তিতাস গ্যাস কর্মচারী ইউনিয়ন : পূর্ণ প্যানেলে জয়ী কাজিম-আয়েজ পরিষদ

আগের সংবাদ

যুদ্ধাপরাধ বিচারে স্থবিরতা ; বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এগিয়ে নিতে সরকারের আগ্রহ নিয়ে সংশয়! ট্রাইব্যুনালেও জনবল সংকট

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : করোনা সংক্রমণের হার অনেকটা কমে আসায় চট্টগ্রামে এবার মহাসমারোহে উদযাপিত হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গত সোমবার ষষ্ঠী পূজা, দেবীর অধিবাস ও আবাহনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ছিল ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল। এদিকে মণ্ডপে মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতি না থাকলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব-পুলিশ সদস্যদের সড়কে টহল দিতে দেখা যায়।
করোনা পরিস্থিতির কারণে নগরীর অধিকাংশ পূজামণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও কিছু কিছু মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না। এ বছর চট্টগ্রাম মহানগরসহ জেলায় মোট ২ হাজার ২৪০টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার আওতাধীন ১৫ উপজেলায় সর্বজনীন ১ হাজার ৫৫৩টি এবং পারিবারিক ৪১১টি মণ্ডপসহ মোট ১ হাজার ৯৬৪টি এবং চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত, ঘটপূজাসহ ২৭৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা পরিষদের নেতাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের দফায় দফায় সভা অনুষ্ঠিত হয়। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে মণ্ডপের নিরাপত্তা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। দর্শনার্থী ও জনসাধারণের সুষ্ঠু ও নির্বিঘেœ চলাচল করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গত বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকটা অনাড়ম্বরভাবেই উদযাপিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। এবার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আড়ম্বরতা ফিরে এসেছে। চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপগুলো জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো হলেও পূজা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়নি কোনো ধরনের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় বিশেষ করে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে পূজামণ্ডপগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। এবার ষষ্ঠী থেকেই মণ্ডপগুলোয় মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে এক দশক ধরে বন্দরনগরীতে যেখানে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে পূজা প্যান্ডেলের থিম সাজানো হতো, এবার তেমন কোনো আয়োজন নেই। আজ বুধবার মহাঅষ্টমীতে নগরীর পাথরঘাটার শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। শ্যামানন্দ দাস (শ্যামল সাধু) মোহন্ত মহারাজের পৌরহিত্যে হিন্দু শাস্ত্রমতে সাধারণত এক থেকে ষোলো বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করার কথা রয়েছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে এখন পূজার ধুম। গতকাল মহাসপ্তমীতে রংবেরংয়ের পোশাক পরে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ঘুরে বেড়ান মণ্ডপে মণ্ডপে। নগরীর হাজারীলেন, টেরিবাজার, জামালখান, নালাপড়া ও আগ্রাবাদের মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র। তবে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে মাস্ক পরে মণ্ডপ প্রবেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে সকাল থেকেই শুরু হয় সপ্তমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা। নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার বাসিন্দা স্মরণিকা ঘোষ টিনা ভোরের কাগজকে বলেন, গত বছর করোনা সংক্রমণ বেশি থাকায় অনাড়ম্বরভাবে পূজা করতে হয়েছে। এবার সংক্রমণ কিছুটা কম। তাই মণ্ডপে মন্ডপে জাঁকজমকভাবে আয়োজন করা হয়েছে দুর্গাপূজা। দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা, করোনা নামক মহামারির কবল থেকে মানুষকে রক্ষা করার। হিংসা-বিদ্বেষ, ভেদাভেদ ভুলে মানুষে মানুষে মৈত্রীর বন্ধন তৈরি করে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার। সব সম্প্রদায়িকতা নির্মূল হোক- এটাই প্রার্থনা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, এবার চট্টগ্রাম নগরের ২৭৬টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা সেগুলো মেনেই পূজার আয়োজন করেছি। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে আমরা কঠোর থাকব। শান্তিপূর্ণভাবে, সাত্ত্বিকতা বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে মণ্ডপগুলোতে পূজার আয়োজন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পূজায় ডিজে পরিহার করা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান-বাজনা, মেলা, নাটক, সমাবেশ, আরতি প্রতিযোগিতা ও শোভাযাত্রা পরিহার করা, পূজামণ্ডপে আগত সবার মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা, মণ্ডপে প্রবেশমুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান-পানি রাখা, মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা প্রবেশ ও প্রস্থানের ব্যবস্থা রাখা, আতশবাজি বা পটকা ফুটানো পরিহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে গত বছরের মতো এবারো উৎসব পরিহার করে মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতায় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা আয়োজনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজির সঙ্গে পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়