তিতাস গ্যাস কর্মচারী ইউনিয়ন : পূর্ণ প্যানেলে জয়ী কাজিম-আয়েজ পরিষদ

আগের সংবাদ

যুদ্ধাপরাধ বিচারে স্থবিরতা ; বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এগিয়ে নিতে সরকারের আগ্রহ নিয়ে সংশয়! ট্রাইব্যুনালেও জনবল সংকট

পরের সংবাদ

সম্পদ জব্দের আদেশ : দুর্নীতির মামলায় বাবরের কারাদণ্ড

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের অভিযোগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের পৃথক দুই ধারা মিলে মোট আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার উক্ত আইনের ২৬ (২) ধারায় বাবরের তিন বছর এবং ২৭ (১) ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম। এই দুই ধারার সাজা একত্রে চলার নির্দেশ হওয়ায় ৫ বছর সাজা ভোগ করবেন তিনি। তবে ২০০৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিচারকাজ চলাকালীন প্রায় ১৩ বছর আটক থাকায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাবরের আইনজীবীরা। ১৩ বছর আটক থাকায় এ মামলায় আসামিকে আর সাজাভোগ করতে হবে না বলে জানান তারা।
১৩ বছর ধরে ঝুলে থাকা এ মামলাটির রায় ঘোষণায় বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে দুদক দুইটি অভিযোগ আনে। তন্মধ্যে দুদক আসামির নালিশি বাড়ি নির্মাণে ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকার তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহিতভাবে অর্জন করার অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়। আসামি বাবর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একজন প্রাক্তন আইনপ্রণেতা ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়েও সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণভাবে সম্পদ অর্জন করায় তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর যথাক্রমে ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তি প্রদান যুক্তিযুক্ত। তবে আসামির অস্ত্র মামলায় ১৭ বছর কারাদণ্ড এবং অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচনাক্রমে প্রথম ধারায় তিন বছর এবং দ্বিতীয় ধারায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। এ ছাড়া রায়ে আসামিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো তিন মাস বিনাশ্রম কারাগারে থাকার কথাও বলা হয়।
অন্যদিকে, আসামির গুলশান শাখার প্রাইম ব্যাংকের হিসাবে জমাকৃত ১০ লাখ ইউএস ডলার অর্থাৎ ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকার তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জনের দাবি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় দুদক। তাই এই অভিযোগ থেকে আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হলো। তবে রায়ে আসামির জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জিত ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকাসহ প্রাইম ব্যাংকে জমাকৃত ১০ লাখ ইউএস ডলার বা ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দেন আদালত। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ওই টাকা আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হলে জেলা কালেক্টর জরিমানার অর্থের জন্য আসামির সম্পত্তি ক্রোক ও বিক্রয়ের মাধ্যমে জমা করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, রায় ঘোষণার পর অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে ২৬ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের যে অভিযোগে সাজা দেয়া হয়েছে সেই টাকা তিনি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করেননি। তদন্ত কর্মকর্তা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকেও এ বিষয়ে পরিষ্কার করেননি যে, তিনি টাকা পরিশোধ করেছেন। সুতরাং যে টাকা তিনি দেননি সে টাকায় তথ্য গোপন হতে পারে না। সেই টাকা আদালত বাজেয়াপ্ত করেছেন। কিন্তু যে টাকা তার নেই সেই টাকা কিভাবে বাজেয়াপ্ত করেন। তাই আমরা মনে করি, এটি একটি অসম্পূর্ণ ও ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।
তিনি বলেন, আরেকটি অভিযোগ আসামির প্রাইম ব্যাংক হিসাবে সিঙ্গাপুর থেকে ১০ লাখ আমেরিকান ডলার আসে। কিন্তু এই টাকা কোথা থেকে আসলো তার কোনো সাক্ষী বা প্রমাণ উপস্থাপন না করায় এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। তবে ২০০৭ সাল থেকে আসামি প্রায় ১৩ বছর জেলে। কারাদণ্ডের পাঁচ বছর বাদ গেলেও সাজার প্রায় দুইগুণ বেশি সাজা পেলেন তিনি। তাই এ বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
এর আগে গত ৪ অক্টোবর মামলাটির সব যুক্তিতর্ক শেষ হলে বিচারক রায় ঘোষণার জন্য গতকালকের দিনটি ধার্য করেন। জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৮ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যৌথবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর ২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে রমনা থানায় বাবরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুদকের চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। পরে মামলার একই বছরের ১৬ জুলাই দুদক আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে বাবরকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অভিযুক্ত করা হয়। সে বছরের ১২ আগস্ট আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। পরে বিভিন্ন সময়ে মামলাটির সাত সাক্ষীর সবার সাক্ষ্য গ্রহণ, আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়