সারাদেশে পূজামণ্ডপে হামলা : চাঁদপুরে সংঘর্ষে নিহত ৩

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টার্গেট কী? প্রথম ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ-সাকিবের মাঠে নামা নিয়ে দোটানা

পরের সংবাদ

চক্রাকারে ঘুরছে ভবদহবাসীর দুঃখ : জলাবদ্ধতা নিরসনের উপায় কী?

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম রফিকুল আলম, নওয়াপাড়া (যশোর) থেকে : অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এই ভবদহবাসীর দুঃখের প্রহর যেন কোনোভাবেই শেষ হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুম এলেই শুরু হয় জলাবদ্ধতা। বছর যেতে না যেতেই ফের গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভোররাতে ৩ ঘণ্টা এবং ঐদিন থেকে পরের দিন সোমবার সকাল ৭টা পর্যন্ত মোট ১৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার অন্তত ৬০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
বৃষ্টির পানিতে এসব গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িঘর, শিক্ষা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। পানির তলে চলে গেছে হাজার হাজার মাছের ঘের। তলিয়েছে শত শত বিঘা আমন ধান। প্রতিদিন বিলের পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন ভবদহ অঞ্চলের পানিবন্দি প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। অনেক পরিবার ঘরের মধ্যে মাচা করে সেখানে থাকছেন। শৌচাগার এবং নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশন এবং পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
জানা গেছে, ২০১২ সালে পূর্ববিল খুকশিয়ায় জোয়ারাধার টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড গত নয় বছরে প্রস্তাবিত বিল কপালিয়ায় জোয়ারাধার চালু করতে পারেনি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত নদী খনন করার নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কমপক্ষে ২৩টি প্রকল্প নেয়া হলেও ওই অঞ্চলের মুক্তেশ্বরী, হরি, শ্রী ও টেকা নদীতে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি জমে নদীর বুক উঁচু হয়ে যাওয়ায় ২০১৬ ও ২০২০ সালের মতো এবার আবার ব্যাপক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ভবদহ ২১ ভেন্টের ওপর ১৪টি এবং ৯ ভেন্টের ওপর ৬টি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে নদী থেকে পানি সেচে পাইপের মাধ্যমে অপর পাশে নদীতে ফেলা হচ্ছে। এর সঙ্গে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এস্ক্যাভেটর দিয়ে সøুইসগেটের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম পাশে ৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার শ্রী ও টেকা নদীতে পাইলট চ্যানেল কাটার কাজ চলছে।
সম্প্রতি এলাকার ১০ থেকে ১২টি গ্রাম ঘুরে মানুষের চরম দুর্ভোগ দেখা গেছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ইতোমধ্যে গ্রামগুলোর কয়েক হাজার বাড়িতে পানি উঠেছে। অনেক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও পানির নিচে চলে গেছে। রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় এলাকার অনেক জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। প্রতিদিন এক-দুই ইঞ্চি করে পানি বাড়ছে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, বর্তমানে নদীর অবস্থা ভয়াবহ। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে টাকা এনে নদী কাটা হচ্ছে। আর ১০টি পাম্প দিয়ে সেচ দিচ্ছে। এভাবে টাকা লোপাট করা হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অতীতের মতো আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জনগণের দাবি মেনে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ না করলে এই এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে না।
ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল বলেন, ভবদহ সংলগ্ন বিল কপালিয়ায় ২০১২ সালে টিআরএম প্রকল্প পাস হয়। টিআরএম করার ক্ষেত্রে এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের বিরোধিতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরে টিআরএম করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করা হয়েছে। উজানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও পানিবন্দি অসহায় ভবদহবাসীর ভাগ্য ফিরিয়ে আনতে এই মুহূর্তে টিআরএমের বিকল্প কিছুই নেই। এছাড়া আমডাঙ্গা খাল ১০১ ফুট প্রশস্ত করতে হবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, এ মুহূর্তে পানি সরানোর জন্য পাম্প সেট (সেচযন্ত্র) দিয়ে পানি সেচে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সাড়ে ৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দের পর এ কার্যক্রম শুরু করা হবে। এছাড়া ভবদহ ও তৎসংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও টেকসই পানি ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রায় ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়