২৩ অক্টোবর ভোট গ্রহণ : বিএফইউজের নির্বাচনে আর বাধা নেই

আগের সংবাদ

বাঙালির মাতৃপূজা দেশমাতৃকার পূজা থেকে আলাদা নয়

পরের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর শোক : না ফেরার দেশে গুণী নাট্যজন ইনামুল হক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মঞ্চে ও পর্দায় আর দ্যুতি ছড়াবেন না তিনি। নাট্যাঙ্গনের চেনা মুখ বুয়েটের সাবেক শিক্ষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নাট্যব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হক চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শোকের সাগরে ভাসালেন অগণিত সহকর্মী, সুহৃদ ও দর্শকদের। গতকাল সোমবার দুপুর ৩টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বেইলি রোডের বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। মৃত্যুকালে স্ত্রী অভিনেত্রী ও নির্দেশক লাকী ইনাম ও দুই মেয়ে হৃদি হক ও পৈতি হকসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও স্বজন রেখে গেছেন। তার মৃত্যু সংবাদ শুনে বেইলি রোডের বাসভবনে ছুটে যান সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষরা। ড. ইনামুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাট্যাঙ্গনে ইনামুল হকের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আরো শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি। এক শোকবার্তায় তারা বলেন, ড. ইনামুল হকের মৃত্যুতে দেশের সাংষ্কৃতিক অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। সন্ধ্যায় সেগুনবাগিচার কোয়ান্টাম মেথডে গোসল শেষে মরদেহ নেয়া হয় বেইলি রোডের বাসভবনে। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সহকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ শিল্পকলা একাডেমিতে আনা হয়। সেখানে সর্বস্তরের

নাট্যকর্মীরা তাকে ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত করেন।
এরপর মরদেহ রাখা হয় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের হিমাগারে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মরদেহ নেয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলী পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বুয়েট খেলার মাঠে জানাজা শেষে মিপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফনের বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে। তবে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দাফনের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
১৯৪৩ সালের ২৯ মে তৎকালীন নোয়াখালী ও বর্তমান ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ড. ইনামুল হক। তার পিতার নাম ওবায়দুল হক ও মাতার নাম রাজিয়া খাতুন। ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ড. ইনামুল হক। ১৯৭০ সালে সহকারী অধ্যাপক, ১৯৭৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৮৭ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। আর বুয়েট থেকেই কর্মজীবনের অবসর নেন। তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, অভিনেতা ও লেখক।
১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে বিভিন্ন আন্দোলনমুখী নাটকে অংশগ্রহণ করেন ইনামুল হক। ১৯৭০ সালে সামরিক শাসনকে উপেক্ষা করে তৎকালীন অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাকে করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পথনাটক করেন।
নটর ডেম কলেজে পড়ার সময় ড. ইনামুল হক প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন। ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তার প্রথম নাটক ‘ভাড়াটে চাই’। ১৯৬৮ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসে নাগরিক নাট্যস¤প্রদায়ের যাত্রা শুরু হয়। এই দলের হয়ে প্রথম তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’ নাটকে। এরপর ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘নূরুলদীনের সারাজীবন’সহ আরো বহু নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৯৫ সালে ড. ইনামুল হক নাগরিক নাট্যস¤প্রদায় থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন নাগরিক নাট্যাঙ্গন। এই দলের হয়ে ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘সরমা’সহ আরো বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন ইনামুল হক। ২০০০ সালে ড. ইনামুল হক প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামা’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। তার অভিনীত প্রথম টিভি নাটক মুস্তাফা মনোয়ার পরিচালিত ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’। ইতোমধ্যে তার ১৮টি নাটক বিভিন্ন নাট্যপত্রে, বিশেষ ম্যাগাজিনে এবং বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ইনামুল হকের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- নির্জন সৈকতে, গৃহবাসী, মুক্তিযুদ্ধ নাটকসমগ্র, স্ট্রিন্ডবার্গের দুটো নাটক, মহাকালের ঘোড় সওয়ার, বাংলা আমার বাংলা ইত্যাদি। নাটকে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে তিনি একুশে পদক-২০১৭ সালে স্বাধীনতা পদক অর্জন করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়