করোনা আপডেট : মৃত্যু বেড়েছে শনাক্ত কমছে

আগের সংবাদ

নৌকা বেহাত, আছে বিদ্রোহীও

পরের সংবাদ

হারিয়ে যাচ্ছে পূজার আনন্দ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গ্রামে যখন বিল ছিল, পাশে তখন মধুমতী নদী ছিল। ঝাড়ে ঝাড়ে ডাহুক পাখি ছিল। বাড়ি বাড়ি ফুল বাগান ছিল। ফুল বাগানে মৌমাছি ছিল। গাছে টুনটুনি ছিল। তখন শরতে পূজার আনন্দ ছিল। পূজার আনন্দের উৎস ছিল আমার বাবা-মা। সেটা আমার স্কুল বয়স। পূজা এলেই মণ্ডপ দেখতে নিয়ে যেত বাবা-মা। তখন ভাবিনি পূজার আনন্দ নিয়েও হতাশ হতে পারি একসময়!
স্কুলে পড়ার সময় আমার এক বন্ধু ছিল। নাম মজিবর। পূজার ক’দিন ও আমাদের বাড়িতেই থাকত। বাবা-মা আর আমাদের সঙ্গে ও পূজা দেখতে যেত ওড়াকান্দি। যে ওড়াকান্দি কিছুদিন পূর্বে ঘুরে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আমরা বিজয় দশমীর মেলা দেখতাম রামদিয়ায়। কখনো কখনো বিজয়ার মেলা দেখতে যেতাম জালির পাড়। তখন আয়োজন থাকত ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। দূরের পথ, একদিন পূর্বেই আয়োজন হতো মাছের। আয়োজন করা হতো রান্না করার মানুষের। রাত ১২টায় আমরা নৌকায় উঠে সবাই ঘুমানোর আয়োজনে ব্যস্ত থাকতাম। জেগে থাকত নৌকার মাঝি এবং জেগে থাকত যে রান্না করবে সে। কারণ মাছ কাটতে হবে, ভাজতে হবে, রান্না করতে হবে। প্রায়ই আমরা সঙ্গে নিতাম সরপুঁটি মাছ, কৈ মাছ এবং শোল মাছ। মেলায় গিয়ে আমরা ক্রয় করতাম ইলিশ মাছ। সেসব মেলায় যেমন আনন্দ পেতাম, ঠিক তেমন আনন্দ পেতাম খাওয়া-দাওয়া করেও। এখন সবকিছু মানুষের আয়ত্তের মধ্যে, রিকশা-গাড়ি-বাস রয়েছে চলাচলের সুবিধার মধ্যে। তারপরও মানুষ মেলা দেখার খুব বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে না। বিষয়টি খুবই স্মরণীয় যে, সেসময় যারা আমরা একসঙ্গে মেলা দেখতে গিয়েছি, তাদের কেউ আর বেঁচে নেই। নিয়তির এই নির্মম পরিহাস সতত চলছে এবং পৃথিবীর সর্বশেষ সময় পর্যন্ত চলতেই থাকবে।
আমার প্রেক্ষাপট আরো ভিন্ন। আমি বিয়ে করেছি গোপালগঞ্জের বিখ্যাত চান্দার বিলের পাশে বেদ গ্রামে, যেখান থেকে জালির পাড় খুব কাছে। তারপরও দুর্গাপূজার মেলায় জালিরপাড় যেতে ইচ্ছে হয় না। সময়ের ক্রমবিবর্তনে এভাবেই হয়তো ইচ্ছেরও পরিবর্তন হয়।
আসুন জেনে নিই দুর্গাপূজার কিছু কথা। মায়ের পূজা বছরে দুবার অনুষ্ঠিত হয়। একবার পূজা হয় বসন্তকালে, যাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা। আর একবার পূজা অনুষ্ঠিত হয় শরৎকালে, যাকে বলা হয় শারদীয় দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গাপূজাই হিন্দু বাঙালি সত্তায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। দেবী দুর্গার পূজা শুরু হয় আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে। দুর্গাপূজার ইতিহাসে জানা যায়, কৃত্তিবাসের রামায়ণ অনুযায়ী রামচন্দ্র শরৎকালে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে সীতা উদ্ধার কল্পে রাবণকে ধ্বংস করতে চাইলেন। তবে শরৎকাল দেবদেবীর নিদ্রার কাল হওয়ায় রামচন্দ্র দেবী দুর্গাকে জাগাবার প্রচেষ্টা করেন। দেবীদূর্গার জগরণ করানোকে বলে বোধন। এরপর হয় তিথি অনুযায়ী অধিবাস, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজশাহীর তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রথম দুর্গাপূজা করেছিলেন। আরো জানা যায়, কংসনারায়ণ ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে প্রচুর অর্থ খরচ করে পূজা করেছিলেন, যেটি মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তবে রাজা কংসনারায়ণের পূজারও অনেক আগে দুর্গাপূজার প্রচলন ছিল। তার প্রমাণ পূর্বেকার অনেক ইতিহাসে পাওয়া যায়। এভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশে দেবী দুর্গার পূজা প্রচলন হয়েছে। এখন সারাবিশ্বে মহা আড়ম্বরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে দেবী দুর্গার পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সৃষ্টিকর্তা একজন, প্রতিটি ধর্মের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন সাধনার পথ অবলম্বন করে একজনেরই সাধনা করে থাকে, এ কথা অনস্বীকার্য। আসুন আমরা ধর্মীয় উৎসব পালন করি এবং সুশৃঙ্খলভাবে যার যার ধর্মের ক্রিয়া কাজ সম্পন্ন করে যাই। অন্যের ওপর অত্যাচার করা সবসময়ই পাপ, যেটি সব ধর্মেই স্বীকৃত।
য় পাফোস-৪৬

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়