করোনা আপডেট : মৃত্যু বেড়েছে শনাক্ত কমছে

আগের সংবাদ

নৌকা বেহাত, আছে বিদ্রোহীও

পরের সংবাদ

একটি মার্ডার

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমার অফিস গুলশান-১ এ। বাড়ি থেকে গাড়িতে পৌঁছাতে ঘণ্টাখানেক লাগার কথা। জ্যামের কারণে এর দ্বিগুণ সময় লাগে। আজ অফিসে এসেছি সকাল ৯টায়। রাস্তায় কোনো জ্যাম ছিল না। আমি ১০টার আগে অফিসে পৌঁছাতে পারি না। আজ পেরেছি। বিষয়টি অবাক করার মতো। আজকেই কেন এ রকম হলো? সকাল থেকেই আমার নার্ভ খুব উত্তেজিত হয়ে আছে। প্রেশারটাও বেড়েছে। কোনোভাবেই টেনশন কমছে না। অথচ আমি জানি টেনশন করার মতো কিছুই হয়নি। যা করেছি একেবারে ঠাণ্ডা মাথায় করেছি। কী করেছি? একটি মার্ডারের প্ল্যান করেছি। মার্ডারটা আজকেই হবে।
আমি যেটাকে ঠাণ্ডা মাথায় বলছি সেটা কতটা ঠাণ্ডা মাথায় করেছি সেটা জানি না। কারণ এটা আমার প্রথম এবং হয়তো শেষ। যাকে এই দায়িত্ব দিয়েছি সে প্রফেশনাল কেউ না। এটাও আমার পরিকল্পনা। প্রফেশনাল কাউকে কাজটির দায়িত্ব দিলে প্রথম টার্গেটেই এসব চিহ্নিত অপরাধীর নাম আসবে। আমি যাকে দায়িত্ব দিয়েছি সে ছোটখাটো অপরাধ করতে অভ্যস্ত। চুরি-ছিনতাই- এ পর্যন্তই। অনেক কষ্টে তাকে খুঁজে পেয়েছি। প্রথমে সে কাজটা করতে রাজি হয়নি। ভয় পেয়েছিল। কিন্তু টাকা সবকিছু করতে পারে। টাকার লোভ দেখাতেই একেবারে জিহ্বা ঝুলে গেল। আমার অনেক টাকা। আড়ালে অনেকে টাকার কুমির বলে। মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে রাজি করিয়েছি।
ঘটনাটা ঘটে যাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে একটু হৈচৈ হবে। আমার দিকে সবাই সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকাবে। কেউ কেউ সন্দেহ করতেও পারে। আজকাল আবার প্রথমেই স্বামীর ওপর সন্দেহ আসে। তবে সেই সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ আমার সঙ্গে শাহানার মানে আমার স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলার কেউ নেই। বিশ বছরের দাম্পত্য জীবন আমাদের। কোনো সন্তান হয়নি। এজন্য আমার চেয়ে শাহানার মনেই কষ্ট বেশি। ভেতরে ভেতরে যতই দূরত্ব থাকুক বাইরে থেকে দূরত্বটা কেউ জানে না। দূরত্ব তৈরি হয়েছে বেশিদিন হয়নি। মাসখানেক হলো দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। অথচ আমার স্ত্রী সবদিক থেকে আদর্শ গৃহিণী। স্বামীর সেবা-যতœই তার কাছে সবকিছু। নিজে উচ্চশিক্ষিত হলেও চাকরির চেষ্টা করেনি। যদিও আমার পক্ষ থেকে কোনো বাধা ছিল না।
কাজটা হয়ে যাওয়ার পর প্রথমে কিছুটা আলোচনা হবে। আলোচনার পর সব চুপচাপ হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। চুপ না হলে আমি সে ব্যবস্থা করব। সব পরিকল্পনা করা আছে। আমার প্রচুর টাকার সামান্য কিছু অংশ আমি খরচ করব স্ত্রীকে হত্যার জন্য। এই নিয়ে আমার কোনো অনুশোচনা নেই। আমার ধারণা- আমি এখন আর মানুষ নেই!
আমি এই মাল্টি ন্যাশনাল অফিসের এমডি। ফলে কখন এলাম আর গেলাম সেটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলার নেই।
তখনো অফিসে কেউ আসেনি। অফিসের পিয়ন ছাদেক এসেছে। ছাদেক আমাকে দেখে একটু অবাকই হয়েছে। এরপর একজন একজন করে সবাই এসেছে। সবাই অফিসে ঢুকেই থতমত খেয়ে গেছে। কেউই চায় না তার বস তার থেকে আগে অফিসে আসুক। এখন ১০টা বাজে। একজন ছাড়া সবাই এসেছে। সেই একজনটা হলো সীমা। আমার পিএস। যাকে ঘিরে আমার এত আয়োজন! এখন অবশ্য দুজনের সম্পর্ক বস-পিএস নেই। সম্পর্কটা অনেকটা এগিয়ে গেছে। বিছানা পর্যন্ত গড়িয়েছে। সীমা কনসিভ করেছে। এখন আমার হাতে বিকল্প নেই। একজনকে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে সীমাই ঠিক আছে। শাহানা আমাকে বিশ বছরে সন্তান দিতে পারেনি। সীমা দিয়েছে।
মাস তিনেক আগে মেয়েটাকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। আমার স্ত্রীর চেয়ে সুন্দরী, স্মার্টনেস ভাব এবং কথা বলার স্টাইল আমাকে প্রথম থেকেই মুগ্ধ করেছিল। মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে লাঞ্চে নিয়ে যেতাম। এভাবে সম্পর্কটা ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হতে থাকল। সীমার দিক থেকে কোনো বাধা ছিল না। তার বিপরীতে মেয়েটা চাইছিল যে সম্পর্কটা হোক। মেয়েটা কেন এখনো আসেনি সেটাও আমি জানি। সীমার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা মোটামুটি অফিসের সবাই একটু-আধটু আঁচও করতে পারে। কিন্তু কেউ কিছু বলে না। যে বলত সেও আর কাল থেকে বলবে না। আমি সে ব্যবস্থাই করে এসেছি। সীমাকে ফোনে বলেছি। মনে হয় বেচারা খুব ভয় পেয়েছে।
অফিসে ঢোকার এই এক ঘণ্টায় আমি তিনটা কফি খেয়েছি। আমি সারাদিনে দু’কাপ কফি খাই। ছাদেক কিছুটা অবাকই হয়েছে। ছেলেটা তৃতীয়বার ভ্রæ কুঁচকে তাকিয়েছে। আমি ওর দিকে তাকাতেই চোখ নামিয়ে নিয়েছে। কিছুতেই উত্তেজিত নার্ভ ঠাণ্ডা হচ্ছে না। নার্ভ ঠাণ্ডা করার জন্য বাড়িতে একটা ফোন দিলাম। ফোন রিসিভ করল আমার স্ত্রী।
– হ্যালো?
– হ্যাঁ বলো? এইমাত্র তো অফিসে গেলে। কিছু ফেলে গেছ বাড়িতে?
– বাড়িতে কেউ এসেছিল?
– কে আসবে?
– না ঠিক আছে। এমনি জিজ্ঞেস করলাম। তোমার না মার্কেটে যাওয়ার কথা?
– যাব একটু পরে।
বলেই খট করে টেলিফোন রেখে দিল। আমি আরো হতাশ হলাম। এতক্ষণে লোকটির আমার বাড়িতে যাওয়ার কথা। বাড়িতে আর কেউ নেই যে চিনতে অসুবিধা হবে। দরজা খুলবে শাহানা। দরজা খোলা মাত্রই কাজটা শেষ করবে। তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ফোন করবে। এটুকু করতেই এত দেরি হচ্ছে কেন? তবে কি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হয়নি। ছাদেককে ডেকে আরেক কাপ কফির কথা বলেছি। ছেলেটা এবার অবাক হয়নি। মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি আজ একটু ভিন্ন মুডে আছি। চতুর্থ কাপ কফি হাতে নিয়ে মুখে দেব এমন সময় ফোন এলো। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম ফোনটা এসেছে বাড়ি থেকে, সেই অচেনা নম্বর থেকে নয়। হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো শাহানার গলা।
– হ্যালো? শুনছো? তুমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে এসো। একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।
– কী হয়েছে?
– স্নিগ্ধাকে কে যেন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে?
স্নিগ্ধা আমার বোনের নাম। কিন্তু ওর তো এখন এখানে আসার কথা না। শাহানার একাই থাকার কথা। কাঁপা কাঁপা গলায় জানতে চাইলাম- এসব কীভাবে হলো?
– দুজনে মার্কেটে যাব বলে তুমি অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পরই ফোন দিয়ে স্নিগ্ধাকে আনলাম। অফিস থেকে তুমি ফোন দেয়ার পর দরজায় কেউ একজন কলিং বেল চাপলো। আমি সাজগোজ করছিলাম। স্নিগ্ধা দরজা খুলতেই কে যেন ওকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। আমি অ্যা¤ু^লেন্স খবর দিয়ে ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। মেয়েটার অবস্থা ভালো না। তুমি শিগগিরই এসো।
– আসছি… বলেই আমি হাসপাতালের দিকে ছুটলাম। ওদিকে সেই অচেনা কাক্সিক্ষত নম্বর থেকে ফোন এসেছে। ফোন ধরলাম। ওপাশ থেকে শুধু শুনলাম, স্যার ফিনিশ। আমার টাকাটা…। আমি ফোন কেটে দিলাম।
হাসপাতালে পৌঁছে দেখি শাহানা চিন্তিত মুখে বসে আছে। আমাকে দেখেই কেঁদে দিল। সিরিয়াস অবস্থা। আমাকে জড়িয়ে ধরেই শাহানা জানতে চাইল, কে করল এটা, বলতে পার? স্নিগ্ধার এত বড় শত্রæ কে ছিল? আচ্ছা, তুমি সকালে কার যেন আসার কথা বলছিলে?
আমি এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকি। আমার ফোনে তখন সীমার কল বেজে যাচ্ছে।
য় পাবনা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়