কাগজ ডেস্ক : কাতারে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত হবে ফিফা বিশ্বকাপের ২২তম আসর। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মাঠের লড়াইয়ে নেমেছে ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ইউরোপ অঞ্চলের ম্যাচে গতকাল রোমানিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে জয় তুলে কাতারের পথে নিজেদের টিকেট অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলেছে জার্মানি। তবে ‘জে’ গ্রুপের ম্যাচটিতে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জয় পেতে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল রোমানিয়া এদিন ম্যাচের শুরুতে জার্মানির জালে বল জড়িয়ে এগিয়ে যায়। এরপর সের্গে জিনাব্রি ও টমাস মুলারের কল্যাণে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। এদিকে ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইপর্বের ‘জি’ গ্রুপের ম্যাচে গতকাল লাতবিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে জয় পেয়েছে মেম্ফিসের দল। দিনের অন্য ম্যাচে আর্লিং হরল্যান্ডরা ১-১ গোলে ড্র করে তুরস্কের বিপক্ষে।
জার্মানির শহর হামবার্গে গতকাল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ‘জে’ গ্রুপের ম্যাচে রোমানিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচে প্রায় ৭৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশ্যে ২২টি শট নেয় জার্মানি, যার ৬টি ছিল লক্ষ্যে। আর রোমানিয়ার ৯ শটের মাত্র একটিই ছিল লক্ষ্যে। হ্যান্সি ফ্লিকের কোচিংয়ে বাছাইয়ে চার ম্যাচ খেলে সব কটিতেই জিতল জার্মানি। আগের তিন ম্যাচে কোনো গোল হজম না করে প্রতিপক্ষের জালে ১২ বার বল পাঠানো জার্মানি রোমানিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের নবম মিনিটে পিছিয়ে পড়ে। দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে গোলটি করেন হাজি। অবশ্য জার্মানি তার আগের মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত। ভিএআরে সিদ্ধান্ত না বদলালে কপাল পুড়তো রোমানদের। ডি-বক্সে টিমো ভেরনার পেছন থেকে ডিফেন্ডার আন্দ্রেই বুর্কার চ্যালেঞ্জে পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। প্রতিবাদ জানায় সফরকারীরা। এরপর দীর্ঘক্ষণ ভিএআরে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টান রেফারি। এর পরের মিনিটেই চমৎকার গোলে স্বাগতিকদের স্তব্ধ করে দেন রোমানিয়ার হাজি। সতীর্থের পাস ধরে ডিফেন্ডার টিলো কেরারকে এড়িয়ে ডি-বক্সে ঢোকার মুখে আরেক ডিফেন্ডার অ্যান্টোনিও রুডিগারকে ফাঁকি দিয়ে কোনাকুনি শটে গোলটি করেন স্কটিশ ক্লাব রেঞ্জার্সের ফরোয়ার্ড। পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে বল দখলে রেখে আক্রমণে মনোযোগী হয় জার্মানি। বারবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি ছড়াতে থাকে তারা। কিন্তু বিরতির আগে কাক্সিক্ষত জালের দেখা পায়নি তারা। দ্বিতীয়ার্ধেও একই রকম চাপ ধরে রেখে শুরু করা জার্মানি সমতায় ফেরে ৫২তম মিনিটে। ডি-বক্সের মুখ থেকে মার্কো রয়েসের ছোট কাটব্যাক পেয়ে নিচু শটে ঠিকানা খুঁজে নেন বায়ার্ন মিউনিখ মিডফিল্ডার জিনাব্রি। চার মিনিট পরই দলকে এগিয়ে নিতে পারতেন রয়েস। কিন্তু ইয়োনাস হফমানের কাটব্যাক পেয়ে ১০ গজ দূর থেকে ভলি উড়িয়ে মারেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ফরোয়ার্ড। কিছুক্ষণ পর দুই মিনিটের ব্যবধানে ভালো পজিশনে বল পেয়েও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ভেরনার। প্রবল চাপ ধরে রাখার ফল মেলে ৮১তম মিনিটে। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল হেডে লেয়ন গোরেটস্কা পাঠান পেছনে। দূরের পোস্টে থাকা মুলার অনায়াসে কাছ থেকে জয়সূচক গোলটি করেন। সাত ম্যাচে ৬ জয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে জার্মানি। দিনের আরেক ম্যাচে লিখটেনস্টাইনকে ৪-০ গোলে হারানো নর্থ মেসিডোনিয়া ১২ পয়েন্ট নিয়ে উঠেছে দ্বিতীয় স্থানে। আইসল্যান্ডের মাঠে ১-১ ড্র করা আর্মেনিয়াও সমান ১২ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিন নম্বরে। চার নম্বরে নেমে যাওয়ার রোমানিয়ার পয়েন্ট ১০।
দিনের অন্য ম্যাচে ‘জি‘ গ্রুপে লাতবিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে নেদারল্যান্ডস। ডাচদের পক্ষে জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন ডেভি ক্লাসেন। লাতবিয়ার ঘরের মাঠে গতকালের ম্যাচটিতে শুরু থেকেই স্বাগতিকদের চেপে ধরেন বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড মেম্ফিস ডিপাই ও অ্যাজাক্স ফরোয়ার্ড ডেভি ক্লাসেন। বেশ কিছু সুযোগও পান তারা। তবে ফিনিশিংয়ের দুর্বলতার কারণে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি ডাচ ফুটবলাররা। লাতবিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৭৮ শতাংশ সময় বল দখলে রাখে মেম্ফিসরা। কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে ডাচদের অপেক্ষা করতে হয় ম্যাচের ১৯তম মিনিট পর্যন্ত । কর্নার থেকে মেম্ফিসের শট খুঁজে নিয়ে প্রতিপক্ষের জালে পাঠান অ্যাজাক্স ফরোয়ার্ড ডেভি ক্লাসেন। প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্য এদিন ১৯টি শট নেন ডাচ ফুটবলাররা, যার মধ্যে ৪টি ছিল লক্ষ্যে, আর সফলতার মুখ দেখে ওই ক্লাসেনের শটটিই। দুর্বল লাতবিয়ার ১০টি শটের একটি মাত্র ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু তা ডাচ গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেনি। ৭ ম্যাচে ৫ জয়, এক হার ও এক ড্রয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘জি’ গ্রুপে টেবিলের শীর্ষস্থানটি ধরে রেখেছে নেদারল্যান্ডস। একই গ্রুপের অন্য ম্যাচে নরওয়ে ১-১ গোলে ড্র করেছে তুরস্কের বিপক্ষে। এদিন দলের ত্রাতারূপে ফ্রন্টলাইনে আসতে পারেনি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি ফুটবলার আর্লিং হরল্যান্ড। ম্যাচে উল্টো আধিপত্য বিস্তার করে গেছে তুরস্কের ফুটবলাররা। ইস্তানবুলে এদিন ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যায় তুর্কিরা। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে নরওয়ের জালে বল পাঠিয়ে দলকে এগিয়ে নেন তুর্কি ফুটবলার মোহাম্মদ কেরেম আকতুরকগলু। পিছিয়ে পড়া নরওয়েকে ম্যাচের ৪১তম মিনিটে সমতায় ফেরান ক্রিশ্চিয়ান থর্সবেত। ৭ ম্যাচে ৪ জয়, ২ ড্র ও এক হারে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে আর্লিং হরল্যান্ডের দেশ।