এ মাসের ১৫ দিনে ডেঙ্গু রোগী ছাড়ালো ৩ হাজার

আগের সংবাদ

ভস্মীভূত হিন্দুপল্লীজুড়ে আতঙ্ক : মূল হোতাসহ ৪৬ জন গ্রেপ্তার, থানায় দুই মামলার প্রস্তুতি, প্রতিবাদে রংপুরে বিক্ষোভ > সাম্প্রদায়িক হামলা

পরের সংবাদ

‘প্লাস্টিক শিল্পে অপার সম্ভাবনা’ : ভোরের কাগজকে বিপিজিএমএ সভাপতি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্লাস্টিক একটি ব্যাপক সম্ভাবনাময় শিল্প খাত। শুধু বাংলাদেশে নয়, উন্নত ও উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত সব পর্যায়ের রাষ্ট্রে প্লাস্টিকের বিকল্প নেই। যে কারণে প্লাস্টিক পণ্যের রয়েছে বিশ্বব্যাপী এক বিশাল বাজার। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ বাজারের পরিধি। নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্যসামগ্রী যুক্ত হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিপিজিএমএ) সভাপতি সামিম আহমেদ। ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি প্লাস্টিক খাতের সম্ভাবনা ও সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মরিয়ম সেঁজুতি-
প্লাস্টিক খাতে করোনাকালে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, কোভিড-১৯ এর আঘাতে ২০২০ সালের প্রথমার্ধে ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৩ মাস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। যার প্রভাব পড়ে উৎপাদন ও সরবরাহে। রপ্তানি কমে যায়। এখনো করোনা মহামারির কারণে ব্যবসা আগের মতো চালু হয়নি। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা করোনা ভাইরাস মহামারির (কোভিড-১৯) ফলে দেশের বেশির ভাগ মানুষের আয় কমেছে। নতুন করে বেকার হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। আর কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তবে এ সময় সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, আর্থিক প্যাকেজ দেশকে সচল রাখতে ভূমিকা রেখেছে।
এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান এ ব্যবসায়ী নেতা। তবে এসএমই খাত বিশেষ করে প্লাস্টিক খাতের উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের এ সুবিধা নিতে পারেনি। অথচ করোনা মোকাবিলায় প্লাস্টিক সেক্টর নিরলসভাবে কাজ করেছে। ফেস মাস্কস, ফেস সাইলডস, গুগলস, হ্যান্ড গøাভস, স্যানিটাইজার, পিপিই, জীবাণুনাশক ওষুধের বোতল ইত্যাদি বিভিন্ন ওষুধের প্যাকেজিংয়ের জন্য ব্যাপকভাবে দরকার হয়। এ সেক্টরের শিল্পগুলো দিন-রাত উৎপাদন করে সরকারের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখছে। বর্তমানে প্লাস্টিক সেক্টর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে কাজ করছে।
সামিম আহমেদ বলেন, প্রথম দিকে যখন করোনা মহামারি শুরু হয় তখন এসব পণ্য সম্পর্কে আমাদের খুব বেশি ধারণা ছিল না। পরে মেডিকেল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট তৈরিতে আমরা রাত-দিন পরিশ্রম করেছি। সরকারের মেডিকেল সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। অন্যদিকে করোনাকালীন সময়ে বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। হিসাব করলে দেখা যাবে, প্রায় ৮০ শতাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে কিছু কারখানা চালু হলেও তা খুবই সামান্য। রপ্তানিতেও এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গার্মেন্টসের রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় এক্সেসরিজ সাপ্লাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে সাফার করেছি আমরা। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খেলনা শিল্প।
সামিম আহমেদ আরো বলেন, এরপরও Ÿাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্প নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বলা বাহুল্য, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এই সেক্টর রপ্তানিতে বিশাল অবদান রাখছে। দেশের রপ্তানি ক্ষেত্রে অবদান রাখছে এমন হাতেগোনা কয়েকটি সেক্টরের মধ্যে প্লাস্টিক অন্যতম। প্লাস্টিকের অগ্রযাত্রার এ ধারা অব্যাহত থাকলে এবং সরকারি পর্যায় থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্লাস্টিক সেক্টর আগামীতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
দেশে বছরে ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পণ্য বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানিতে বড় সুযোগ দেখছে প্লাস্টিক খাত। দেশে অভ্যন্তরে ২০ শতাংশ ও রপ্তানিতে ২৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির বড় স্বপ্ন দেখছেন উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্লাস্টিক পণ্যের আওতায় রয়েছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের প্যাকেট, ইনজেকশন সিরিঞ্জ, রক্ত সংগ্রহের ব্যাগ, তৈরি পোশাক শিল্পের হ্যাঙারসহ প্যাকেট, ক্রোকারিজ, ঘরের দরজা, জানালা, স্যানিটারি, ইলেকট্রিক দ্রব্যাদি, কম্পিউটার, টেলিফোন সেটসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা। আর বিশাল এ বাজারের চাহিদা পূরণে এগিয়ে চলছে দেশের প্লাস্টিক খাত। বর্তমানে দেশীয় বাজারে ৮০ শতাংশের বেশি জোগান দেয়ার পাশাপাশি রপ্তানিও হাজার কোটি টাকার বেশি।
বিপিজিএমএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের বৈশ্বিক বাজার ৫৭০ বিলিয়ন ডলার। এ বাজারে বাংলাদেশের অংশ মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ। গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের মতে ২০২৫ সালে প্লাস্টিক পণ্যের বৈশ্বিক বাজারের আকার হবে ৭২১ বিলিয়ন ডলার। এ বাজারের এক শতাংশ বাংলাদেশের দখলে আসলেও ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি রপ্তানি সম্ভব।
অভ্যন্তরীণভাবে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য (ওভেন খাতসহ) উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এ খাত সরকারের কোষাগারে প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে। প্লাস্টিকের তৈরি প্রচ্ছন্ন রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা এবং সরাসরি রপ্তানির পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার ওপরে। রপ্তানির এই হার প্রতিদিনই বাড়ছে এবং বৈদেশিক বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে রপ্তানিতে দেশের প্লাস্টিক শিল্প খাতের অবস্থান ১২তম। দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজারের ওপর প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। এই খাতের ওপর প্রায় ১২ লাখের উপরে মানুষ নির্ভরশীল। অন্যদিকে প্লাস্টিকের মূল্য সংযোজনের হার ৫০ থেকে ৭১ শতাংশ।
লক্ষ্যে পৌঁছাতে কি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে জানতে চাইলে সামিম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক শিল্পনগরী স্থাপন অত্র সেক্টরের ব্যবসায়ীদের প্রাণের দাবি এবং দাবিটি বাস্তবায়নের জন্য তারা তৎপর রয়েছে। প্লাস্টিক শিল্পনগরী স্থাপনের লক্ষ্যে বিসিক ও বিপিজিএমইএ একযোগে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিসিক প্লাস্টিক শিল্প এস্টেটের জন্য প্রস্তাব তৈরি করেছে। প্রস্তাবটি সরকারের সদয় বিবেচনাধীন রয়েছে। প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে প্লাস্টিক শিল্প বিকাশের পথ আরো সুগম হবে।
প্রায় ৫০০ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের তালিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্লাস্টিক সেক্টর একটি সম্ভাবনাময় খাত হওয়া সত্ত্বেও এ সেক্টরের জন্য কোন টেস্টিং ল্যাবরেটরি বা টেকনোলজি সেন্টার নেই। দেশে-বিদেশে বাজার ধরে রাখতে চাইলে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা বিশেষ প্রয়োজন। আর এর জন্য দরকার টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও টেকনোলজি সেন্টার। টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও টেকনোলজি সেন্টার হলে দেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিসহ আন্তর্জাতিকমানের প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। প্লাস্টিক শিল্প খাতের প্রতিনিধিত্বকারী এসোসিয়েশন বিপিজিএমইএ সরকারের সহযোগিতায় টেকনোলজি সেন্টার স্থাপনের কাজ অব্যাহত রেখেছে।
এ ব্যবসায়ী নেতা আক্ষেপ করে বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে প্লাস্টিক শিল্প খাত সরকারি ইনসেনটিভ থেকে বঞ্চিত দেশের অন্যান্য শিল্প সেক্টর সরকারের সব ধরনের আর্থিক প্রণোদনা, সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকলেও প্লাস্টিক সেক্টর ওই তালিকায় নেই। বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে অন্যান্য দেশ ক্যাশ ইনসেনটিভসহ প্যাকেজ সুবিধা দিচ্ছে কিন্তু প্লাস্টিক সেক্টর সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাই এ খাতে ২০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ দাবি জানান ব্যবসায়ী এ নেতা। তার মতে, আরো চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইউপি (ইউটিলাইজেশন পারমিশন) ইসু্যুর দায়িত, বিপিজিএমইএর বাধ্যতামূলক সদস্যপদ নিয়ে জটিলতা, মূল্য সংযোজন হার ৩০ শতাংশ, স্থানীয় শিল্পের শুল্কহার সর্বনিম্ন নির্ধারণ, উচ্চ ব্যাংক রেট।
এছাড়া লোডশেডিং, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শিল্পোৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বিশেষ করে প্লাস্টিক সেক্টরে বিদ্যুৎ সমস্যা প্রকট, যা উৎপাদনে ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এতে রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। প্লাস্টিকের উৎপাদনের মূল হলো কাঁচামাল এবং ইলেকট্রিসিটি। সুতরাং অত্র সেক্টরে অব্যাহত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং কোনো কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ করার পূর্বে নোটিস দিয়ে তা বন্ধ করা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, পরিবেশ লাইসেন্স গ্রহণ কিংবা নবায়ন পর্যায়ে হয়রানি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা একান্ত জরুরি। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে যে বিষয়টির দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা দরকার তা হচ্ছে পণ্যের মূল্য। সাধারণত বাংলাদেশি প্লাস্টিক পণ্যগুলো চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে থাকে। মূলত পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচ অন্য দেশের তুলনায় বেশি হওয়ায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি প্লাস্টিক পণ্যের মূল্য প্রায় ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়