সারাদেশে পূজামণ্ডপে হামলা : চাঁদপুরে সংঘর্ষে নিহত ৩

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টার্গেট কী? প্রথম ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ-সাকিবের মাঠে নামা নিয়ে দোটানা

পরের সংবাদ

আপনার অনন্ত যাত্রা শান্তিময় হোক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে শিশু সংগঠনের বিপুল বিশাল কর্মযজ্ঞ আমরা দেখেছি। মুকুল ফৌজ, খেলাঘর, কচি-কাঁচার মেলা, চাঁদের হাট ইত্যাদি নামের শিশুসংগঠনগুলো সক্রিয় ছিল মহল্লায় মহল্লায়। শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশে সংগঠনগুলো কী অসাধারণ ভূমিকাই না রেখেছে! সমাজে তখনো দুর্জনেরা ছিল। কিন্তু সংখ্যায় ছিল তারা অপ্রতুল। এখন শিশু সংগঠন বলতে গেলে নেই। সমাজে দুর্জনের সংখ্যা এখন বেশুমার।
রফিকুল হক দাদুভাই ছিলেন চাদের হাটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
সত্তরের দশকে রীতিমতো একটা জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল দৈনিক পূর্বদেশের ছোটদের পাতা চাঁদের হাট এবং আরো কয়েকটা ছোটদের পাতাকে ঘিরে।
কেমন ছিল তখন ছোটদের পাতাগুলো? উত্তর এক কথায় অসাধারণ। কারণ ছোটদের পাতা প্রকাশিত হতো দেশের বিখ্যাত সব শিশু-সাহিত্যিকদের সম্পাদনায়। অতীতে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের মতো ছড়াকার সংগঠক সম্পাদকের হাত দিয়ে প্রকাশিত হতো ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসর। এখন সেই পাতার দায়িত্বে আছে অতি তরুণ একজন, খুব সামান্য পকেটমানির বিনিময়েই যাকে খাটানো যায়। হাবীবুর রহমানের মতো শক্তিমান শিশু-সাহিত্যিকের হাত দিয়ে প্রকাশিত হতো সংবাদের খেলাঘর। এখন সেই পাতা দেখে হয়তো সংগঠনটির অনামা কোনো কর্মী, রুটিন দায়িত্ব হিসেবে। চাঁদের হাট বের হতো রফিকুল হক দাদুভাইয়ের হাত দিয়ে। সাত ভাই চম্পার সম্পাদক ছিলেন মেধাবী ও আধুনিক সম্পাদক আফলাতুন। তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও ক্যারিশমায় তখনকার প্রতিটি সপ্তাহই ছিল বর্ণাঢ্য শিশুসাহিত্য সপ্তাহ। পাতাটি শাদাকালো ছিল কিন্তু ওতে রঙের কোনো অভাব ছিল না। এখন প্রতিটি পাতাই রঙিন কিন্তু রঙের বড় অভাব।
ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, পূর্বদেশ, সংবাদ-এর ছোটদের পাতাকে ঘিরে যে লেখকগোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল, বিকশিত হয়েছিল, তারাই তো আজ দীপ্যমান, আমাদের শিল্পসাহিত্য সংস্কৃতির অঙ্গনে।
দেশের কিশোর-তরুণদের বিশাল একটি অংশ ‘চাঁদের হাট’ নামের ব্যানারে এসে সমবেত হয়েছিল দাদুভাইয়ের নেতৃত্বে। অনেক তরুণ লেখকের জীবনের প্রথম লেখাটি পরম মমতায় ছেপে দিয়ে তিনি লেখক হিসেবে তাদের বিকাশের পথটিকে কুসুমাস্তীর্ণ করে দিয়েছেন। যারা এখন বিখ্যাত লেখকের মর্যাদায় আসীন।
আমার সঙ্গে দাদুভাইয়ের সম্পর্কটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। একদা আমি তার ছায়াসঙ্গী ছিলাম। কত স্মৃতি তাকে ঘিরে! দাদুভাইয়ের সঙ্গে আমার অপরূপ এক সখ্য গড়ে উঠেছিল। আমি ছিলাম তার ছড়ার মুগ্ধ পাঠক। আমার সেই শুরুর সময়টায় ছড়াকার হিসেবে রফিকুল হক ছিলেন প্রতিষ্ঠা ও খ্যাতির একেবারে শীর্ষে।
ছড়াকার হিসেবে কী যে তুখোড় ছিলেন রফিকুল হক! কৈশোরে পড়া তার বেশ কিছু ছড়া এখনো আমার স্মৃতিতে অক্ষয় অমøান। ১৯৭০ সালে ভয়াবহ জলোচ্ছ¡াসে লাখ লাখ মানুষের সলিলসমাধি ঘটেছিল তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে। জলস্রোতে ভেসে যাওয়া উপকূলবর্তী মানুষকে নিয়ে কীর্তিমান ছড়াকার রফিকুল হক তখন রচনা করেছিলেন অনবদ্য একটি ছড়া। ছড়াটি ছাপা হয়েছিল পূর্বদেশের পাতায়। অসামান্য সেই ছড়াটা স্মৃতি থেকে উদ্ধার করছি- ছেলে ঘুমুলো বুড়ো ঘুমুলো/ভোলা দ্বীপের চরে/জেগে থাকা মানুষগুলো/মাতম শুধু করে।/ঘুমো বাছা ঘুমো রে/সাগর দিলো চুমো রে/খিদে ফুরুলো জ্বালা জুড়ুলো কান্না কেনো ছিঃ/বাংলাদেশের মানুষ বুকে পাষাণ বেঁধেছি!’ কলকাতার আকাশবাণী থেকে একটি প্রতিবেদনে প্রখ্যাত সংবাদ পাঠক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে এই ছড়াটি তখন প্রচারিত হয়েছিল।
রফিকুল হক দাদুভাই তার প্রথম বই ‘বর্গী এলো দেশে’র ভূমিকায় আমার সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছিলেন- আমি তার ‘ছায়াসঙ্গী’। আমি ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ কিংবা ‘কিশোর বাংলা’ কোনো পত্রিকাতেই দাদুভাইয়ের সঙ্গে কাজ করিনি। চাঁদের হাটেও সার্বক্ষণিক ছিলাম না। তাহলে আমি তার ছায়াসঙ্গী হলাম কী করে! অথচ দাদুভাই ভুল লেখেননি। আমি তার ছায়াসঙ্গীই ছিলাম একদা। একটা সময় ছিল যখন আমার সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত্রির সিংহভাগই আমি কাটাতাম দাদুভাইয়ের সঙ্গে। সময়টা আশির দশকের সূচনাকাল। কিশোর বাংলা নামের পত্রিকাটি তখন অবজারভার ভবন থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। যদিও কিশোর বাংলা যাত্রা শুরু করেছিল দৈনিক বাংলা ভবন থেকে। দৈনিক বাংলা ভবনে কিশোর বাংলা পত্রিকাটির একজন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন দাদুভাই। সে সময় তথ্যমন্ত্রী আকবর কবিরের সহযোগিতায় দাদুভাই পত্রিকাটাকে নিয়ে গেলেন অবজারভার হাউসে এবং সেখানে তিনি প্রথমে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং অচিরেই সম্পাদক হিসেবে আবির্ভূত হলেন। দাদুভাইয়ের সম্পাদনায় কিশোর বাংলা পত্রিকাটি অল্পদিনেই হয়ে উঠেছিল বিপুলভাবে পাঠকপ্রিয়। আমাদের শিশুসাহিত্যে কিশোর বাংলার একটা উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল বিশেষ করে মেধাবী তরুণ লেখকদের জন্য কিশোর বাংলা ছিল একটা পরম মমতা আর ভালোবাসার প্ল্যাটফর্ম।
ব্যক্তিজীবনে খুবই অলস প্রকৃতির মানুষ ছিলেন দাদুভাই। স্টেশনে লাস্ট ট্রেন মিস করা লোকটির মতো দাদুভাই সবখানেই লেট। দাদুভাইয়ের আলস্য নিয়ে বলতে গেলে কাহিনী শেষ হবে না। এমনই আলস্য যে, কোনো বইই ছিল না তার বহুদিন। বই হবে কীভাবে? প্রকাশিত লেখাগুলো সংগ্রহে থাকলে তো! মনে আছে, দাদুভাইয়ের একটা ছড়ার বই প্রকাশিত হওয়া দরকার, এই তাগিদ থেকে এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার বেশ কিছু ছড়া আমি-ই যোগাড় করে দিয়েছিলাম তাকে। কারণ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তার কোনো ছড়ার কপি বা পেপার কাটিং কিছুই ছিল না দাদুভাইয়ের সংগ্রহে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাংলাদেশ পরিষদ লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন পত্রিকা অফিসের লাইব্রেরিতে হানা দিয়ে দিয়ে ছড়াগুলো আমি টুকে নিয়েছিলাম নোটপ্যাডে। তারপর সেই ছড়াগুলো অফসেট পেপারে নিজ হাতে লিখে লিখে তৈরি করেছিলাম তার প্রথম ছড়ার বই- ‘বর্গী এলো দেশে’র পাণ্ডলিপি। প্রথম বইটি তিনি নিজের খরচেই প্রকাশ করেছিলেন। ছাপা হয়েছিল বাংলা একাডেমি প্রেসে। প্রকাশক হিসেবে ছিল কৃষ্টি প্রকাশনীর নাম। সেই নামে কোনো প্রকাশনীই ছিল না আসলে। ওটা আমরা নিজেরাই বানিয়ে নিয়েছিলাম। পাণ্ডুলিপি তৈরি থেকে কম্পোজ-প্রæফ, হাশেম খানের কাছ থেকে প্রচ্ছদ ও ইলাস্ট্রেশন বের করে আনা থেকে ব্লক নির্মাণ এবং ছাপা ও বাঁধাই- সব কিছুতেই আমি এমনভাবে যুক্ত ছিলাম যে, বাংলা একাডেমি প্রেসের অনেক কর্মীই মনে করেছিল ওটা আমারই বই।
রফিকুল হকের দ্বিতীয় ছড়ার বই ‘পান্তে ভাতে ঘি’র পাণ্ডুলিপিও একইভাবে আমার তৈরি করে দেয়া। আমার হাতে লেখা স্ক্রিপ্টই জমা দেয়া হয়ে হয়েছিল শিশু একাডেমিতে। এক দুপুরে আমি আর দাদুভাই দুজনে পাণ্ডুলিপিটা পৌঁছে দিয়েছিলাম শিশু একাডেমির তৎকালীন পরিচালক জোবেদা খানমের হাতে।

দুই.
ভালোবাসার মেয়েটিকে বিয়ে করার অপরাধে পরিবার থেকে আমার বিতাড়িত হওয়ার কাহিনীটা এখানে না বললেই নয়। যাত্রাবাড়ীতে একটি পরিবারের সঙ্গে সাবলেট ভিত্তিতে ভাড়া থাকি তখন। হাতে থাকা টাকা প্রায় শেষ। একটা চাকরির খুব প্রয়োজন। রফিকুল হক দাদুভাইকে ধরলাম। দাদুভাই তখন সাপ্তাহিক কিশোর বাংলার সম্পাদক। আমাকে কথা দিলেন- একটা কিছু ব্যবস্থা তিনি করবেনই করবেন। রোজ যাই মতিঝিল অবজারভার ভবনে, কিশোর বাংলা অফিসে। দাদুভাইয়ের অলিখিত এসিস্ট্যান্ট আমি। তার যে কোনো কাজই করে দিই হাসিমুখে। কিশোর বাংলার সম্পাদকীয় লেখা, প্রীতি নিও-র ডিকটেশন নেয়া, বিশেষ কোনো দোকান থেকে বিশেষ কিছু কিনে আনা, এমনকি তার বাড়িতে বাচ্চাদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের বেলুন ফোলানো, রঙিন কাগজ কেটে দেয়ালে ‘শুভ জন্মদিন’ লেখা ডিজাইন তৈরি- হেনো কাজ নেই যেটায় আমি হাত লাগাই না। কারণ দাদুভাই আমাকে কথা দিয়েছেন- একটা চাকরি তিনি আমাকে দেবেন এবং সেটা কিশোর বাংলায়। সেই আশায় আমি তার সঙ্গে লেপ্টে থাকি। যেটা বলেন করে দিই। লিখে দিই। কিশোর বাংলার বহু সম্পাদকীয় ছিল আমার লেখা।
আমার সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাত্রির বড় একটা সময় ব্যয় হয় দাদুভাইয়ের পেছনে। কিশোর বাংলায় আমার প্রাত্যহিক অবস্থান এতটাই প্রবল ছিল যে, প্রেসের কর্মচারী এবং পেস্টিং সেকশনের লোকজন আমাকে কিশোর বাংলার স্টাফ হিসেবেই বিবেচনা করত। আমার অর্থ সংকটের কথা দাদুভাই জানেন। দাদুভাই আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন- একটা কিছু হবেই এবং সেটা খুব শিগগিরই। দিন-সপ্তাহ-মাস পেরোয়। চাকরি আমি পাই না। পাওয়ার মধ্যে যেটা পাই সেটা হলো দুপুরে বাদশা হোটেলে কাবাব-রুটির একটা লাঞ্চ। দাদুভাই অলস প্রকৃতির বলে দুপুরের লাঞ্চ বিকেলে সারেন। আমার বেশি খিদে পেলে আমি নিজের উদ্যোগে খেয়ে আসি। খিদে কম থাকলে অপেক্ষা করি। তারপর দাদুভাইয়ের সঙ্গে ফ্রি একটা লাঞ্চ সেরে নিই।
অফিস ছুটির পর সন্ধ্যায় ঢাকার রাস্তায় এলোমেলো হেঁটে বেড়াই আমি আর দাদুভাই। ছড়া নিয়ে শিশুসাহিত্য নিয়ে ছোটদের পত্রিকা নিয়ে কত কথাই না আমরা বলতাম সেই সময়টায়! আমার প্রতি তার মমতাটা ছিল অসীম। আমার হাতটা ধরে তিনি হাঁটছেন আর আমাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন- আমরা একসঙ্গে অনেক কাজ করব। মাস গেলে মোটামুটি সম্মানজনক একটা মাইনে পাব আমি। নতুন বিয়ে করে এবং বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে যে অকুল সমুদ্রে আমি পড়েছি সেটা থেকে শিগগিরই তিনি আমাকে উদ্ধার করে দেবেন। কিন্তু দাদুভাই দেন না উদ্ধার করে। আমি ভাসতে থাকি অভাবের সাগরে। (শেষ পর্যন্ত কোনো চাকরি আমি পাইনি কিশোর বাংলায়। সে প্রসঙ্গ থাক।)

তিন.
মানুষের জীবন খুব বিচিত্র। রফিকুল হক দাদুভাই নামের যে মানুষটাকে ঘিরে একদা চাঁদের হাট নামের সংগঠনের বর্ণালি ছাতাটার নিচে তার যে স্নেহভাজন প্রীতিভাজনরা বিকশিত হয়েছিলেন সেই তাদেরই উদ্যোগে আয়োজিত চাঁদের হাটের প্রাক্তনদের মিলনমেলায় (চ্যানেল আই ভবনে ২০২০ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত) রফিকুল হক দাদুভাই ছিলেন অনুপস্থিত। দাদুভাই বলেছেন, আয়োজকরা নাকি দাদুভাইকে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে আমন্ত্রণ জানাননি। আক্ষেপ করে তিনি বলেছিলেন, এই ঘটনাটা তার জীবনে পাওয়া সবচে বড় কষ্টের এবং বেদনার স্মৃতি হয়ে থাকবে।

চার.
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রবীণ ছড়াশিল্পী ছিলেন রফিকুল হক। তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৫ বছর। কিন্তু বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি তারুণ্যকে উদযাপন করেছেন বিপুলভাবে। হাস্যোজ্জ্বল কর্মচঞ্চল মানুষটা করোনাকেও জয় করেছিলেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে ভালোই কাটছিল তার দিন।
কিন্তু করোনাজয়ী রফিকুল হক দাদুভাইকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে ফের ভর্তি হতে হয়েছে হাসপাতালে এবং হাসপাতালে যাওয়ার পর জানা গেছে দ্বিতীয়বার তিনি করোনা আক্রান্ত।
এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণে ইসলামিয়া হাসপাতালের বেডে কেটেছে তার দিবস রজনী। মুখে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে নিতে হয়েছে শ্বাস-প্রশ্বাস। অতঃপর আক্রান্ত হয়েছেন স্ট্রোকে। সেই কারণে তিনি হাঁটাচলাও করতে পারছিলেন না। হাসপাতাল থেকে সেই যাত্রা বাড়ি ফিরলেও সচল সজীব প্রাণবন্ত দাদুভাই নামের হাস্যোজ্জ্বল মানুষটার ঠাঁই হয়েছিল হুইল চেয়ারে। অতঃপর বিছানায়। নিঃশ্বাসে সহযোগিতার জন্য বাড়িতেই মজুত রাখতে হতো অক্সিজেন সিলিন্ডার।
দিনে দিনে তরতাজা মানুষটা শুকিয়ে একেবারে মিশে যাচ্ছিলেন বিছানার সঙ্গে। কানাডা থেকে টেলিফোনে কথা বলতাম তার সঙ্গে। তিনি ভিডিও কল করে আমাকে দেখাতেন তার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। পরিস্থিতিটা বেকায়দা হলেও মানুষটা হাস্যোজ্জ্বল থাকতেন। আর কত কথা যে বলতেন! শেষদিকে কথাও বলতে পারতেন না। বিছানায় শুয়ে শুধু তাকিয়ে থাকতেন ফ্যাল ফ্যাল করে। শেষ জীবনটা খুবই কষ্টের ছিল তার। আমেরিকায় অভিবাসী পুত্রটি তাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছিল। বাধ্য হয়ে দাদুভাইয়ের স্ত্রী তাকে নিয়ে উঠেছিলেন একটা ভাড়া বাড়িতে।
সেই দাদুভাই চলে গেলেন। বাংলা ছড়ার জীবন্ত কিংবদন্তি রফিকুল হক নামের দীপ্যমান সূর্যটা অস্তমিত হলো গত ১০ অক্টোবর।
বিদায় রফিকুল হক। আপনার অনন্ত যাত্রা শান্তিময় হোক প্রিয় দাদুভাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়