আগের সংবাদ

ইএফডির দাম নিয়ে জটিলতা : দোকান নির্ধারণ করবেন ভ্যাট কর্মকর্তারা, বিপাকে পড়বেন ছোট ব্যবসায়ীরা

পরের সংবাদ

‘আনইভেন’ লোডিং নাকি তলা ফেটে ফেরি দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাশেদ আলী : পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি শাহ আমানতের মেরামতের তথ্য ও ডুবে যাওয়ার কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) জানায়, মাস চারেক আগে ফেরিটি সম্পূর্ণ মেরামত করা হয়েছিল। এতে ফেরির আয়ুষ্কাল অন্তত ১০ বছর বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ডকইয়ার্ড সূত্র জানা গেছে, তখন শুধু ফেরির প্রপেলারটি মেরামত করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ‘আনইভেন’ লোডিংয়ের কারণে ফেরিটি ভারসাম্য হারিয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসির প্রধান প্রকৌশলী ধারণা করলেও ফেরির মাস্টার তলা ফেটে পানি ওঠার কথা জানিয়েছেন। ফেরিতে ব্ল্যাস্ট ট্যাংক ছিল না। ছিল না এর হালনাগাদ সার্ভেও।
পণ্যবাহী ১৭টি ট্রাক ও ১০-১২টি মোটরসাইকেল নিয়ে গতকাল বুধবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা রো রো ফেরি শাহ আমানত মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে ভেড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই একদিকে কাত হয়ে ডুবে যায়। এতে কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও অন্তত ১৪টি মালবোঝাই ট্রাক ও ৬টি মোটর সাইকেল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। মাঝ নদীতে দুর্ঘটনাটি ঘটলে অবস্থা কতটা ভয়াবহ হতো- গতকাল দিনভর এমন আলোচনা ছিল মানুষের মুখে মুখে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর এর কারণ ও মেরামত সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য নিয়ে বিআইডব্লিউটিসির বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বক্তব্যে গরমিল পাওয়া গেছে। বিআইডব্লিউটিএর জনসংযোগ

কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মিশা ভোরের কাগজকে জানান, ফেরিতে থাকা ‘সলিড ব্লাস্ট’ (নৌযানে ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যবহারিত সিমেন্ট বা লোহার ভারি বস্তু) স্থানচ্যুত হওয়ায় এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফেরিটি জরাজীর্ণ ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মাত্র কয়েক মাস আগে সেটি সম্পূর্ণ মেরামত করা হয়েছে। সে কারণে এর আয়ুষ্কাল ১০ বছর বেড়ে গেছে। আর ফেরিটিও খুব বেশি পুরনো নয়। নব্বইয়ের দশকে নির্মিত এই ফেরির তলা ফেটে এখনই দুর্ঘটনা ঘটার কথা নয়।
তবে ফেরিটি যে ডকইয়ার্ডে মেরামত করা হয়েছিল, মেঘনার ‘থ্রি-এঙ্গেল’ নামে ওই ডকইয়ার্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, শাহ আমানত, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরসহ কয়েকটি ফেরির কাজ গত মে-জুনে তারা করেছেন। এর মধ্যে শাহ আমানতের শুধু প্রপেলারে কাজ করা হয়েছে। তিনি জানান, ওই ফেরিতে কোনো সলিড ব্লাস্ট বা ব্লাস্ট ট্যাংকও নেই। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ফেরিগুলোর অবস্থা ভালো নয়। তাই তলা ফেটেই এমন দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেশি।
দুর্ঘটনার পর ফেরির মাস্টার শরিফুল ইসলাম লিটন গণমাধ্যমকে জানান, চার মাস আগে ফেরিটি মেরামত শেষে পাটুরিয়ায় আনা হয়। দুর্ঘটনার দিন সকাল সোয়া ৯টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৭টি পণ্যবাহী ট্রাক ও ১৬টি মোটরসাইকেল নিয়ে পাটুরিয়া অভিমুখে রওনা হন তিনি। এর কিছু সময় পর তলদেশের ফুটো দিয়ে পানি উঠতে শুরু করে। তিনি যখন বিষয়টি টের পান তখন আর কিছু করার ছিল না।
অন্যদিকে, বিআইডব্লিউটিসির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল গফুর সরকার জানান, ফেরিটি একদিকে কাত হয়ে ডুবে যাওয়ার মূল কারণ হতে পারে এর ‘আনইভেন’ লোডিং। অর্থাৎ উপরের ডেকে সঠিকভাবে যানবাহন না তোলায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, যদি একদিকে খুব বেশি ওজনের গাড়ি রাখা হয় আর অন্যদিকে কম ওজনের, তখন ফেরিটি ভারসাম্য হারাতে পারে। তলা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গত মে বা জুনের দিকে ফেরিটির তলদেশে সব মেরামতের (মেজর রিপেয়ারিং) কাজ করানো হয়েছে। তখন প্রপেলারও মেরামত করা হয়। ফুটো হয়ে পানি ওঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ফেরিটি তোলার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে মাস্টার যে পানি উঠতে দেখার কথা বলেছেন, সেটি জমে থাকা বৃষ্টির পানিও হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে নৌযান ও নৌযন্ত্র প্রকৌশলী লে. কমান্ডার (অব.) এ এম আবদুল্লাহ ভোরের কাগজকে জানান, তলদেশ ফুটো হলে ফেরিটি নদীর যে কোনো এলাকায় ডুবে যেতে পারে। আবার আনইভেন লোডিংয়ের কারণেও তীরে এসে দ্রুত কাত হয়ে সেটি ডুবে যেতে পারে। ফেরিটি তোলার পর তা স্পষ্ট বোঝা যাবে। তিনি বলেন, আনইভেন লোডিং হলে মোমেন্টাম ফোর্সের কারণে ঘাটের কাছে এসে দুর্ঘটনা ঘটে। কেননা, তখন স্থলভাগের সঙ্গে পানির বিপরীত দিকের ধাক্কা এক সঙ্গে কাজ করে বলে বিষয়টি একটিভ হয়। এটি একটি টেকনিক্যাল আলোচনা। তবে সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে, নদীতে চলার সময় গতির কারণে ফেরিটি কাত হয়ে পড়ে না ঠিকই, কিন্তু এ জাতীয় আনইভেন লোডিংয়ে ঘাটে এসে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ভিডিওতে দেখলাম ফেরিটি ঘাটে এসে ভেড়ার কিছু পরে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই এখানে নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। এমন হতে পারে যে, কয়েকটি ট্রাক ফেরি থেকে নামার পর একদিক আরো ভারী হয়ে গেছে। তখন আনইভেন লোডিং আরো বেশি কার্যকর হয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, তলায় কোনো দুর্বল জয়েন্ট বা ফাটল ছিল- যা হঠাৎ বেড়ে গিয়ে দ্রুত পানি প্রবেশ করেছে এবং একদিকে কাত হয়ে ফেরিটি ডুবে গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়