করোনা আপডেট : মৃত্যু বেড়েছে শনাক্ত কমছে

আগের সংবাদ

নৌকা বেহাত, আছে বিদ্রোহীও

পরের সংবাদ

কটিয়াদী : পূজা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : কটিয়াদীতে এবারো বসেছে দেশের সবচেয়ে বড় ঢাকঢোলের হাট। এ হাট বসেছে দুর্গাপূজা উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা সদরের পুরোনো বাজার প্রেস ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা অফিসের সঙ্গে। প্রতিবছরের মতো এবারো শনি ও রবিবার ২ দিনব্যাপী ৫শ বছরের এই ঐতিহ্যবাহী বিরাট ঢাকের হাট শেষ হয়েছে। গত বছর করোনার কারণে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূজামণ্ডপে শুধু একটি ঢাক, ঢোল ও একটি কাঁসি ব্যবহার করা হয়েছিল। এ বছর কোনো বাধা-নিষেধ নেই। ঢাকঢোলের আমদানি বেড়েছে।
জনশ্রæতিতে আছে ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় সামন্তরাজা নবরঙ্গ রায়ই সর্বপ্রথম তার রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজার প্রাসাদ। আজো রাজার আমলে খনন করা কোটামন দিঘিটির মনোরম দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। পূজা উপলক্ষে রাজপ্রাসাদ থেকে সুদূর বিক্রমপুর (মুন্সীগঞ্জ) পরগনার বিভিন্ন স্থানে বার্তা পাঠানো হয়। ঢাকঢোল, বাঁশিসহ বাদ্যযন্ত্রীদের আগমনের জন্য সে সময় নৌপথ ব্যবহার করা হতো। বাদ্যযন্ত্রীরা কটিয়াদী-মঠখোলো সড়কের পাশে পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামের স্থানে পূজার দুই দিন আগে এসে পৌঁছাতেন। পরবর্তী সময়ে পার্শ্ববর্তী মসুয়া গ্রামে বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরিকিশোর রায় চৌধুরীর বাড়িতে মহাধুমধামে পূজা শুরু হয়। সেই সঙ্গে চলে বিভিন্ন পূজার বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। দিন দিন পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন জমিদারদের মধ্যে ঢাকের হাটের স্থান নির্ধারণ নিয়ে দ্ব›দ্ব শুরু হয়। অবশেষে যাত্রাঘাট থেকে স্থান পরিবর্তিত হয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরবর্তী আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী কটিয়াদী পুরোনো বাজারে প্রেস ক্লাবের সামনে বিরাট ঢাকের হাট গড়ে ওঠে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক দুর্গাপূজার আয়োজক এই হাট থেকে পূজার দু-একদিন আগে ভাড়ায় বায়না দিয়ে বাদ্যযন্ত্রীদের নিয়ে যায়। আজো ভাটি অঞ্চল, বিক্রমপুর, কুমিল্লা থেকে বাদ্যযন্ত্রী এ হাটে আসেন। ঢাকঢোল, বিভিন্ন ধরনের বাঁশি, কাঁসিসহ শত শত বাদ্যযন্ত্রের পসরা বসে। সাধারণত একটি ঢাক ১২ থেকে ১৫ হাজার, ঢোল ও কাঁসি ৮-১০ হাজার টাকায় বিক্রি বাদ্যযন্ত্রীরা পূজামণ্ডপে বাজনা বাজিয়ে দর্শক ও ভক্তদের আকৃষ্ট করে থাকেন। বাংলাদেশের আর কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল ও ওসি এসএম শাহাদত হোসেন বলেন, ঢাকিদের নিরাপত্তাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. মুশতাকুর রহমান বলেন, ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট কটিয়াদী উপজেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। উপজেলা প্রশাসন আগত বাদ্যযন্ত্রীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।
কিশোরগঞ্জ-২ সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাটের জন্য কটিয়াদী পুরাতন বাজারে স্থান নির্ধারণ করে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে শেড নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়ার পথে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়