শাহজালাল বিমানবন্দর : পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচারের সময় গ্রেপ্তার ১

আগের সংবাদ

নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে বাড়ছে সহিংসতা

পরের সংবাদ

স্মরণ > ওমর আলী : যে তুমি আড়ালে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘এ দেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি’ কাব্যের মধ্য দিয়ে ষাটের কাব্যাকাশে আবির্ভূত হন কবি ওমর আলী (জন্ম ২০ অক্টোবর ১৯৩৯, মৃত্যু ৩ ডিসেম্বর ২০১৫, পাবনা)। আগে থেকেই বিভিন্ন দৈনিকে লিখলেও এ কাব্য প্রকাশের পরই তার কবি ও কাব্যখ্যাতির দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে এবং ষাটের কবি হিসেবে স্থায়ী আসনে সমাসীন হন। এমনকি এ কথাও বলা যায় এ কাব্যের কারণে তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়ও হয়েছিলেন। এরপর থেকেই তিনি ক্রমাগত লিখেছেন। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে এক সময় তিনি রাজধানী ছেড়ে মফস্বলে চলে যান; শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। নানা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে তার যাপিত জীবন। তবু তিনি থেমে যাননি; লিখেছেন প্রচুর- একে একে তার হাত থেকে বেরিয়ে আসে জীবন-অভিজ্ঞান নিঃসৃত নান্দনিক কাব্যকুশলী একেকটি গ্রন্থ। কিন্তু রাজধানীকেন্দ্রিক মেকি আড়ম্বরতা, সিন্ডিকেট, দলাদলি-নেতৃত্ব, মিডিয়াজৌলুস, খারিজ-গ্রহণের রাজনীতি প্রভৃতি থেকে দূরে অবস্থান করায় এক সময় তিনিও অযাচিতভাবে চলে যান অন্তরালে; যেন বা তাকে ঠেলে দেয়া হয় দূরে। ফলে ষাটের কবি হিসেবে পত্রপত্রিকা, ছোটকাগজ বা আড্ডা-আলোচনায় প্রায়ই তাকে ‘আড়ালে’ ঠেলে দেবার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অথচ সার্বিক কাব্যবিবেচনা ও বিশ্লেষণে তিনি ষাটের একজন শক্তিশালী কবি; ষাটের কাব্যাকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
মোটাদাগে কবি ওমর আলীর কাব্যপ্রবণতা আলোচনায় তাকে প্রেমের কবি হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। নারীর সৌন্দর্যচেতনার মধ্য দিয়ে দেহকেন্দ্রিক প্রেমের স্ফূরণ ঘটিয়েছেন তার কবিতায়; অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছে প্রকৃতি ও নিসর্গ। এমনকি তার স্বদেশ প্রেম, স্বাধীনতাচেতনা তথা মুক্তিযুদ্ধের কবিতায়ও অনিবার্য হিসেবে মূর্ত হয়েছে নারীর দেহকেন্দ্রিক সৌন্দর্যের সমান্তরাল বিচিত্র অনুভব। সহজ-সরল, পতিব্রতা, সন্তানসন্ততি-গোলাভরা ধান আর গোয়ালভরা গরু নিয়ে ব্যস্ত থাকা শ্যামলা রঙা পল্লী নারী আর বাংলাদেশ সমার্থক হয়ে উঠেছে তার কবিতায়। সবমিলিয়ে তিনি প্রেমেরই কবি। কিন্তু তার এ প্রেমের কবিতার মধ্যেই যে দ্রোহ-প্রতিবাদ-সংগ্রাম লুক্কায়িত রয়েছে; রয়েছে মানুষ ও মানুষের যাপিত জীবন, পারিপার্শ্বিকতা, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক জীবনাচার; অনেক সময়ই তা আমাদের ‘আড়ালে’ রয়ে যায়। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত তার ‘যে তুমি আড়ালে’ কাব্য থেকে এ ধরনের অনুষঙ্গ বা প্রতিকায়িত কিছু বিষয় তুলে ধরবার মাধ্যমে এ আড়াল দূর করবার প্রয়াসেই এ নিবন্ধে।
কবি ওমর আলী প্রেমের কবি; নারীর সৌন্দর্য অবলোকন করেছেন তিনি দেহকেন্দ্রিকচেতনায়। ‘শরীরে পোশাক থাকা সত্ত্বেও শরীরের গঠন প্রণালি দেখতে’ পেয়েছেন তিনি। তাদের মনভুলানো হাসিতে উদ্বেলিত হয়েছেন-উদ্ভাসিত হয়েছেন। কিন্তু এ হাসির আড়ালে যে দুঃখ-কষ্টের যাপিত জীবন তারা যাপন করেন তার খোঁজ ক’জন নিই। যৌনতাড়িত প্রেমের আশ্লেষের মধ্যে কবি তাদের এ দুঃখবোধও উপলব্ধি করেন:
কিন্তু সবচেয়ে মজার যে কথা তা হলো
ওদের হাসির পেছনে আর আমার ভালো লাগার নিচে
এরকম দুঃখ ছিল, এরকম কষ্টের দুঃখ, এরকম
দুঃখের নিঃসঙ্গতা (দোহনের গান)

কবির প্রেম শুধু নারীতেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি ভালোবাসেন নিসর্গ-প্রকৃতি। বাংলার শ্যামলিমা পল্লীগ্রাম তার সতত আরাধ্যবিষয়। পাবনার রাধাকান্তপুর মাঠ পেরিয়ে বাউলতীর্থ কুষ্টিয়ার শিলাইদহ যেতে যেতে দুপাশের বিস্তৃর্ণ চষামাঠ, শিশিরভেজা ঘাস, কোশাখালী চরের বালির ওপর ভেজা পায়ের ছাপ, দুধের মতো সাদা ভোর- অন্তরচোখের পর্দা খুলে দেয় বারবার। তিনি খুঁজে পান মুক্তির বারতা। সমস্ত প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা যেন এক লহমায় দূর হয়ে যায়; ঘুচে যায় সব কালিমা :
তিরতির করে এখনো চলছে টলটলে
পানির প্রবাহ
মুঠ ভরে তুলে নিয়ে কুলকুচি করে
ফেলে দিলে
চালে যায় দাঁতের ময়লা (রহিম চাচা অ রহিম চাচা)

নারী বা নিসর্গ প্রেমোলব্ধি তখনই সম্ভব যখন অন্তর্গত হৃদয়ে পরিবাহিত হয় প্রতিপাদ প্রেমোত্তাপ। মৃগনাভী হরিণ যেমন নিজ সুগন্ধে অস্থির হয়ে ছুটতে থাকে দিগি¦দিক। প্রেমাস্পদের গভীর আশ্লেষণের আকাক্সক্ষায় প্রেমিক-প্রেমিকাও তেমনি অনিবার ছুটে- তার এ তৃষ্ণার মুক্তি শুধু সমর্পণের মাধ্যমেই আসে। মানুষও নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠলে; নিজের ভালোমন্দ উপলব্ধি করতে শিখলে- তার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক মুক্তির জন্য সতত সংগ্রামে লিপ্ত হয়। হাসিমুখে নিজের জীবনকে সমর্পণ করে, দেশমাতাকে মুক্ত করার মাধ্যমেই আসে তার প্রকৃত মুক্তি। তখন নারী ও দেশমাতা সমার্থক হয়ে উঠে। স্বাধীন দেশের মুক্ত আকাশে-বাতাসেই পাওয়া যায় মুক্তির অনন্ত আস্বাদ।
…সেই হরিণের মতো আমি আমার নিজের
সেই গোপন সুগন্ধ
জেনে ফেলার সাথে সাথেই দারুণ অস্থির হয়ে ছুটি-
… … … … …
মুক্তি চাই শুধু
এই মুক্তি তুমি দিতে পারো আমার তৃষ্ণার মুক্তি
তোমার অধীনে… (আমার ভেতরে তৃষ্ণা কাঁদে)

মুক্তির বিপ্রতীপ প্রত্যয় আঁধার; পশ্চাৎপদতা-শৃঙ্খল। মানুষ আমৃত্যু মুক্তিপিয়াসী-সর্বব্যপ্ত মুক্তি চায় সে। মুক্তির প্রত্যাশায় সে আজীবন সংগ্রাম করে- মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। কিন্তু আসে কি মুক্তি? মুক্তি অর্জনের প্রধান অবলম্বন যে যূথবদ্ধতা-আঁধারের করাল গ্রাসে তা ভেঙে একেকজন বিচ্ছিন্নতায় নিমজ্জিত হতে থাকে কিংবা বলা যায় পালাতে পথ খোঁজে।
আঁধারে পালাচ্ছে গাছ সুবিশাল মাঠ খেয়াঘাট
আমরা পালিয়ে যাচ্ছি কথার আঁধার কুহেলিতে
যেমন শীতের ভোরে গোটা গ্রাম
গোটা এলাকা পলাতক
সব চেয়ে আকর্ষণীয় পলায়ন
এত কাছে থেকেও আমরা কেউ কাউকে দেখি না (সুন্দর পলায়ন)

কবি এ পলায়নও মেনে নিতে ইচ্ছুক; যদি এর সঙ্গে পালায় মানুষের ক্ষুধা। মানুষের প্রধান মৌল চাহিদা অন্ন- এর প্রয়োজন না থাকলে আপাতত তার আর কোনো চাহিদারই দরকার হতো না। কিছুদিন ক্ষুধা পলায়ন করবে কি না- কবি এ প্রশ্ন সামনে এনে তাবৎ ক্ষুধার্থ মানুষেরই কষ্টকে করপুটে তুলে নিয়েছেন:
অন্তত কিছুদিন আমাদের খিদে কি পালাচ্ছে? (সুন্দর পলায়ন)
বাস্তবিক অর্থে ক্ষুধা পালায় না। ক্ষুধার তাড়না-জঠরের জ¦ালার দুঃসহ যন্ত্রণা একসময় প্রতিবাদের ভাষায় রূপান্তরিত হয়; মানুষ সেøাগান মুখর হয়: ‘অন্ন চাই…, বাঁচার মত বাঁচতে চাই’। ওমর আলীর শ্যামল রঙা নারীরও রয়েছে ক্ষুধার জ¦ালা, ‘বারবার টিকে থাকার শক্ত প্রশ্ন’ তাকেও বিব্রত-বিপর্যস্ত করে। কবি তাকে সীমাহীন ভালোবাসা ও আরাধ্যের জায়গা থেকে ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দেন। ধৈর্যের মাধ্যমে সব প্রতিবন্ধকতা-প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তাকেও শক্ত প্রতিবাদে শামিল হবার আহ্বান জানান:

সালেহাকে তবু দিয়ে যাই পর্বতের মতো এক ধৈর্য ধারণ
যতই উড়িয়ে নিক যতই আছড়ে ভাঙুক মাটিতে
সালেহাকে দিয়ে যাই বারবার সমস্ত ভাসানো উথাল পাথাল
অশ্রæ সাঁতরিয়ে-
শক্ত প্রতিবাদের কোমল একটি কণ্ঠস্বর… (সালেহাকে একটু ডেকে দিন)

এবং একসময় কবি নিজেই পৌরাণিক চরিত্র হিসেবে দাঁড়িয়ে এইসব সংগ্রাম-প্রতিবাদে ক্লান্তিহীন সিসিফাসের মতো আজীবন উৎসর্গ করবার বাসনা পোষণ করেন:
আমার ছয় মাইল হাঁটা কিছুই নয়
সারারাত পাথর গড়িয়ে উচ্চে তোলে সিসিফাস (ডাকছে পাখিটা)

অথচ কবির মানসদেবীর চাওয়া-পাওয়া বেশি কিছু না; সে অল্পতেই তুষ্ট।
ইরি ধানের মোটা চাল কিংবা তিনখানা রুটি এক বাটি পানি
সারাদিন পরে যেন জুড়ালো পরাণ
ছনের দোচলা শুধু উঠোনে মাটির লেপা চুলো
শুকনো খড় ডাল-পাতা কুড়িয়ে এনেছে সেই সুস্বাস্থ্য শ্যামলী (পরাণ পরাণ)

‘হঠাৎ পায়ের নিচে পিঁপড়েরা পিষ্ট হতে পারে/ এজন্যেও আমি খুব দেখে দেখে চলি’ (ডাকছে পাখিটা) বলা কবি যখন ‘আড়ালে’ থেকে সব দেখে শুনে বলে উঠেন:

আর শিল্প হবে না হবে না শিল্পের ভেজাল গান ক্রমাগত
পোশাক শোভন শালীনতা মিষ্টতা হারাবে
কবিতা যাবে ডাস্টবিনে ছাই গাদায়
শুধু ঠোঙা সাহিত্য ঠোঙা সাহিত্য
গল্পের কামিনী শুধু লম্পটের লালাসিক্ত হবে…
শুধু ভুল মানুষ নকল মানুষ প্ররোচনা লোকশিল্পের
নকল নকল দাঁত পরচুলা পোশাক মানুষ
প্রেমিকের ছদ্মবেশে মারাত্মক মাংসখাদক
সাধুর সাদা পায়জামা পানজাবিতে আসলে অসাধু তস্কর
চোর ভণ্ড প্রতারক (মানুষ সম্পর্কে)

তখন সত্যি-ই আমাদের সবকিছু নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করার প্রেরণা জোগায়। মহৎ শিল্পচর্চায় আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। কবির মমত্ববোধ সকল মানুষের প্রতি; সকলকে তিনি ভালোবাসেন। মাটি ও মানুষের প্রতি দায় এ-কাব্যের প্রতিটি কবিতার ভেতরে মূর্ত হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই আড়ালে। এ-আড়াল সরাতে পারলেই তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে আমাদের চর্মচোখে। আশির দশকে উপকূলীয়াঞ্চলে বয়ে যাওয়া জলোচ্ছ¡াস আর ঘূর্ণিঝড়ের করাল গ্রাসে মানুষের যে অসহায়ত্ব আর আহাজারি- তা একজন মহৎ শিল্পী হিসেবে হৃদয়ে ধারণ করেছেন তিনি:

উড়ির চরে চর ক্লার্কে চর জব্বারে…
ওদের তো সবি গেছে দু-একখানা ময়লা ছেঁড়া কাঁথা
এবং বালিশ তেল চিটচিটে
থাকলেও থাকতে পারে ওদের কাছে…
ওদের কি নাম ছিলো করিম রহিম শ্যাম যদু
আনোয়ারা শেফালী গোলাপী
বাতাসে প্রাসাদ গড়ার অভ্যাস
ওদের কি আছে? (ওরা)

এ গ্রন্থে স্থান পাওয়া ‘রাজার আদেশ’ পদ্যটিতে হুকুমদাতা রাজার আদেশ পাত্রমিত্রপারিষদ সবাই শিরোধার্য করে নেয়। রাতে আঁধার দূর করবার জন্য বাতি জ¦ালানো হয়- এ শাশ্বত সত্যটিও কারও মুখে উচ্চারিত হতে দেখে রাজা প্রমাদ গুনেন; দিনের বেলাতে বাতি জ¦ালাতে আদেশ জারি করেন। সত্যকে ঢেকে রেখে দিনে বাতি জ¦ালানোর এ হুকুমের মধ্য দিয়ে রাজার খামখেয়ালীপনার প্রকাশ ঘটেছে মনে করার কোনো কারণ নেই। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসকেরা মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতাকে আড়ালে রেখে- সত্যকে গোপন রেখে, মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করবার যে হুকুম জারি করে মূলত তার প্রকাশ ঘটেছে। সামরিক শাসকদের মতো সকাল বিকাল নিত্যনতুন হুকুম জারি করেন রাজা:

গর্জে উঠে রাজা মশাই
খোলেন এবার মুখটা-
‘সবাইকে এই হুকুম জানাও
চারদিকেতে ঢ্যাঁরা পিটাও
বাজিয়ে বলো তূর্য-
দিনে এখন জ¦লবে বাতি
থাকনা যতই সূর্য।।’

ষাটের অন্যতম প্রধান কবি ওমর আলী ঢাকা ছেড়ে নিজ জেলা শহরে অনেকটা নিভৃতে জীবনযাপন করেছেন; ছিল সাংসারিক টানাপড়েন। তবু এক মুহূর্তের জন্যও কাব্যপ্রচেষ্টা থেকে দূরে সরে যাননি-মগ্নসাধকের মতো কাব্যসাধনাতেই কেটেছে তার জীবন। লেখালেখি-ই ছিল তার আরাধনা-লিখেছেনও প্রচুর। শেষের দিকে এসে গাঁটের পয়সায় গ্রন্থ প্রকাশ করে আর্থিকভাবে হয়েছেন অনেকটা নিঃস্ব। ষাটের অন্য কবিদের মতো ওমর আলীর কবিতা বিষয়ভাবনায় বিচিত্রগামী নয়। জাতীয় ও বৈশ্বিক নানা ঘটনাবলির অভিঘাত যেভাবে অন্য কবিদের বিলোড়িত করেছে-কবিতায যা মূর্ত হয়েছে-ভাঙাচোরা চলেছে, ওমর আলীর কবিতায় তা তেমন উচ্চকিত হয়নি। হতে পারে মফস্বলে অবস্থানের কারণে বা যোগাযোগের অভাবে ঢাকাকেন্দ্রিক এই উত্তাপের আঁচ তেমনভাবে তার গায়ে লাগেনি। কিংবা বলা যায় তিনি একান্তই মগ্ন থাকতে চেয়েছেন পল্লীর নিসর্গমায়া আর কৃষ্ণকালো পল্লীবালার মমতার বাঁধনে।
ফলে তার কবিতায় প্রেম ও নিসর্গপ্রীতি প্রধান উপজীব্য হয়ে উঠেছে। প্রকৃতি ও নারীর সৌন্দর্য নান্দনিক কাব্যকৃৎকৌশলে ধৃত হয়েছে ওমর আলীর কবিতায়। অনেকটা নিজস্ব আঙ্গিক, লোকজ শব্দের নিপুণ ব্যবহার আর বৈঠকী ঢঙে-বিস্তৃর্ণ খোলামাঠে চড়ে বেড়ানো গোপালের মতো শ্যামল শ্যামল রূপকল্পে নির্মিত ওমর আলীর এ কবিতা পাঠকমননে একধরনের কুহক সৃষ্টি করে। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে মুখোমুখি দাঁড় করায় মহাসত্যের এক দার্শনিক জিজ্ঞাসায়; যেখানে মানুষ-ই হয়ে উঠে শেষ পর্যন্ত মহাসত্য। ফলে রোমান্টিক প্রেমের কবি হিসেবে চিহ্নিত করবার প্রয়াস পেলেও তাকে কলাকৈবল্যবাদী বলা যায় না সচেতনভাবেই। তিনি যে শুধুমাত্র সৌন্দর্যচেতনাজাত শিল্পী নন; মানুষের জন্যও রয়েছে তার অপার শিল্পভাবনা, অন্যান্য কাব্যের মতো ‘যে তুমি আড়ালে’ পাঠের মাধ্যমেও তা উপলব্ধি করা সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়