২৩ অক্টোবর ভোট গ্রহণ : বিএফইউজের নির্বাচনে আর বাধা নেই

আগের সংবাদ

বাঙালির মাতৃপূজা দেশমাতৃকার পূজা থেকে আলাদা নয়

পরের সংবাদ

খেলাপি উদ্ধারে নতুন উদ্যোগ : ভোরের কাগজকে আতাউর রহমান প্রধান

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : করোনায় দেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতির মধ্যেও ‘ব্যাংক মাতা’ হিসেবে খ্যাত সোনালী ব্যাংক গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করেছে। গ্রাহকদের দিচ্ছে আধুনিক সব সেবা। পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসে মাত্র ২ মিনিটেই অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে। মাত্র ৫ সেকেন্ড প্রবাসীরা তাদের প্রিয়জনদের কাছে টাকা পাঠাতে পারছেন। পাশাপাশি সেবায় বৈচিত্র্য আনতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের উদ্যোগে চালু হয়েছে রেমিট্যান্স সেবা ‘ব্লেজ’, যেখানে মাত্র ৫ সেকেন্ড প্রবাসীরা তাদের কাছে প্রিয়জনদের টাকা পাঠাতে পারবেন। খেলাপি ঋণ আদায়েও চলছে নতুন নতুন উদ্যোগ।
ব্যাংকটি বর্তমানে সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়নে সব সরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সোনালী ব্যাংক; যা দেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আতাউর রহমান প্রধানের নেতৃত্বে অর্জন করেছে। তবে অর্জনের সব কৃতিত্ব ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিতে চান তিনি।
ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারের নির্দেশে এ অতিমারি করোনার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি সচল রাখার লক্ষ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। তারা এ সময় সম্মুখযোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি এ অর্জন ধরে রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সবাইকে কাজ করার জন্য বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে শীর্ষে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন মো. আতাউর রহমান প্রধান। মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারিতে যখন লণ্ডভণ্ড সারা বিশ্ব, তখন সোনালী ব্যাংকও কিছুটা থমকে গিয়েছিল। কিন্তু তা বেশি দিন স্থির হয়নি। সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে শীর্ষে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে দায়িত্ব নেয়া ব্যাংকটির এমডি তার শ্রম আর মেধা দিয়ে ব্যাংকটিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
এমডি বলেন, বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৮ শতাংশ বা ১০ হাজার কোটি টাকা। টাকা আদায়ে এরই মধ্যে জোর দিয়েছি। যারা খেলাপি হয়েছেন, আমাদের লক্ষ্য যেভাবেই হোক টাকা আদায় করা। আমরা ব্যক্তিগতভাবে তাদের সঙ্গে বসছি। বোর্ড চেষ্টা করে যাচ্ছে। এছাড়া ডিএমডি হেডেড কমিটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। আদালতের মাধ্যমে যাতে টাকাগুলো আদায় করা যায়, সেই প্রচেষ্টাও রয়েছে।
আতাউর রহমান বলেন, টাকা আদায় করতে না পেরে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। দীর্ঘসূত্রতার কারণে অর্থঋণ আদালতে আমরা মামলা করেছিলাম। তবে মামলার সংখ্যা অনুযায়ী আদালতের সংখ্যা বাড়েনি। আদালত বাড়লে মামলাগুলো আরো তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হতে পারত।
হলমার্কের টাকা আদায়ের প্রক্রিয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আতাউর রহমান বলেন, হলমার্কের ১৩৭ একর জায়গা আমাদের কাছে মর্টগেজ রাখা আছে। এর মধ্যে কিছু জায়গা মর্টগেজ ছিল না, সেগুলো আমরা কোর্টের রায় নিয়ে এসেছি এবং যেগুলো চিহ্নিত ছিল না, সেগুলো একটা ডিজিটাল সার্ভে করে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেছি।
এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেই জমিগুলো চিহ্নিত করা হবে। পরবর্তী সময়ে এ জমিগুলো বিক্রি করা হোক বা যেভাবে হোক, সেখান থেকে অর্থ আনা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ ও চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের শর্তযুক্ত জামিনের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিয়েছে সরকার। আদালতের বাইরে গিয়ে বিষয়টির সুরাহা করার চেষ্টা চলছে। কোর্টের বাইরে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যদি শর্তসাপেক্ষে জামিন পায়, তবে হলমার্ক কর্তৃপক্ষ বাইরে এসে আমাদেরকে টাকা পরিশোধ করবে।
ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের ৩৭ বছরের মধ্যে আতাউর রহমান প্রধানের ৩৪ বছরই কেটেছে সোনালী ব্যাংকে। এর আগে কর্মসংস্থান ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালনের পর তিনি সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদে দায়িত্ব পালন করছেন। সোনালী ব্যাংকের ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার ডিপোজিট আছে। এ বছরের মধ্যে তা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এমডি বলেন, করোনার মধ্যেও আমাদের ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নানা ভাতা বিতরণের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয় আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে গতি থাকলে বরাবরের মতোই ব্যাংকের মুনাফা হবে। তাই শিল্প খাতকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উজ্জীবিত করে গ্রাহকসেবার মান বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা রাখা সম্ভব বলে মনে করেন এ ব্যাংকার। তিনি বলেন, ডিজিটাল গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার জন্য ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার দিকে আমরা জোর দিচ্ছি।
পাশাপাশি আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মান উন্নয়নেও কাজ করে যাচ্ছি আগামী বছর হবে প্রযুক্তিনির্ভর বছর। দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে সোনালী ব্যাংকের ১৮ হাজার ৪০৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংকে ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে ৩২ জন মারা গেছেন।
সোনালী ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন খাতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা হয়। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। এ ক্রান্তিকালেও সোনালী ব্যাংকের দেশব্যাপী ১ হাজার ২২৬টি এবং দেশের বাহিরে আরো ২টি শাখাসহ মোট ১ হাজার ২২৮ শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত বছর আমাদের ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছিল। চলতি বছর আমরা আশা করছি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা হবে।
তথ্য অনুযায়ী, করোনার মধ্যেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে সোনালী ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে ২০২০ সালে। ব্যাংকটি ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে ৪৬৫ কোটি টাকা। ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার দিকে আমরা জোর দিয়েছি।
এ ব্যাংকার বলেন, মহামারি করোনা আমাদের অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে দিয়েছে সত্য। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও আছে। এ সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা পাঁচ বছর এগিয়েছি। করোনার মধ্যেও প্রতি সপ্তাহে বোর্ড (পরিষদ) সভা হয়েছে। যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পরিষদ সভায় গৃহীত হয়েছে। মহামারি আমাদের পাঁচ বছরের প্ল্যানকে এক বছরে বাস্তবায়ন করতে শিখিয়েছে।
করোনার সময় বিকল্প পন্থায় তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ঘরে বসে হিসাব খোলার সুযোগ রেখেছি। এতে ১ লাখের বেশি হিসাব খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামগঞ্জে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে। আর এজন্য বড় অঙ্কের আমানত বেড়েছে। পাশাপাশি আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মান উন্নয়নেও কাজ করে যাচ্ছি।
ব্যাংকের আমানত বাড়ানোর বিষয়ে আতাউর রহমান বলেন, আমাদের যেভাবে ডিপোজিট বাড়ছে, তাতে আমরা মনে করি এ বছর দেড় লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি যাবে। আমানত দেড় লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি যাবে।
এ বছর যে প্ল্যানিং, সেই অনুযায়ী হয়তো আমরা এখনো টাইমলাইনের মধ্যে আছি, তবে আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হবেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়