চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা : চালকের সহকারী শাহীরুল এখন কোটিপতি

আগের সংবাদ

তিস্তার তাণ্ডবে লালমনিরহাটে পথে বসেছে হাজারো পরিবার

পরের সংবাদ

জনবল সংকটে তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : ৬ চিকিৎসকে আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে : হাওরবেষ্টিত ভাটির জনপদ অধ্যুষিত শিক্ষা-দীক্ষা, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নাগরিক নানা সুবিধাবঞ্চিত উপজেলা তাহিরপুর। তাহিরপুর সদর, বালিজুরী, বাদাঘাট, বড়দল উত্তর, বড়দল দক্ষিণ, শ্রীপুর উত্তর, শ্রীপুর দক্ষিণ ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত তাহিরপুরের মোট জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। আড়াই লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার জন্য রয়েছেন মাত্র ৬ জন চিকিৎসক। এছাড়া রয়েছে নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল সংকট।
মেডিকেল অফিসারের সংকট থাকায় প্রায়ই উপসহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালাতে হচ্ছে জরুরি বিভাগ। গাইনি চিকিৎসক না থাকায় বিঘিœত হচ্ছে নারীদের চিকিৎসাসেবা। রয়েছে আধুনিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অভাব। ফলে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা। কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাওরবাসী।
স্থানীয়রা জানান, তাহিরপুরে চিকিৎসক পদায়ন করা হলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উপজেলাটি হাওরবেষ্টিত হওয়ায় এখানে আসা চিকিৎসকরা কিছু দিন থাকার পর উপর মহলে তদবির করে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান। এমনকি কোনো কোনো চিকিৎসক যোগদান করার পর কখন বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান তা খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে মোট ১২৪ পদের বিপরীতে ৬৮ পদই রয়েছে শূন্য। প্রধান কর্মকর্তা ছাড়া আবাসিক চিকিৎসক, মেডিসিন, গাইনি, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া পদগুলো খালি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে।
১৩ জন চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েছেন ৬ জন। এর মধ্যে প্রেষণে রয়েছেন দুজন মেডিকেল অফিসার। ২০ জন নার্সের মধ্যে কর্মরত আছেন ৯ জন। তৃতীয় শ্রেণির ৭১ জন কর্মচারীর বিপরীতে রয়েছেন ৩৬ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট মোকাবিলা করা হচ্ছে আউটসোর্সিংয়ের ১৮ জন কর্মচারীর মাধ্যমে।
এদিকে তিন বছর আগে হাসপাতালটির জন্য একটি জেনারেটর ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু টেকনিশিয়ানের অভাবে এটি এখনো চালু করা যায়নি। নেই ডেন্টাল, ল্যাব ও রেডিও টেকনোলজিস্ট। এক্স-রে মেশিনটিও বিকল এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। ফলে চাইলেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষারও ব্যবস্থা নেই এখানে। ফলে লোকজন বাধ্য হয়ে স্থানীয় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বাড়তি টাকা খরচ করে রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা করছেন। হাওরবাসীর যোগাযোগ ব্যাবস্থা কথা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার একমাত্র নৌঅ্যাম্বুলেন্সটিও বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতালের পুকুরে।
উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের বুরহান মিয়া জানান, এখানে নারীদের জন্য কোনো গাইনি ডাক্তার নেই। ফলে জরুরি কোনো সমস্যা হলেও নরীরা চিকিৎসা নিতে পারছেন না।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কাউছার আহমদ বলেন, এই হাসপাতালে যে কোনো রোগের চিকিৎসা নিতে এলে রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা করাতে হয় হাসপাতালের বাইরে গিয়ে। ফলে নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হচ্ছে হতদরিদ্র লোকজনকে। আর এ জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা, যা অনেকের জন্যই গুদের উপর বিষফোঁড়া।
স্থানীয় সমাজকর্মী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, এটি উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল অথচ এখানে রক্ত পরীক্ষারও কোনো ব্যবস্থা নেই। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু আহমদ শাফী জানান, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় এর কার্যক্রম এখনো শুরু করা যায়নি। চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল সংকট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রতি মাসেই চাহিদাপত্র পাঠানো হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়