এ মাসের ১৫ দিনে ডেঙ্গু রোগী ছাড়ালো ৩ হাজার

আগের সংবাদ

ভস্মীভূত হিন্দুপল্লীজুড়ে আতঙ্ক : মূল হোতাসহ ৪৬ জন গ্রেপ্তার, থানায় দুই মামলার প্রস্তুতি, প্রতিবাদে রংপুরে বিক্ষোভ > সাম্প্রদায়িক হামলা

পরের সংবাদ

কৃষিতে ওয়াসিমের দিন বদলের গল্প

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ প্রামাণিকের ছেলে ওয়াসিম আকরাম। এসএসসি পাস করার পর পাবনা পলিটেকনিক্যালে ভর্তি হলেও লেখাপড়ায় এগোতে পারেননি ওয়াসিম। বাবার অনুপ্রেরণায় সবজির চারা উৎপাদনে বীজতলা তৈরির উদ্যোগ নেন। সাত বছর আগে ২০১৬ সালে স্বল্প পরিসরে নেয়া উদ্যোগ এখন মুনাফার বীজতলায় পরিণত হয়েছে।
এ বীজতলায় নানা জাতের সবজি আর ফলের চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন করে ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছেন ওয়াসিম আকরাম নামে এক যুবক। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই সবজির চারা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এই যুবক।
গত রবিবার সকালে ছিলিমপুরে ওয়াসিমের দৃষ্টিনন্দন বীজতলা সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, দেড় বিঘা করে দুটি স্থানে মোট তিন বিঘা জমিতে ৫০ ফুট লম্বা করে ১১০টি বেড তৈরি করা রয়েছে। বেডের ওপর বাঁশের বাতা দিয়ে কাভারি ভাঁজ করে পুঁতে দেয়া হয়েছে। একেকটি বেডে ভিন্ন ভিন্ন সবজির বীজ বপনের পর চারা জন্মেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসিম ভোরের কাগজকে বলেন, বৈশাখ থেকে পৌষ (মে-ডিসেম্বর) সবজির চারা উৎপাদনের সময়। এ সময়ের মধ্যে বীজতলায় সাতবার বীজ বপন করে চারা উৎপন্ন করা হয়। অর্থাৎ বীজ বপন করার এক মাসে সেটা চারায় রূপান্তর হয়। এরপর নিয়মিত পরিচর্যা, চারা গাছের চাহিদানুসারে সময়মতো সার, কীটনাশক ও সেচ দিতে হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে রোপণ করা বীজ চারায় পরিণত হয়। রোদ, বৃষ্টি, শিশির থেকে চারাকে রক্ষার জন্য প্রত্যেকটি বেডের ওপর পলিথিনের ছাউনি দিয়ে রাখা হয়, যা প্রয়োজনমতো খোলা যায়। ওয়াসিম জানান, জাপান থেকে আমদানি করা বীজ থেকে তিনি তার বীজতলায় চারা উৎপাদন করেন। হাইব্রিড এসব বিভিন্ন চারার মধ্যে ফুল কপির জাত রয়েছে হোয়াইট মার্বেল-৩৩, হোয়াইট এক্সসেল, হোয়াইট মুনস্টার, সুনু হোয়াইট, সুনু বক্স, ডাউন ১৭৫, বাঁধা কপি লরেনস ওটাস কুইন, টমেটো জাতের মধ্যে রয়েছে মিন্টু সুপার, বিউটি ফুল, বিজলী-১১, ভিএন-৬৪২ ও দিপালী। বেগুন জাতের মধ্যে দেশি লাল বেগুন, হাইব্রিড রয়েছে বোরখা, লুনা ও লুভা জাতের বেগুন। মরিচের চারাও এই বীজতলায় উৎপাদন করা হয়। দেশি কাঁচামরিচ ছাড়াও বিজলী-১১, বিজলী প্লাস জাতের মরিচের চারা উৎপাদন করা হয়। দেশি পেঁপে ছাড়াও রেড লেডি, গ্রিন লেডি, সট লেডি হাইব্রিড পেঁপের চারা উৎপাদন করা হয়। এছাড়া গেøারি করলা, লাউয়ের মধ্যে শাহীন শাহ, নয়ন, গ্রিন নাইট, হাজারি লাউসহ দেশি লাউয়ের চারা, কিং শসা এবং লেটুস পাতার চারা উৎপাদন করা হয় এই বীজতলায়। সবজি চারা ছাড়াও ওয়াসিম আম, কদবেল, মালটা, বেদানা, নারিকেল, জলপাই ও আমড়ার চারা উৎপাদন করে থাকেন তার বীজতলায়। বীজ থেকে চারা উৎপাদনের জন্য যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে খরচ বাদে মৌসুমে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
ওয়াসিম আকরাম বলেন, উৎপাদিত সবজির চারা ঈশ্বরদীসহ কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ভেড়ামারা, গোলাপনগর, সিরাজগঞ্জ, চাটমোহর, পাবনা, সুজানগর, সাঁথিয়া, বনপাড়া, নগরবাড়ী, চাটমোহর, আটঘরিয়া, দেবোত্তর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, নাটোর, লালপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার কৃষকরা প্রতিদিন সবজির চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
মেসার্স সততা নার্সারি এন্ড কৃষি ফার্মের চারা গুণগত ও মানসম্পন্ন হওয়ায় এসব জেলা-উপজেলার কৃষকরা এসে চারা কিনে যাচ্ছেন। বীজতলা করে দেশের সবজির চাহিদা পূরণে অবদান রাখায় ওয়াসিম অত্যন্ত খুশি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, এ উপজেলার কৃষকরা অত্যন্ত পরিশ্রমী। এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ ও লাভজনক ব্যবসা। এতে কৃষকদের চারা উৎপাদনের আলাদা কোনো সময় নষ্ট করতে হয় না। ওয়াসিম আকরাম কৃষক ব্যবসার তালিকায় একটি নতুন ব্যবসার পথ উন্মোচন করেছেন। নিজের জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন করে অন্যত্র বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। যে কোনো ফসল বা চারা উৎপাদনে সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমাদের কৃষি অফিস সব সময় সজাগ রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়