চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা : চালকের সহকারী শাহীরুল এখন কোটিপতি

আগের সংবাদ

তিস্তার তাণ্ডবে লালমনিরহাটে পথে বসেছে হাজারো পরিবার

পরের সংবাদ

সাক্ষাৎকার : ড. সাইফুল মজিদ চেয়ারম্যান, গ্রামীণ ব্যাংক > এগিয়ে চলছে গ্রামীণ ব্যাংক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেজুঁতি : ভালোই চলছে গ্রামীণ ব্যাংক। করোনা মহামারিতে যখন বিশ্ব কঠিন সময় অতিবাহিত করেছে, তখন গ্রামীণ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে মুনাফা করেছে। করোনার মধ্যেও মাঠপর্যায়ে গ্রামীণ ব্যাংকের শক্তিশালী কাঠামোর কারণে ঋণ কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলেছে। এমনকি সদস্য সংখ্যাও বেড়েছে। জানতে চাইলে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল মজিদ বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ভালোই চলছে। মুনাফা ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানটির কাঠামো বেশ শক্তিশালী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) এই অধ্যাপক বলেন, গ্রামীণ ব্যাংককে ঢেলে সাজানো হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ইতিহাসে ২০২০ সাল শেষে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয়েছে। যার পরিমাণ ৪৮৮ কোটি টাকা। এজন্য গত বছরের শুরুর দিকে আমি গ্রামীণ ব্যাংকে যোগদানের পরেই দেখলাম, অনেক কর্মকর্তা ২৭-২৮ বছর ধরে কাজ করছেন। কিন্তু তাদের পদোন্নতি হচ্ছে না, এক জায়গাতেই আটকে আছেন। অনেক ভালো ভালো কর্মকর্তা বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে এসে শিক্ষানবিশ অফিসার হিসেবে যোগদান করেছেন, এরপর তাদের আর খুব বেশি প্রমোশন হয়নি। অনেকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ বছর অতিক্রম করেছেন। আমরা সম্মিলিতভাবে বৈঠক করে গত বছরই একটি পদোন্নতি নীতিমালা তৈরি করি। এই নীতিমালার আওতায় গত বছর অক্টোবরে আড়াই হাজার কর্মীকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এটা মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। কর্মকর্তারা তাদের মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছেন এবং ব্যাংকের সফলতা বয়ে এনেছেন।
ড. মজিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে গত দুই মাসেরও বেশি সময় টাকা সংগ্রহ করা এবং ঋণ দেয়া কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এরপরও গত বছরে আমরা চেষ্টা করেছি সময়টাকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য। আমরা আগস্ট মাস থেকে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিকল্পনা নেই এবং তা বাস্তবায়ন করি। ১৯৭৬ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর ১৯৮৩ সালে ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃতি লাভ করে। যদিও অনেকেই এখনো মনে করে গ্রামীণ ব্যাংক একটি এনজিও সংস্থা। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক একটি বিশেষায়িত ব্যাংক।
এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি নির্দেশনা আসে মোট আয়ের ১ শতাংশ রিজার্ভে রাখতে হবে। এক শতাংশ হিসাব অনুযায়ী ১৩৪ কোটি টাকা। ফলে ৪৮৮ কোটি টাকা মুনাফা থেকে এ টাকাটা রিজার্ভে রাখতে গিয়ে আমাদের হয়েছে ৩৪৮ কোটি টাকা। ১ শতাংশ আমরা গ্রস ইনকাম থেকেই সংরক্ষিত তহবিলে রেখেছি।
বর্তমানে সারাদেশে ৮১ হাজার ৬৭৮টি গ্রামে ২ হাজার ৫৬৮টি গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা রয়েছে। যার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ২১ জন সদস্য সেবা পেয়েছেন। এসব সদস্যদের মধ্যে এ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৮৫৫ দশমিক ৮২ মিলিয়ন টাকা। ঋণ আদায় হয়েছে ৯৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ডিপোজিট রয়েছে ২২ হাজার ৮৫৭ দশমিক ৪১ মিলিয়ন টাকা।
সুতরাং আমরা বলতে পারি- এই কঠিন বছরের মধ্যেও আমরা অনেক ভালো করেছি। এ অর্জনের পেছনে সমস্ত অবদান ছিল টিমের মাধ্যমে কাজ করা। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে আজ এই অবস্থানে এসেছি। এছাড়া করোনাকালে আমাদের বিভিন্ন গ্রামের কিছু সংগ্রামী সদস্যদের ৩ মাস খাদ্যপণ্য সহযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি মাসে ৬০০ টাকা করে দিয়েছি।
চলতি বছরেও সফলতা ধরে রাখার কথা জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আবার ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে সবকিছুই নিয়ে এ বছর আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে আমাদের প্রায় আড়াই মাস ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে প্রতিনিয়ত আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছি। করোনাকালীন সময়ে আমরা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করেছি, আমরা চেষ্টা করছি শতভাগ ডিজিটাল ব্যাংকিং করার। সারাদেশে প্রতিদিনের লেনদেনের তথ্য আমরা প্রতিদিন পেয়ে থাকি। আমরা গ্রামীণের সক্ষমতা তৈরি করছি আইটি ডিপার্টমেন্ট তৈরি করেছি। পাশাপাশি ই-আর্কাইভ তৈরি করছি গ্রামীণ ব্যাংকের যত পুরনো ডকুমেন্টস রয়েছে, ডাটাবেজ রয়েছে তা সংরক্ষণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। ই-আর্কাইভ তৈরির পাশাপাশি আমাদের হার্ডকপিও রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের সারাদেশে প্রায় ৭ কোটি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত বছরের ১৫ আগস্ট থেকে আমরা এই বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করি। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ফলজ এবং ৪০ শতাংশ বনজ গাছ।
ড. মজিদ বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের আমরা সদস্য বলে থাকি। তাদের সঙ্গে আমাদের কর্মীদের নিয়মিত যোগাযোগের ফলে করোনার মধ্যে ঋণের টাকা আদায় করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের লোকসানি শাখা রয়েছে ৪০টির মতো। এসব শাখা চলতি অক্টোবরের মধ্যেই লাভের মধ্যে চলে আসবে, এমনটাই আশা করছি।
সার্বিক হিসেবে আগস্ট মাস পর্যন্ত আমরা লোকসানে ছিলাম। সেপ্টেম্বর মাসে আমরা মাঠ পর্যায়ে লাভে ছিলাম। কিন্তু হেড অফিস লোকসানে ছিল। এ মাসে আমাদের হেড অফিসের ক্ষতি পূরণ করে গ্রামীণ ব্যাংকের সার্বিকভাবে ৪০ কোটি টাকা মুনাফা থাকবে। সেই হিসেবে বছর শেষে আমাদের মুনাফা থাকবে ১৫০ কোটি টাকার মতো।
তিনি বলেন, প্রধান কার্যালয়ে বেশকিছু ব্যয় রয়েছে। এছাড়া প্রধান কার্যালয়ে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত আছে। এই সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা আছে সেখান থেকে গত বছরের চেয়ে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার মতো কম পেয়েছি। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক ২০২০ সাল পর্যন্ত সরকারের নির্দেশনায় করমুক্ত ছিল। চলতি বছরে করের আওতায় চলে এসেছে। এছাড়া গত বছর ঋণ পরিশোধের হার ৭৯ শতাংশে নেমে এসেছিল।
নভেম্বর-ডিসেম্বর হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের পিক টাইম। আমাদের কুঋণ আছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। জোনাল ম্যানেজার যারা আছেন তারা ছুটির দিনগুলোতে গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে গিয়ে খেলাপি ঋণ আদায়ে কাজ করছেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের লক্ষ্য কী- এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক শুধু ক্ষুদ্র ঋণ দেয় না, সেখানে আছে শিক্ষা কর্মসূচি, গৃহনির্মাণ কর্মসূচি, ভিক্ষু সদস্যদের পুনর্বাসন, বিভিন্ন ধরনের বৃত্তির ব্যবস্থা। বৃত্তিমূলক কর্মসূচিকে আমরা আরো বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও চালু করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়