চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা : চালকের সহকারী শাহীরুল এখন কোটিপতি

আগের সংবাদ

তিস্তার তাণ্ডবে লালমনিরহাটে পথে বসেছে হাজারো পরিবার

পরের সংবাদ

নানা অপরাধে জড়াচ্ছে ভোলার বেদে সম্প্রদায়

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এইচ এম নাহিদ, ভোলা থেকে : সিঙ্গা লাগাই, দাঁতের পোকা ফালাই, খা খা খা খা বখখিলারে খা, কাঁচা ধইরা খা, এই হাঁকডাকগুলো এখন আর শোনা যায় না ভোলার বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে। বানর আর সাপ খেলার চিরচেনা আয়োজন বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে আর দেখা যায় না। দিন বদলের হাওয়ায় নিজেদের উজার করে অধিক মুনাফার আশায় সম্প্রদায়ের অধিকাংশ কর্তারা নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে নানা অপরাধে। তাবিজের অন্তরালে মাদক ও জিনের বাদশার অভিনব মিশন হাতে নিচ্ছে তারা। তাদের এই মিশনের টার্গেট তরুণ সমাজ ও গ্রামের সাধারণ মানুষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে বেদেরা মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার হলুদিয়া ও গোয়ালিমান্দার কুমারবাগ ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা। যাযাবরের তকমা লাগালেও আদতে তারা এখন আর যাযাবর নয়। তাদের সম্প্রদায়ের জনপ্রতিনিধিও সেখানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে। ভোলায় জীর্ণশীর্ণ বসবাস করলেও নিজ এলাকায় তাদের রয়েছে আলিশান বাড়ি, গাড়ি!
পরিচয় গোপনের শর্তে এক বেদিনী বলেন, পূর্বপুরুষের পেশায় এখন আর ভাত জোটে না। ন্যায়-অন্যায় বুঝি না। এখানকার মিয়ারাই আমাদের ভরসা। ভালো-মন্দ তারাই বোঝেন।
সাপুরে সোহেল (৪০) বলেন, ‘১০ বছর হইলো এইখানে আইসিছি, আগের মতন এহন আর কাইজকাম নাই। গ্রামেগঞ্জে বাইর হইয়ে যেইটুকু রোজগার হয় তা দিয়ে কোনো রকম চৈলে যায়। সরকার আমাদির যদি কিছু একটে কৈরে দিত তা হইলে আর এইখানি পইরা থাক তুইমনা।’
এক যুগ ধরে প্রায় ২৫০টি পরিবার ভোলার সদর হেলিপ্যাড, ঘুইঙ্গারহাট, খাসের হাট, বোরহানউদ্দিন হেলিপ্যাড, কুঞ্জেরহাট, নাঙ্গলখালী, চরফ্যাশনের বটতলা, লেতরা, দক্ষিণআইচা, আঞ্জুরহাটসহ ভোলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করছে। প্রায় ৪০০ যুবক, মহিলা ও বয়স্ক তাদের আদি পেশা বদল করে ভয়ংকর অপরাধে জড়াচ্ছে। স্থানীয়দের একটি বড় চক্র এদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
শহরের মাদকসেবীদের তথ্য অনুযায়ী, বেদে সম্প্রদায়ের কিছু নারী ও পুরুষ এখন ভোলা থেকে চরফ্যাশন পর্যন্ত নতুন করে মাদক সাপ্লাইয়ের কাজ করছে। সাধারণ সাপ্লাইয়ারের কাছ থেকে ওদের দাম একটু কম। তাছাড়া এখন আমরা ঘরে বসে এদের কাছ থেকে ইয়াবা, গাঁজা সংগ্রহ করতে পারি। কারণ, পুলিশ তাদের সন্দেহ করে না।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. জিতু (৩৫), মো. ফিরোজ (৫৫) গ্রাম্য ডাক্তার মো. খোকন (৩৮) বলেন, বেদে সম্প্রদায় পরিচয়ে পুরুষহীন বাড়িতে ঢুকে কিছুসংখ্যক পুরুষ ও মহিলা জিনের কথা বলে সহজ-সরল গৃহিণীদের লাখ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে হাতে তাবিজ ও আংটি দিয়ে আমাদের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কাজ না হওয়ায় টাকা চাইতে গেলে আমাদের বংশ জিন দিয়ে ধ্বংস করার হুমকি দেয়।
বেদে সর্দার খায়রুল (৪৫) অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কোনো দিন মাদকের নামও হুনিনাই। এই হুনলাম, আর জিনটা কেডা-বাপ? আমগোরে এইহানে বড় মিয়া জায়গা দিছে, তাই পইরে আছি।’ আয়-রোজগারের উৎস জানতে চাইলে বলেন, সাপ খেলা, বানর খেলা নিষিদ্ধ। তাই কাজকর্ম নাই। দেশ থেইকে পয়সা আইনে এহন কোনো রকম চৈলে যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়