করোনা আপডেট : মৃত্যু বেড়েছে শনাক্ত কমছে

আগের সংবাদ

নৌকা বেহাত, আছে বিদ্রোহীও

পরের সংবাদ

সুষ্ঠু ইউপি নির্বাচন করে মুখরক্ষার চেষ্টায় ইসি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের কর্মকাণ্ডে বিএনপি, বাম দলসহ নির্বাচন বিশ্লেষকদের সমালোচনার মুখে পড়েছে বরাবরই। বিএনপিসহ অনেক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এ কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশও নেয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে এ কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিন্তু মেয়াদের শেষের দিকে এসে ইসি সামনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে মুখরক্ষার চেষ্টা করছে।
বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি। তার আগে কমিশনের হাতে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, বেশ কিছু পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচন। আর সব শেষে কে এম নুরুল হুদা কমিশন তার কর্মকাণ্ড শেষ করতে চায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ইতোমধ্যে ৩৬৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। আগামী ২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ-৬ এর উপনির্বাচনসহ ১০ পৌরসভায় ভোট নেয়া হবে। এরপরই ১১ নভেম্বর দেশের ৮৪৮ ইউপিতে ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর (আগামীকাল) আরো হাজারখানেক ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে চলেছে ইসি। এরপরই অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে আরো ১ হাজার ইউপির তফসিল ঘোষণা করবে ইসি এবং সর্বশেষ ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হবে নভেম্বরের প্রথমে, যার ভোটগ্রহণ করা হবে ডিসেম্বরে বলে জানান অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষের আগে দেশের ৪ হাজার ৭০০ ইউপি নির্বাচনসহ বেশকিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে চায়। একই সঙ্গে যেসব জেলায় সব ইউপি নির্বাচন শেষ হবে সেসব জেলা পরিষদ নির্বাচনও সম্পন্ন করবে ইসি। এসব করতে ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে কে এম নুরুল হুদা কমিশনের কর্মকাণ্ড শেষ হবে বলে জানান এ অতিরিক্ত সচিব। তবে বর্তমান কমিশনের শেষ সময়ে এসব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইসির চেষ্টার কোনো ত্রæটি থাকবে না।
এ বিষয়ে ইসি সচিব হুমায়ূন কবীর খোন্দকার বলেন, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে সব ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে চাই। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও করা হবে। তবে এ

কমিশনের মেয়াদ বেশি দিন নেই, আগামী বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি কমিশন বিদায় নেবে। এসব নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না বা হয়নি বলে মন্তব্য করেছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বামপন্থি দলগুলো। তারা ইউপি নির্বাচনসহ বেশকিছু উপনির্বাচনও বয়কট করেছে।
এদিকে কে এম নুরুল হুদা কমিশনের সমালোচনা করেছেন দেশের নির্বাচন বিশ্লেষকরা। সুজন, টিআইবিসহ নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করে এমন অনেক সংগঠনও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করেছে বহুবার। সুজনের ব্যানারে দেশের ৫১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি কে এম নুরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ এ ইসির পদত্যাগের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনও করেন।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কে এম নুরুল হুদা কমিশনের প্রতি বেশকিছু দলের অভিযোগ আছে- এটা সত্য। তবে সব কমিশনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু বর্তমান কমিশন তার সাংবিধানিক শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার না করায় কিছুটা সমালোচনার মুখে পড়ে। কমিশনের হাতে এখন যেসব স্থানীয় সরকার নির্বাচন রয়েছে সেগুলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে শেষ বেলায় তাদের গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। কমিশন এ সুযোগটা আশা করি নেবে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়টি শুধু ইসির হাতে নির্ভর করে না- প্রার্থী, দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদেরও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে হবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেহেতু এ ইসির অধীনে আগের নির্বাচনগুলো অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। আস্থার সংকট ছিল। তাই শেষ সময়েও তারা ভোটার ও দলের আস্থার সংকটে ভুগবে বলে মনে হয়।
আরেক সাবেক কমিশনার ছহুল হুসাইন মনে করেন, কে এম নুরুল হুদ কমিশনের উচিত ছিল তাদের দেয়া সাংবিধানিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা। নির্বাচনের সময় আরো কঠোরভাবে কাজ করা। কিন্তু সেক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় শৈথিল্য দেখানোয় কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এ কমিশন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, বর্তমান নুরুল হুদা কমিশন একেবারেই ব্যর্থ একটি নির্বাচন কমিশন। তারা কোনো নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য করতে পারেনি। তাই চলমান ইউপি নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে বলে তিনি মনে করেন না। সুজন সম্পাদক আগামী কমিশন যাতে সব দল ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তার জন্য আইন প্রণয়নের দাবি জানান।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা তার কমিশনের অধীনে সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে দাবি করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, নির্বাচনে কিছু অতি উৎসাহী প্রার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নির্বাচনী কর্মকর্তার কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তবে এগুলো কমিশন কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তিনি মনে করেন, তার কমিশনের অধীনে সব নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সিইসি।
আরেক সিনিয়র কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, জাতীয় নির্বাচনসহ বেশকিছু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, ভোটারের আগ্রহ কম ছিল, যা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। তবে সম্প্রতি প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে দুজনের মৃত্যু ছাড়া নির্বাচনে ভোটের হার ভালো ছিল। আগামীতে যেসব নির্বাচন হবে, তা সুষ্ঠু হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, সব নির্বাচনই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করেছে কমিশন। কিন্তু কোনো কোনো সময় প্রার্থী, দল ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে সামনের ইউপি নির্বাচনসহ সব নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে সব ইউপির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এবারো দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়