ই-কমার্স নিয়ে অভিযোগের পাহাড় ভোক্তা অধিদপ্তরে : বর্তমানে ভোক্তায় অভিযোগ ২২ হাজার, ৩ মাসে অভিযোগ বেড়েছে ৯ হাজার

আগের সংবাদ

মিলছে টিকা, করোনায় স্বস্তি : তবুও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত

পরের সংবাদ

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ : প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের বাজারেও

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের দাম বেড়েছে। দফায় দফায় বেড়ে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮০ ডলারে উঠেছে। এতে সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে তেলের দাম। বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দু দুটি ঝড়ের পর তেলের চাহিদা বাড়ছে। তবে সে তুলনায় সরবরাহ কম রয়েছে। ফলে পণ্যটির দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়তে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, তেলের দাম আরো বাড়তে থাকলে সরকারের খরচ বেড়ে যাবে। এতে আমাদের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং রপ্তানিমুখী উৎপাদন- তিনটার ওপরই ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তেলের দামকে ধরা হয় গেøাবাল ইনফ্লেশনের মার্কার হিসেবে। ইতোমধ্যে আমরা কমোডিটি প্রাইজের একটি ঊর্ধ্বগতি আন্তর্জাতিক বাজারে দেখছি। তিনি বলেন, আমাদের এবারের পেট্রোলিয়াম আমদানিতে ইতোমধ্যে দামের একটি প্রভাব পড়েছে। গত বছর আমরা যে পেট্রোলিয়াম ৪০ ডলারে এনেছি, এবার সেই একই পণ্য ৮১ ডলারে আনতে হয়েছে। ইতোমধ্যে কন্টেইনার ভাড়াও প্রায় ৪০০ শতাংশ বেড়েছে। তেলের মূল্য বাড়ার কারণে এ দাম আরো বাড়তে পারে। এক কথায়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে আমাদের আমদানি খরচ বাড়বে এবং আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতির শঙ্কা তৈরি করতে পারে। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইতোমধ্যে ইয়ার্ন ও কটনের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ এগুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং রপ্তানিমুখী উৎপাদন- তিনটার ওপরই ঋণাত্মক প্রভাব ফেলবে।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছিল। এ মহামারি ইতোমধ্যে সহনীয় হয়ে আসায় দেশে দেশে আবার সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি পেতে শুরু করেছে। আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার হওয়ার কারণে জ¦ালানি তেলের চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেক দিন পর আবার সেই লক্ষণ দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে ইউরোপের দেশগুলোতে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সংকট চলছে। সব মিলিয়ে বিশ্ববাজারে এখন সরবরাহ কম থাকার পরিস্থিতিতে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের সদস্য দেশগুলো সরবরাহ বাড়াতে চায়। তারা বেশ কিছুদিন ধরে সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে দৈনিক তেল উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এছাড়া চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসন প্রতিষ্ঠান এভারগ্র্যান্ড গ্রুপ দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে- এমন খবরে এশিয়ার পুঁজিবাজারের পাশাপাশি তেলের বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মূলত গত

বছরের নভেম্বর থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকে। এ বছরের জুন থেকে তেলের দাম বাড়ার যে প্রবণতা তা আরো বেড়ে যায়। ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর গত জুনে করোনার প্রকোপের মধ্যে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৭৫ ডলারে উঠে আসে।
গত এক সপ্তাহে তেলের দামে বড় উত্থান হওয়ায় এখন অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৮০ ডলার স্পর্শ করেছে। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালের নভেম্বরের পর আবারো অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৮০ ডলারে পৌঁছেছে। অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ও হান্টিং অয়েলের দামও সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের দাম বাড়া নিয়ে সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে, আসন্ন শীত মৌসুমে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারে উঠবে, যা তাদের এর আগেকার প্রাক্কলনের চেয়ে ১০ ডলার বেশি। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৮০ ডলারে উন্নীত হবে। গোল্ডম্যান স্যাকস মনে করে, শীতের তীব্রতা যদি বেশি বেড়ে যায়, তাহলে তেলের চাহিদা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে দৈনিক চাহিদা বাড়বে ৯ লাখ ব্যারেল।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ও হান্টিং অয়েলের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত এক মাসে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ। আর হান্টিং অয়েলের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশের ওপরে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১ দশমিক ২৯ ডলার বেড়ে ৭৯ দশমিক ৫৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দশমিক ৬৩ ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৮২ দশমিক ৫০ ডলারে উঠে এসেছে। এতে গত এক সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গত এক সপ্তাহে ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে প্রতি গ্যালন হান্টিং অয়েলের দাম ২ দশমিক ৪৭ ডলারে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে মাসের ব্যবধানে হান্টিং অয়েলের দাম ১৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেড়েছে।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিলে গত বছরের ২০ এপ্রিল বিশ্ববাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের মধ্যে পড়ে তেল। সেদিন প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋণাত্মক ৩৭ ডলারের নিচে নেমে যায়। রেকর্ড এই দরপতনের পরই অবশ্য তেলের দাম বাড়তে থাকে। এতে রেকর্ড দরপতনের ধকল সামলে গত বছরের বেশিরভাগ সময় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ ডলারের মধ্যে থাকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়