ই-কমার্স নিয়ে অভিযোগের পাহাড় ভোক্তা অধিদপ্তরে : বর্তমানে ভোক্তায় অভিযোগ ২২ হাজার, ৩ মাসে অভিযোগ বেড়েছে ৯ হাজার

আগের সংবাদ

মিলছে টিকা, করোনায় স্বস্তি : তবুও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত

পরের সংবাদ

ব্যালন ডি’অর দৌড়ে সবার আগে মেসি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : করোনার কারণে কোনো খেলোয়াড়ের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হয়নি ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার। এ নিয়ে ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল একটু হতাশা। তবে এক বছর বাদেই আবার শুরু হয়েছে ব্যালন ডি’অর উত্তেজনা। কার হাতে এবার যাবে ফুটবলের সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কার এখন এ চিন্তায় মশগুল সবাই।
ব্যালন ডি’অর কর্তৃপক্ষ এ বছরের পুরস্কারের জন্য ৩০ সদস্যের প্রাথমিক দলে ঘোষণা করেছে। আর স্বাভাবিকভাবেই লিওনেল মেসি, নেইমার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, রবার্ট লেভানদোস্কির মতো বড় তারকাদের নাম এসেছে। বলা হচ্ছে এবার ব্যালন ডি’অরের জমজমাট লড়াই হবে। কারণ সংক্ষিপ্ত তালিকায় যাদের নাম এসেছে তারা সবাই চমক দেখিয়েছেন।
তবে ৩০ জনের মধ্যে তালিকায় এগিয়ে আছেন লিওনেল মেসি, রবার্ট লেভানদোস্কি ও জর্জিনহো। এই তিনজনের একজনের হাতেই এবার উঠবে ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার। তা কোনো সন্দেহ নেই। ২৯ নভেম্বর জানা যাবে বিজয়ীর নাম। অর্জনের খাতায় তাকালে দেখা যাচ্ছে মেসি সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন। শোনা যাচ্ছে এবার নিজের ক্যারিয়ারে রেকর্ড সপ্তমবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতবেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। ভোটাভুটি শেষে জানিয়ে দেয়া হবে কার হাতে যাবে সম্মানজনক এ পুরস্কারটি। এর যথেষ্ট কারণও আছে। মেসির পর সর্বোচ্চ পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন রোনালদো। তবে এবার রোনালদোর এ পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ফুটবল কিংবদন্তি মেসি গত মৌসুমে বার্সেলোনার জার্সিতে ২৮ ম্যাচে করেছেন ২৭ গোল, করিয়েছেন আরো ৯টি। লা লিগায় কোনো সাফল্য না পেলেও বার্সাকে স্প্যানিশ কাপের জিতিয়েছিলেন তিনি, যা বার্সার হয়ে তার শেষ কোন শিরোপা ছিল। তবে এর চেয়েও বড় কীর্তি গড়েছেন গত জুলাইয়ে।
এরপর আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা খরা ঘুচিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা এনে দিয়েছেন ব্রাজিলের মাটিতে এমনকি সেটি ব্রাজিলকেই হারিয়ে কোপা আমেরিকায় ৪ গোল করার পাশাপাশি ৫টি গোল করান মেসি। গোল করা ও করানো দুই দিকেই ছিলেন টুর্নামেন্টে সবার সেরা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন তিনি।
ফুটবল ইতিহাসে আর কোনো টুর্নামেন্টে কখনো কোনো খেলোয়াড় শিরোপা জেতার পথে টুর্নামেন্টের সেরা গোলদাতা ও অ্যাসিস্টের তালিকায় সেরা হওয়ার পাশাপাশি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হতে পারেননি। অপরদিকে চেলসির ইতালিয়ান মিডফিল্ডার জর্জিনহোকে অনেকে ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছেন। এ বছর ডাবল ইউরোপিয়ান ট্রফি তার ঝুলিতে। ক্লাবপর্যায়ে চেলসির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পর ইতালির হয়ে ইউরো কাপ জয় করেছেন তিনি। ব্লæ আর আজ্জুরিদের হয়ে এই সাফল্যে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে এই মিডফিল্ডার নিজেও।
ব্যালন ডি’অরের পুরস্কারদাতা ফ্রেঞ্চ ফুটবল যদি আগের বছরের হিসাব ও গত মৌসুমের হিসাব করে তাহলে লেভানদোস্কি অনেক এগেিয় থাকবেন। পোলিশ তারকা এ ফুটবলার ২০২১ সালে ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ ও জাতীয় দল পোল্যান্ডের হয়ে সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৪০ ম্যাচে করেছেন ৪৮ গোল, করিয়েছেন আরো ৯টি। বায়ার্নের ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ বনে যাওয়া জার্মান লিগ তো জিতেছেনই, কদিন আগে জার্মান সুপার কাপও জিতেছেন লেভা। গত মৌসুমে তিনি বুন্দেসলিগার এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভেঙে দেন। প্রায় ৫০ বছর আগে জের্ড মুলার এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করেছিলেন। লেভানদোস্কি সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন গত মৌসুমে। যদিও তার দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিততে পারেনি। মানে বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেননি লেভানদোস্কি। ফলে ভোট পাওয়ার দিক দিয়ে তিনি কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারেন।
ব্যালন ডি’অরের জন্য আরেকটি বড় নাম যেটি উচ্চারিত হচ্ছে সেটি হলো করিম বেনজেমা। রিয়ালের এ খেলোয়াড় সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালোই খেলছেন। গত মৌসুমে তিনি লা লিগায় তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
২০২১ সালে ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও জাতীয় দল ফ্রান্সের হয়ে সব মিলিয়ে ৪৩ ম্যাচ খেলেছেন বেনজেমা। তাতে গোল করেছেন ৩০টি, করিয়েছেন ১২টি। তবে রিয়াল কিংবা ফ্রান্সের হয়ে এ বছরে কোনো শিরোপাও জেতেননি বেনজেমা। ২০২১ ব্যালন ডি’অরের ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন রিয়াদ মাহরেজ (ম্যানচেস্টার সিটি/আলজেরিয়া), অ্যাঙ্গোলো কান্তে (চেলসি/ফ্রান্স), ম্যাসন মাউন্ট (চেলসি/ইংল্যান্ড), লিওনার্দো বনুচ্চি (জুভেন্টাস/ইতালি), এরলিং হরল্যান্ড (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড/নরওয়ে), করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ/ফ্রান্স), জিয়ানলুইজি ডোনারুম্মা (পিএসজি/ইতালি), নিকোলো বারেল্লা (ইন্টার মিলান/ইতালি), রহিম স্টার্লিং (ম্যানচেস্টার সিটি/ইংল্যান্ড), হ্যারি কেন (টটেনহ্যাম/ইংল্যান্ড), লিওনেল মেসি (পিএসজি/আর্জেন্টিনা), জর্জিও কিয়েল্লিনি (জুভেন্টাস/ইতালি), লুকা মদ্রিচ (রিয়াল মাদ্রিদ/ক্রোয়েশিয়া), ব্রুনো ফার্নান্দেজ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড/পর্তুগাল), পেদ্রি রদ্রিগেজ (বার্সেলোনা/স্পেন), নেইমার (পিএসজি/ব্রাজিল), কেভিন ডি ব্রুইন (ম্যানচেস্টার সিটি/বেলজিয়াম), রুবেন দিয়াজ (ম্যানচেস্টার সিটি/পর্তুগাল), লউতারো মার্টিনেজ (ইন্টারমিলান/আর্জেন্টিনা), সাইমন কায়ের (এসি মিলান/ডেনমার্ক), রবার্ট লেভানদোস্কি (বায়ার্ন মিউনখ/পোল্যান্ড), জর্জিনহো (চেলসি/ইতালি), সিজার আজপিলিকুয়েতা (চেলসি/স্পেন), মোহামেদ সালাহ (লিভারপুল/মিশর), রোমেলু লুকাকু (চেলসি/বেলজিয়াম), ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড/পর্তুগাল), জেরার্ড মরেনো (ভিয়ারিয়াল/স্পেন), ফিল ফোডেন (ম্যানচেস্টার সিটি/ইংল্যান্ড), কিলিয়ান এমবাপ্পে (পিএসজি/ফ্রান্স), লুইস সুয়ারেজ (অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ/উরুগুয়ে)।
ফুটবলের সবচেয়ে সম্মানজনক ব্যক্তিগত পুরস্কার হলো ব্যালন ডি’অর। ফ্রান্স ফুটবল নামের একটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন প্রতি বছর সেরা ফুটবলার নির্বাচন করে থাকে। ১৯৫৬ সাল থেকে চালু হওয়া এই পুরস্কার ফুটবলের সবচেয়ে প্রাচীন পুরস্কার। সর্বপ্রথম এই পুরস্কার জিতে নেন ইংল্যান্ডের স্ট্যানলি ম্যাথিউস। গত বছর করোনায় স্থগিত থাকার আগ পর্যন্ত প্রতি বছরই দেয়া হয়েছে পুরস্কারটি।
২০১০ সালে ফ্রান্স ফুটবল ও ফিফা সিদ্ধান্ত নেয় ব্যালন ডি’অর ও ফিফা বেস্ট প্লেয়ার অ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে একসঙ্গে। তখন থেকে পুরস্কারটির নাম হয় ফিফা ব্যালন ডি’অর। ১৯৯৩-এর পর ২০২১। মাঝের প্রায় তিন দশকের ট্রফির হাহাকার কেটেছে আর্জেন্টাইনদের।
এদিকে এ তালিকায় এবার প্রথমবারের মতো গোলরক্ষক হিসাবে জায়গা করে নিয়েছেন ইতালি ও পিএসজির গোলরক্ষক জুয়ানলুইগি ডোনারুম্মা। তিনি ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন ইতালির হয়ে ইউরোর শিরোপা জয় করার কারণে। ইতালি যে এবার ইউরো জয় করেছে তার মধ্যে বড় অবদান রেখেছেন ডোনারুম্মা। পুরো টুর্নামেন্টে বেশ কয়েকটি নিশ্চিত গোল ঢেকিয়ে দিয়েছেন বাজপাখির মতো।
তবে কোনো গোলরক্ষকের ব্যালন ডি অর জেতার সম্ভাবনা খুবই কম। তিনি যে একমাত্র গোলরক্ষক হিসাবে ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন এটিই তার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
অপরদিকে গত মৌসুমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাসের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। কিন্তু তার জুভেন্টাসের মৌসুমটা যায় একেবারে সাদামাটা। টানা নয় মৌসুম সিরি আর শিরোপা জয় করার পর গত মৌসুমে নিজেদের শিরোপা তারা হারায় ইন্টার মিলানের কাছে। অপরদিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জুভেন্টাস বলতে গেলে মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে রোনালদো সিরি আয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও দলীয়ভাবে তিনি কোনো সাফল্য পাননি। এক কথায় বলা যায় ব্যালন ডি অর জয় করার মতো কিছু করতে পারেননি রোনালদো। ক্লাব পর্যায়ে ব্যথ হওয়ার পর ইউরোতে পর্তুগালের হয়েও কোনো কিছু করতে পারেননি। যদিও ইউরোতে পাঁচটি গোল করে তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। সব মিলিয়ে রোনালদোর সময়টা ভালো যায়নি। তবে এ মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেয়ার পর দুর্দান্ত খেলছেন তিনি। ফলে আগামী মৌসুমে ব্যালন ডি অর জয়ের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে থাকবেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়