ই-কমার্স নিয়ে অভিযোগের পাহাড় ভোক্তা অধিদপ্তরে : বর্তমানে ভোক্তায় অভিযোগ ২২ হাজার, ৩ মাসে অভিযোগ বেড়েছে ৯ হাজার

আগের সংবাদ

মিলছে টিকা, করোনায় স্বস্তি : তবুও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত

পরের সংবাদ

তাইওয়ান-চীন একত্রীকরণে শি’র অঙ্গীকার

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : তাইওয়ান ও চীন পুনরেকত্রীকরণের অঙ্গীকার করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীন থেকে রাজতন্ত্র উৎখাতের ১১০ বছরপূর্তিতে দেয়া ভাষণে গতকাল শনিবার তিনি বলেছেন, তাইওয়ানের সঙ্গে পুনরেকত্রীকরণ হতেই হবে। এই পুনরেকত্রীকরণ শান্তিপূর্ণভাবে হওয়া উচিত। তবে বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলায় চীনা জনগণের ‘গৌরবময় ঐতিহ্য’ আছে। এদিকে শি’র বক্তব্যের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, স্বশাসিত দ্বীপের ভবিষ্যৎ কেবল এর জনগণই নির্ধারণ করতে পারে।
তাইওয়ান নিজেদের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র দাবি করলেও চীন দ্বীপটিকে দেখে নিজেদের ‘বিচ্ছিন্ন প্রদেশ’ হিসেবে। পুনরেকত্রীকরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বল প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি বেইজিং। গত সপ্তাহে তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে চীনের দেড়শ সামরিক বিমানের ‘অনুপ্রবেশের’ পরই শি জিনপিং তাইওয়ান-চীন পুনরেকত্রীকরণের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেন।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শি গত জুলাইয়ে বলেছিলেন, তাইওয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার কোনো ধরনের চেষ্টা করলে তা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে। মাতৃভূমির সঙ্গে (তাইওয়ানের) পুনরেকত্রীকরণে ইতিহাস অর্পিত যে কর্তব্য আছে, তা অবশ্যই শেষ কতে হবে এবং এটা হতেই হবে। শি জানান, তিনি চান তাইওয়ান চীনের সঙ্গে হংকংয়ের মতো ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ এই নীতির আওতায় শান্তিপূর্ণ পুনরেকত্রীকরণে রাজি হোক।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় বলেছে, তাইওয়ানের জনগণের ভাবনা স্পষ্ট, তারা ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থা’ প্রত্যাখ্যান করেছে। এক্ষেত্রে তাইওয়ানের জনমত খুবই স্পষ্ট। এছাড়া বেইজিংকে তাইওয়ান ভূখণ্ডে ‘অনুপ্রবেশ, হয়রানি ও ধ্বংসের উত্তেজনাকর পদক্ষেপ’ পরিত্যাগ করতে হবে।
বিবিসি লিখেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা চললেও পরিস্থিতি এখনো ১৯৯৬ সালের মতো পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সেবার চীন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিঘিœত করার চেষ্টায় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল, সে সময় বেইজিংকে থামাতে ওই অঞ্চলে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে।
চীনের সাম্প্রতিক শক্তি প্রদর্শনে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি ‘তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতা’ মেনে চলার ব্যাপারে রাজি হয়েছেন। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে যে ‘এক চীন’ নীতি মেনে চলছে, বাইডেন সম্ভবত সেটিকেই ‘তাইওয়ান নিয়ে সমঝোতা’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ওই ‘এক চীন’ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি; তবে তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতই তাইপের কাছে অস্ত্র বেচে, আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে তাইওয়ানের পাশে থাকার অঙ্গীকারও আছে তাদের।
প্রসঙ্গত, চীনে গৃহযুদ্ধের পর সেখানকার জাতীয়তাবাদী নেতারা এবং তাদের সমর্থক সরকারদলীয় নেতারা পালিয়ে তাইওয়ান চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তারা ‘রিপাবলিক অব চায়না’ নামে সরকার গঠন করেছিলেন। একদিন আবার পুরো চীনের নিয়ন্ত্রণ নেয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ বেইজিং সরকারকেই চীনের আসল সরকার বলে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে বিশ্বের প্রায় সব দেশ বেইজিংকে স্বীকৃতি দিলে তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কমে যায়।
১৯৮০-র দশক পর্যন্ত চীন আর তাইওয়ানের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধের পর ‘এক দেশ, দুই পদ্ধতি’ নামে চীনের প্রস্তাবে উত্তেজনা কিছুটা কমেছিল। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী তাইওয়ানকে স্বায়ত্তশাসন দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু তাইওয়ান প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে। ২০০০ সালে তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট চেন শুই বিয়ান দায়িত্ব নেয়ার পর ২০০৪ সালে ঘোষণা দেন, তাইওয়ান চীন থেকে আলাদা হয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। এতে চীন ভীষণ রুষ্ট হয়ে একটি আইন পাস করে। তাতে বলা হয়, তাইওয়ান চীন থেকে আলাদা হওয়ার চেষ্টা করলে তা ঠেকাতে চীন প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করবে।
তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেকে বিশ্ব মঞ্চ থেকে সবসময়ই দূরে রাখতে চায় চীন। তাইওয়ান নাম ব্যবহারেও ঘোর আপত্তি আছে চীনের। তাইওয়ানকে যেন কিছুতেই আলাদা ‘দেশ’ বলে উল্লেখ না করা হয় এবং তাইওয়ানের নেতাকেও যাতে ‘প্রেসিডেন্ট’ বলে অভিহিত না করা হয় সেজন্য গত বছর ভারতীয় গণমাধ্যমকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল চীন।
২০১৬ সালে সাই-ইং-ওয়েন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনিও তাইওয়ানের জন্য একটি আলাদা সার্বভৌম পরিচিতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের ঐতিহাসিক যোগাযোগের বিষয়টি মুছে দিতে চাইছেন তিনি। চীনের যুদ্ধবিমান সম্প্রতি তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা জোনে (এআইডিজেড) অনুপ্রবেশের পর আন্তর্জাতিক সমর্থন চাইছে দ্বীপদেশটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়