প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
নাহিদ আল মালেক, শেরপুর (বগুড়া) থেকে : গত মৌসুমে আলুতে ভালো দাম পেলেও এবার দাম না থাকায় হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকদের আক্ষেপ বাড়ছেই। এ বছর আলুর দরপতন হওয়ায় আলু ব্যবসায়ীদের কেজিপ্রতি ৬-৮ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের লোকসান দাঁড়াতে পারে ৩০০ কোটি টাকায়। লোকসান কাটিয়ে উঠতে আলু ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকেরা প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন।
স্বাদে মানে সেরা এবং দেশের শীর্ষ আলু উৎপাদনকারী জেলা বগুড়া। বিগত মৌসুমে জেলায় ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অর্জিত হয় ৫৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪০ টন। সেখানে বগুড়ায় আলু উৎপাদন হয় সাড়ে ১৩ লাখ টন। বেশি লাভের আশায় কৃষকেরা আলু চাষে ঝুঁকেছিলেন। কৃষকেরা নতুন আলু তোলার পর ভালো দাম পেলেও এবার বিপাকে পড়েছেন হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু ব্যবসায়ীরা ও কৃষকেরা।
জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ, সদর, নন্দীগ্রাম, কাহালু ও শেরপুর উপজেলায়। শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, গত বছর আলুর ভালো দাম পাওয়া গিয়েছিল। এজন্য লাভের আশায় অনেকেই হিমাগারে বেশি করে আলু রেখেছিল। কিন্তু এবার বস্তাপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা লোকসান গুনতে হবে। ফলে অনেকেই ব্যবসার পুঁজি হারাবে।
শেরপুর উপজেলার কাফুড়া গ্রামের আলু ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জানান, এ বছর পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকা কেজি। অথচ প্রতি কেজি আলু হিমাগারে রাখতে খরচ হয়েছে ১৮-২০ টাকা। যার ফলে কেজিতে লোকসান হচ্ছে ৮ টাকা করে।
এ ব্যাপারে শেরপুর উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামের রাকিব হাসান কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার মো. মুঞ্জুর রহমান জানান, এ বছর হিমাগারে ১ লাখ ৮৩ হাজার বস্তা আলু রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে ৮৩ হাজার বস্তা আলু এখনো পড়ে আছে। আলু রপ্তানি না হওয়ায় এবার লোকসান গুনতে হচ্ছে। আলুর দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাসহ হিমাগার মালিকেরাও বিপাকে পড়েছেন।
বগুড়া সদরের নর্দান কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার মো. ফারুক হোসেন জানান, প্রতি বছর এ সময় হিমাগারে রাখা ৭০-৮০ শতাংশ আলু বিক্রি হয়। কিন্তু এ বছর আলু বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩৫-৪০ শতাংশ। বর্তমানে আলুর যে বাজার তাতে ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু না তুললে তা ফেলে দিতে হবে।
ব্যবসায়ীরা হিমাগার ভাড়া পরিশোধ না করলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। যদি সরকার ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা নেয় তাহলে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. দুলাল হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ২০২০-২১ সালে বগুড়ায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। এদিকে এবার বন্যা না হওয়ায় সবজিরও বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে আলুর চাহিদা কমে যাওয়ায় আলুর বাজারমূল্য কমে গেছে। বগুড়ার উন্নত মানের আলু বেশি করে দেশে ও বিদেশে রপ্তানি করা গেলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হতো। তবে আলুর দাম কমে যাওয়ায় কৃষকেরা আলু চাষে খুব একটা বিমুখ হবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বগুড়া জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. হাসান সারোয়ার ভোরের কাগজকে জানান, গত বছর এ সময় আলুর দাম খুচরা বাজারে ছিল ৩০-৩৫ টাকা। এ বছর যা খুচরা পর্যায়ে ২০ টাকা অতিক্রম করেনি। আর পাইকারি কিংবা হিমাগার থেকে লাল দেশি আলু ১২-১৩ টাকা আর কার্ডিনাল ডায়মন্ড আলু ১০-১২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ২০১৭ সালেও আলুর এমন দরপতন হয়েছিল।
তিনি আরো জানান, বগুড়া জেলার ৩৭টি হিমাগারে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন আলু মজুত করা হয়েছিল। সেখান থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৪০ শতাংশ আলু বাজারে এসেছে। চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি থাকায় দাম কমে গেছে ফলে এবার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বস্তাপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা লোকসান হলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হবে। এজন্য আলুর রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বহুমুখী ব্যবহার হলে এর সঙ্গে জড়িতরা বিপর্যয়ের মুখে আর পড়বে না বলে তিনি জানান।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।