ই-কমার্স নিয়ে অভিযোগের পাহাড় ভোক্তা অধিদপ্তরে : বর্তমানে ভোক্তায় অভিযোগ ২২ হাজার, ৩ মাসে অভিযোগ বেড়েছে ৯ হাজার

আগের সংবাদ

মিলছে টিকা, করোনায় স্বস্তি : তবুও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত

পরের সংবাদ

কলাবাগান মাঠ : অনুমতি মেলেনি পূজারীরা হতাশ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : স্থায়ী কোনো মন্দির না থাকায় ১৪ বছর ধরে কলাবাগান ক্রীড়াচক্র মাঠে দুর্গাপূজা উদযাপন করে আসছেন ৬০ হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ। তারা ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সেখানে পূজা করার অনুমতি না দেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতি দিয়েছে ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গতকাল শনিবার ডিএসসিসির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে পূজা উদযাপন করতে পারছেন না বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা আংশিক, সঠিক নয়। বর্তমানে সেখানে উন্নয়ন কাজ চলছে। শিশুদের ‘কিডস জোন’-র ২৯টি রাইড স্থাপন করা হবে। এই জোনকে ‘শহীদ শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ নামে উদ্বোধন করা হবে। তাই এই মাঠের পরিবর্তে অন্য কোনো স্থানে পূজা আয়োজন করতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমেন সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণের বিবৃতি নিয়ে আমরা ঝগড়া করতে চাই না। বিবৃতিটি গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আগে জানতাম না বা কেউ বলেনি এই মাঠে শেখ রাসেল শিশু পার্ক হতে যাচ্ছে। বিবৃতিতে জানতে পেরেছি। এ নিয়ে আমরা আনন্দিত। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কলাবাগান ক্রীড়াচক্র মাঠে আর পূজা উদযাপন করব না। গতকাল শনিবার আমাদের মানববন্ধনেও তা বলেছি। আমরা চাই ঢাকা দক্ষিণের মেয়র কলাবাগান মাঠের পরিবর্তে আমাদের অন্য একটা জায়গা দেবেন, যেখানে আমরা পূজা করব। আগামীকালের (আজকের) মধ্যে যদি তা করা না হয় তাহলে আবারো মানববন্ধন করব। প্রয়োজনে আরো কড়া আন্দোলনের কর্মসূচি দেব। তিনি আরো বলেন, শনিবার ঢাকা দক্ষিণের মেয়রকে আমরা একাধিকবার ফোন করেছি। তিনি রিসিভ করেননি।
আগের দিন শুক্রবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে কলাবাগান ক্রীড়াচক্র মাঠে পূজা উদযাপন করতে না দেয়ার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে দায়ী করে সংবাদ সম্মেলন করেন পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা। সেখানে পূজা করতে না দিলে অনশনের হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির নেতারা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পূজার অনুমতি না দেয়া হলে ঢাকাসহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, আন্দোলন, সব মন্দিরে কালো পতাকা প্রদর্শন ও গণঅনশন কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দেন তারা। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমেন সাহা সেদিন জানান, ২০০৭ সাল থেকে আমরা কলাবাগান মাঠে দুর্গাপূজা উদযাপন করে আসছি। এ এলাকায় কোনো মন্দির নেই। ১৪ বছর ধরে এখানে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে। ২৬ আগস্ট আমরা সরকারের নির্দেশিত সমস্ত নিয়মকানুন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপনের জন্য ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বরাবর লিখিত অনুমতি প্রার্থনা করি। কিন্তু বারবার যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাইনি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর শরণাপন্ন হলে তিনি দুই দিনের মধ্যে পূজা উদযাপন করার অনুমতি দেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র থাকার পরও সিটি করপোরেশনের অসহযোগিতার কারণে আমরা পূজা উদযাপন করতে পারছি না।
এদিকে পূজা কমিটির অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য নয় বলে দাবি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গতকাল সংস্থাটির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে পূজা উদযাপন কমিটি সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার এবং অনাকাক্সিক্ষত তথ্য উপস্থাপন করেছে অভিযোগ এনে ডিএসসিসির অবস্থান স্পষ্ট করা হয়। সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছেরের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনে পূজা কমিটির মিথ্যাচার এবং অনাকাক্সিক্ষত তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস সুস্পষ্ট হয়েছে। তাদের বক্তব্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। এতে গর্হিত শব্দমালা ব্যবহার হয়েছে। এ ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে আমরা মর্মাহত। এ ধরনের বক্তব্য স্বার্থান্বেষী মহলের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য সাধন ও চাঁদাবাজির অভিলাষ পূরণের নামান্তর। মন্ত্রণালয় থেকে শর্ত দেয়া হয়েছিল- পূজা উদযাপনকালে কলাবাগান মাঠে কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি বা বিনষ্ট না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়নি। এতে দক্ষিণ সিটির পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সার্বিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস লক্ষণীয়। মন্ত্রণালয়ের দেয়া ‘শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি দানের’ জন্য ডিএসসিসির কাছে যে পত্র পাঠানো হয়েছে, সেখানে শর্ত পূরণ করে পূজা আয়োজনের ফলে মাঠ কিংবা প্রকল্প এলাকায় কোনো ক্ষতি হলে তার যথার্থ ক্ষতিপূরণ-জরিমানা দেয়া হবে, এমন নিশ্চয়তা দিয়ে পূজা কমিটি সিটি করপোরেশনের কাছে কোনো আবেদন করেনি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, কলাবাগান মাঠ ও ওই এলাকায় ২০১৮ সাল থেকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরপরও ২০১৯ সালে ক্ষতিপূরণ দেয়ার শর্তে দুর্গাপূজা আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু পূজাস্থলের ঘাস নষ্ট, খোঁড়াখুঁড়িতে মাটির নিচের খোয়া বেরিয়ে আসা, মাটির নিচের পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত ও পুরো মাঠ আবর্জনায় ভরে ওঠে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা হলেও কমিটি তা দেয়নি। এছাড়া করোনার ফলে ৫ অক্টোবর ধর্ম মন্ত্রণালয় পূজা আয়োজনে যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে মন্দিরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি পালনের কথা বলা হয়েছে। উন্মুক্ত স্থানে পূজা আয়োজনের বিষয়ে সরকার এখনো কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার কথা বলেনি। ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ থাকাকালীন ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকায় ৮টি মন্দিরের উন্নয়ন ও সংস্কার করেছেন। সুতরাং এ ধরনের তথ্য অশুভ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের ইঙ্গিত করে। দুর্গাপূজার মতো একটি ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে যারা মিথ্যাচার করতে পারেন তাদের উদ্দেশ্য ধর্মীয় আরাধনা নয়, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, প্রকল্প চলাকালে কলাবাগান মাঠে দেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঈদ জামায়াত আয়োজনে কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। বাস্তবতা বিবেচনায় ও মাঠের ক্ষতি সাধন হতে বিরত থাকার মহত্তম অভিপ্রায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ওই মাঠে সব ধর্মীয় আয়োজন হতে বিরত থেকেছে, যা অত্যন্ত সাধুবাদ যোগ্য। বস্তুত সব ধর্মের প্রতি সমব্যবহার নিশ্চিত করা এবং কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন না করার মাধ্যমে যখন সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হচ্ছে, তখন এ ধরনের উস্কানির পেছনে নানাবিধ রহস্য খেলা করছে বলে প্রতীয়মান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়