ঢাকা সেনানিবাসে এনআইডি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন

আগের সংবাদ

যশোর বোর্ডের হিসাব থেকে আড়াই কোটি টাকা উত্তোলন : জালিয়াতির অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

পরের সংবাদ

২ পার্সেন্ট না দিলে কাজ হয় না : কুলিয়ারচর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলি হায়দার, কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) থেকে : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পরতে পরতে দুর্নীতি। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ কল্পনা করা যায় না। দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকারি রাজস্বের বাইরে দলিলপ্রতি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, সর্বনিম্ন শতকরা দুই ভাগ কমিশন না দিলে কোনো দলিল রেজিস্ট্রি হয় না। এছাড়া হায়ার ভ্যালু, হেবা ঘোষণাতেও নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে উচ্চমানের জমিকে নিম্নমানের উল্লেখ করে দলিল সম্পাদন করার। উদ্দেশ্য সরকারের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া। জমির শ্রেণি পরিবর্তনে সরকারের বিশাল রাজস্ব ফাঁকি দিলেও সাব-রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়া রয়েছে কথিত সেরেস্তার নামে টাকা আদায় এবং পদে পদে হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের ম্যারাথন অভিযোগ। এসব ঘুষের টাকা প্রতিটি দলিল লেখককে সরকারি ফিসের সঙ্গে হিসাব করে আলাদা বুঝিয়ে দিতে হয় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নকল নবিশ কর্মচারী রুস্তমকে। পরে আরো কয়েক হাত ঘুরে সেই টাকা যায় রেজিস্ট্রারের হাতে। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক বলেন, আমরা এখানে অসহায়, কিছুই করার নাই। যদি দলিলপ্রতি নির্ধারিত অতিরিক্ত টাকা হিসাব করে বুঝিয়ে না দেই তবে দলিলই গ্রহণ করবে না- স্বাক্ষর তো দূরের কথা।
ভুক্তভোগীরা জানান, সাব-কবলা দলিল, হেবা ও দানপত্রসহ যে কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করতে সর্বনিম্ন দুই ভাগ হিসাবে দলিলদাতা ও গ্রহীতাকে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। দলিল কমিশন রেজিস্ট্রির জন্য সাব-রেজিস্ট্রার আদায় করেন লাখ লাখ টাকা। কুলিয়ারচর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সনদপ্রাপ্ত ২৫ জন দলিল লেখক ছাড়াও অনিবন্ধিত আরো ১০-১৫ জন দলিল লেখক রয়েছেন। যারা দলিল লেখকদের নামে দলিল সম্পাদন করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিবন্ধিত দলিল লেখক, তার সহকারী ও সহযোগীদের দিয়ে দলিল নিবন্ধন মূল্যের ৪ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ঘুষ হিসেবে দলিলদাতা ও গ্রহীতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকেন। ঘুষের আদায়কৃত অর্থ সাব-রেজিস্ট্রার, তার কর্মচারী ও দালালদের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর নির্ধারিত হারে ভাগ করা হয়। অতিরিক্ত টাকা ছাড়া কোনো একটি দলিল নিবন্ধন হয়েছে এমন উদাহরণ নেই বলে জানান ভুক্তভোগীরা। ভূমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রমে সরকার নির্ধারিত হারে আয়কর ও রেজিস্ট্রেশন ফি পেয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতিটি দলিল রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে দলিলদাতা ও গ্রহীতাকে ঘুষ বাবদ বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জমি বিক্রেতা জানান, জমি বিক্রি করে দলিল রেজিস্ট্রি করতে তাদের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে আয়কর ও ভ্যাটের পাশাপাশি আরো ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়। ঘুষের এ টাকা ছাড়া জমির দলির সম্পাদিত হয় না। টাকা না দিলে দলিল রেজিস্ট্রি করতে সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের লোকজন হয়রানি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক যুবক জানান, তিনি গত এক বছরে ৫০টির মতো দলিল করিয়েছেন। দলিল প্রতি সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অফিস খরচ বাবদ অতিরিক্ত টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, অনেকবার তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, ঝগড়াও করেছি অফিস খরচ নিয়ে। কিন্তু কোনো উপায় মেলেনি। টাকা দিতেই হয়েছে।

অফিস খরচ নামে ঘুষের টাকা ছাড়া দলিল রেজিস্ট্রি হয় না।
এ ব্যাপারে সাব-রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইসলাম অফিস খরচ নামে দলিলপ্রতি অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, এখানে সরকারি ফির বাইরে কোনো ধরনের অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় না।
একপর্যায়ে এই সাব-রেজিস্ট্রার বলেন, দলিলপ্রতি অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বিভিন্ন খরচ বাবদ নেয়ার বিধান আছে। আমরা সেই টাকাই নিয়ে থাকি। এর বাইরে আর কোনো টাকা নেই না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়