করোনা পরিস্থিতি : শনাক্ত কমলেও প্রাণহানি কিছুটা বেড়েছে

আগের সংবাদ

আতঙ্কিত চট্টগ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা : বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর

পরের সংবাদ

গেরিলা তৎপরতা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবির্ভূত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কী ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। স¤প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।
মে মাস থেকে গেরিলাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রথম দিকে মাসে ৫ হাজার করে, সে হার জুলাই মাসে ২০ হাজার। এর মধ্যে আনুমানিক ১৫ হাজার গেরিলাকে দেশের অভ্যন্তরে পাঠানো হয়েছে। এদের কাছ থেকে যে ফল আশা করা হয়েছিল, তা উশুল হয়নি। বস্তুত এদের কর্মসম্পাদনা প্রথম দিকে ছিল হতাশাব্যঞ্জক। গেরিলাদের মধ্যে কেউ কেউ লুটতরাজ ও অন্যান্য সমাজবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত, কেউ কেউ অলসভাবে দিন গুনছে, কেউবা টেলিফোনের তার কাটার মতো তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও সুসমন্বিত তৎপরতা, সংগঠন এবং নেতৃত্বের অভাবে এই গেরিলাদের কার্যকারিতা ছিল নগণ্য। গেরিলা নির্বাচন সঠিক না হওয়া এবং সঠিক লোককে নির্বাচিত এবং প্রশিক্ষিত না করাও গেরিলাদের দুর্বল কর্মসম্পাদনার একটি কারণ। বাছাবাছি না করেই গেরিলাদের নির্বাচন করার কারণে কেবলমাত্র রোজগারের প্রয়োজনে, সমাজবিরোধী তৎপরতা দমনে অস্ত্রের প্রয়োজনে এবং আত্মরক্ষার তাগিদেও বহু যুবক গেরিলা বাহিনীতে ঢুকে পড়ে। যদিও গেরিলারাই যুদ্ধের প্রাণশক্তি- যারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আঘাত হানতে সক্ষম।
ওসমানীর প্ল্যান- বাস্তব অবস্থা :
বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানী যখন দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধ পরিকল্পনার চূড়ান্ত রূপ দিতে ব্যস্ত তখন পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার সর্বশেষ চূড়ান্ত যুদ্ধ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন পর্ব সমাপ্ত করে বসে আছেন।
জুলাই হতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ১৯৭১ সনের ৮ অক্টোবর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজী অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় বলে দিলেন, ‘যুদ্ধ আসন্ন এবং সেটা হবে ভারতের মাটিতে’। ১৯৭১ সনের ১১ আগস্ট পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট

জেনারেল ইয়াহিয়া খান অত্যন্ত পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বললেন, ‘দুটি দেশ (ভারত ও পাকিস্তান) যুদ্ধের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, ‘দেশ রক্ষার জন্য তিনি যুদ্ধ করবেন।’ বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তান দখলদার বাহিনী যুদ্ধ প্রস্তুতি সমাপ্ত করে সীমান্ত বরাবর ঘাঁটি তৈরি করে বসে।
ভারতীয় সমর পরিকল্পনাবিদরা অত্যন্ত সতর্কভাবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাদের যুদ্ধ পরিকল্পনা সমাপ্ত করে চূড়ান্ত আঘাত হানার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি সমাপ্তির পথে এগুতে থাকে।
বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি যখন তার যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে যোগাযোগ করে বেড়াচ্ছিলেন তখন বাংলাদেশের বর্ডার উত্তপ্ত, সশস্ত্র চিরায়ত সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠেছে, বলতে গেলে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে অক্টোবরের ২য় সপ্তাহ হতে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ওই সময় সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা ও কার্যক্রম পরিচালনা করে।
১৪ অক্টোবর পাকিস্তান বাহিনী ভারতের কৃষ্ণনগরের বিপরীতে তাদের সৈন্য সমাবেশ করে। স্কুল-কলেজগুলো সৈন্য দিয়ে ভর্তি করে ফেলা হয়। রাজশাহীর বাকচিতা, যশোরের সীমান্তে ব্যাপক সৈন্য মোতায়েন করা হয়। ওই একই দিনে আসামের করিমগঞ্জে ব্যাপকভাবে কামান শেলিং করা হয়। ১৫ অক্টোবর পশ্চিম দিনাজপুরের হিলি ও রাধিকাপুর, ১৭ অক্টোবর শিকারপুর, গারো হিল এলাকা, ১৮ অক্টোবর আগরতলার বেলুনিয়া, ২০ অক্টোবর কামালপুর, ২১ অক্টোবর হিলি, ২৩ অক্টোবর আগরতলা-সিমলা, ২৪ অক্টোবর আগরতলা, কামালপুর ও করিমগঞ্জ, ২৫ অক্টোবর করিগঞ্জের তিলাইগঞ্জ, ২৭ অক্টোবর ধর্মনগর ও কামালপুর এলাকাগুলোতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী প্রচুর গোলাবর্ষণ করে।
৩০ অক্টোবর পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণে সব সীমান্ত এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ওই দিন ভারতীয় মুখপাত্র সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘চরম উসকানির মুখেও ভারতীয় বাহিনী সব ধরনের যড়ঃ পযধংব উপেক্ষা করে চলছেন।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে
‘ইন্দিরার নির্দেশ : ভারতীয় ওয়্যার প্ল্যান’
‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া সংগ্রহ করা যাবে নযড়ৎবৎশধমড়লঢ়ৎড়শধংযধহ.পড়স থেকেও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়