করোনা আপডেট : মৃত্যু বেড়েছে শনাক্ত কমছে

আগের সংবাদ

নৌকা বেহাত, আছে বিদ্রোহীও

পরের সংবাদ

রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী : পারমাণবিক বিশ্বে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র ও মোস্তাক আহমেদ কিরণ, রূপপুর, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে : পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে পারমাণবিক বিশ্বের কাতারে নাম লেখাল বাংলাদেশ। স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে গেল আরো একধাপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রিঅ্যাক্টর স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, পরমাণু শক্তির অংশ হিসেবে বিশ্বে একটা স্থান করে নিতে পারলাম আমরা, আর সেটা শান্তির জন্য। এছাড়া দেশে আরো একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সরকার জায়গা খুঁজছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে রুশ সহায়তায়। দেশটির রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ, এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লোশকিন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান রূপপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল হলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এর ভেতরেই ইউরেনিয়াম থেকে শক্তি উৎপাদন হবে, যা কাজে লাগিয়ে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। এই রিঅ্যাক্টরকে বলা হয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘হৃৎপিণ্ড’। গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়া থেকে এই রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল খুলনার মোংলা বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে তা নিয়ে যাওয়া হয় রূপপুরে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এসোসিয়েশনের (আইএইএ) নীতিমালা ও মান অনুসরণ করে সেটি এখন স্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, রিঅ্যাক্টর স্থাপনের পর প্রকল্পের কাজ শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। প্রথম ইউনিটের ৫০ শতাংশ কাজ এ বছরই শেষ হবে।
সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে রূপপুরের এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে। সব ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুরে পরমাণু চুল্লির জন্য প্রথম ইউনিটের কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণের উদ্বোধন করেছিলেন, যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণ পর্বের কাজ। পরের বছর জুলাই মাসে দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের জন্য কংক্রিট ঢালাই কাজ উদ্বোধন করা হয়।
রূপপুরের প্রকল্প এলাকায় এক হাজার ৬২ একর জমির ওপর চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিক, প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ সেখানে কাজ করছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর

রোসাটমের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন। দুই ইউনিট মিলিয়ে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যয়ের এই প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংবলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। ব্যবহৃত তেজষ্ক্রিয় জ্বালানি সরিয়ে নিতেও রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
আরো একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁজছে সরকার- প্রধানমন্ত্রী : রিঅ্যাক্টর স্থাপন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান আমলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হলেও পাকিস্তান সরকার তা করেনি। সব টাকা তারা পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সবকিছু থেমে যায়। তিনি বলেন, উন্নত বাংলাদেশ গঠন করাই ছিল বঙ্গবন্ধু মূল লক্ষ্য। রাশিয়া সফরকালে সে দেশের রাষ্ট্রপতি ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে আমার এই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। অর্থ সহায়তার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। চুক্তি হয়েছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও দূষিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা- সব কাজ রাশিয়া করবে। কেউ কেউ বুঝে, না বুঝে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে অনেক কথা বলে ও লিখে। ভবিষ্যতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নির্মাণকাজ শুরু করেছি। ২০২৩ সালের মধ্যে সরবরাহ লাইন নির্মাণকাজ শেষ হবে।
প্রধান মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরো একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা পারমাণবিক বিশ্বে নিজেদের দেশের নাম লেখাতে পেরেছি- অবশ্য আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে এই পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার করব।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবার কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপির শাসনামলে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়নি। তারা বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের কথা বলে লুটপাট ও দুর্নীতি করেছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, রিয়েক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কার্যক্রম শুরুর এই দিনটি আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন, তা আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে। তার প্রেরণা আমাদের শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রুশ পরমাণু শক্তি করপোরেশনের মহাপরিচালক এলেক্সি লিখাচেভ জানিয়েছেন, বিজ্ঞান নিয়ে বহু বছর ধরে রাশিয়া যে উৎকর্ষতা অর্জন করেছে, সেই অভিজ্ঞতাই রূপপুরে কাজে লাগানো হচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা নেয়ার মধ্য দিয়ে রূপপুর প্রকল্পকে পুরোপুরি নিরাপদ করা হয়েছে। বাংলাদেশের এই প্রকল্পটি রাশিয়া সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে নির্মাণ করছে। ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ভিভিইআর এক হাজার ২০০ মডেল ব্যবহার করা হয়েছে- যা এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে পারমাণবিক স্থাপনার সর্বাধুনিক যন্ত্র। এছাড়া দূষিত পদার্থ ধারণ করার জন্য ক্যারিকেচার স্থাপন করা হয়েছে। এ ধরনের একটি বড় প্রকল্পে রাশিয়াকে কাজ করার সুযোগ দেয়ায় আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য অনেক আনন্দ ও গর্বের। রিয়েক্টর প্রেসার ভেসেল চূড়ান্তভাবে স্থাপনের জন্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়