ঢাকা সেনানিবাসে এনআইডি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন

আগের সংবাদ

যশোর বোর্ডের হিসাব থেকে আড়াই কোটি টাকা উত্তোলন : জালিয়াতির অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

পরের সংবাদ

নিজের বাড়ির পূজা প্রসঙ্গে সুদীপা : ‘দশমীতে গঙ্গার ইলিশ খাইয়ে মাকে বিদায় জানানো হয়’

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের বাড়িতে মা দুর্গার তিন মতে পূজা হয়। পঞ্চমী থেকে সপ্তমীতে নবপত্রিকা প্রবেশ পর্যন্ত বৈষ্ণব মতে পূজা হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, সপ্তমীতে দেবাদিদেব মহাদেব এক দিনের জন্য শ্বশুরবাড়ি আসেন। তাই ওই দিন পূজার রীতি বদলে হয় শৈব মতে। সন্ধিপূজার বলি হওয়ার পর থেকে তন্ত্র মতে পূজা হয়। আমাদের পূজার এই বিশেষ রীতির নাম ত্রিধারা। যা সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ি ছাড়া এই চট্টোপাধ্যায় বাড়িতেই মানা হয়। অনেক নিয়ম আমাদের বাড়ির পূজায়। ভোগের কথাই ধরুন। পূজায় একেক দিন একেক রকম চালের ভোগ দেয়া হয় মাকে। অগ্নিদেবের পরিবার বাংলাদেশের ঢাকার। তাই আমাদের দেবীপূজায় ঢাকা থেকে চিনিগুঁড়া চাল আর গাওয়া ঘি আসে। ষষ্ঠী বা সপ্তমীতে গোবিন্দভোগ চাল দিয়ে ভোগ রান্না হয়। অষ্টমীতে মা খান চিনিগুঁড়া চালের অন্ন। নবমীতে ভোগ তৈরি হয় তুলাইপাঞ্জি চাল দিয়ে। দশমীতে দেবী পান্তা খান দশকাঠি সেদ্ধ চাল দিয়ে। সঙ্গে থাকে ইলিশ ভাজা, কচুর শাক, শাপলার টক। নবমীতে মহাভোগ দেয়া হয়। ৭-৮ রকমের মাছ, নিরামিষ মাংস, সুক্তো, পায়েস থাকে এ দিনের মেন্যুতে। অষ্টমীতে লুচি, মিষ্টি ভোগ হয়। পূজার ক’টা দিন মাকে কোনো ছানার মিষ্টি দেয়া হয় না। ক্ষীরের মিষ্টি ছাড়া মা খান না। পরিবারের ছেলে-মেয়েরা কাপড়ে মুখ বেঁধে, দুর্গা নাম জপতে জপতে মায়ের জন্য রান্না করেন। এই সময় ইশারায় কথা বলি সবাই। তবে পায়েস এবং ভোগ ধরে দেয়ার কাজ প্রধানত বাড়ির ছেলেরাই করে থাকেন। মাছ খাওয়া হয় নবমী, দশমীতে। নবমীতে পদ্মার ইলিশ ভোগ দেয়া হয়। দশমীতে গঙ্গার ইলিশ মাছ খাইয়ে মাকে বিদায় জানানো হয়। তার পর আমরা আবার ইলিশ ছুঁই সরস্বতী পূজায়। আমাদের মায়ের সাজও দেখার মতো। ষষ্ঠীতে মাকে আপেল দিয়ে তৈরি ফলের মালা পরানো হয়, যা থাকে দশমী পর্যন্ত। একটা ফলও নষ্ট হয় না! দশমীর দিন মালা থেকে ফল খুলে হরির লুটের মতো ছুড়ে দেয়া হয়। যে যতগুলো ফল লুফতে পারবেন, তার তত কর্মফল দূর হয়। কারণ, মা আমাদের কাছে ফলহারিণী। সপ্তমীতে দেয়া হয় রজনীগন্ধার মালা। অষ্টমীর সকালে মায়ের জন্য বরাদ্দ টাটকা লাল গোলাপের মালা। সন্ধিপূজার সময় জুঁই, বেলপাতা আর অপরাজিতার মালা পরেন মা। নবমীতে মা সাজেন শিউলি ফুলের মালায়। প্রতি বছর এই মালা জোগাড় করতে কালঘাম ছুটে যায় আমাদের। দশমীতে সমস্ত গহনা খুলে ফুলের সাজে সেজে ওঠেন দেবী। মা আসেন বেনারসি পরে। যাওয়ার সময় ওই শাড়ির উপরেই একটি চওড়া লাল পাড়ের শাড়ি জড়িয়ে দেয়া হয়। এক বার বরণের সময় প্রদীপ থেকে আগুন ধরে গিয়েছিল মায়ের শাড়িতে। তার পর থেকে শাড়ি বদলে মাকে বিদায় জানানোর রীতি চালু হয়েছে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে। পাশাপাশি প্রতি বছর একটি করে নতুন গহনা তৈরি করা হয়। এ বছর মায়ের ইচ্ছে, বড় নথ পরবেন। আমাদের মায়ের গহনা কিন্তু মেশিনে তৈরি হয় না বা কেনা হয় না। আমরা বায়না দিই। কারিগর হাতে গড়ে দেন। তাই এর খাটনি এবং ঝক্কি দুইই বেশি। এমনিতে মায়ের নাকে আছে বাংলাদেশের কমল হিরে। এ ছাড়া, বুকজুড়ে থাকে রুপোর অহেন বর্ম। আমাদের মা যুদ্ধের সাজে থাকেন বলে এই বিশেষ অলঙ্কারে সাজেন তিনি। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সীতাহার আছে। আছে ভিক্টোরীয় আমলে তৈরি জড়োয়ার ময়ূর কণ্ঠহার। পাশাপাশি, সবাই প্রতি বছর কিছু না কিছু অলঙ্কার মাকে উপহার হিসেবে দেন। দেবীর বাহন সিংহও সোনার মুকুটে সাজে! আর মায়ের হাতে কালসর্প, ঢাল থাকে না। বদলে থাকে রুপোর পদ্ম। মা ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে এভাবেই শান্তির বার্তাও দেন। চার দিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মায়ের সেবাতেই কেটে যায়। নিজেরা তাই খুব সাজগোজের সময় পাই না। রান্নায় ব্যস্ত থাকতে হয় বলে নরম শাড়ি, হালকা গহনা, নথ- এগুলোই বেছে নিই। ছেলেদের ধুতি, জোড় বাধ্যতামূলক। আমাদের মাকে নিয়ে অনেক অলৌকিক ঘটনাও আছে। এক বছর এক সাংবাদিক চিত্রগ্রাহককে নিয়ে পূজায় এসেছিলেন। সাংবাদিক কথা বলছেন আমার সঙ্গে। চিত্রগ্রাহক দালানে বসে আছেন। তার আগেই জোর গলায় জানিয়েছেন, তিনি ঠাকুর-দেবতা মানেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মত বদল! আমাকে ডেকে জানালেন, মাকে তিনি নড়তে দেখেছেন। এখনো প্রতি বছর প্রতিদিন মায়ের মুখের আদল বদলে যায়। আগের দিন যে মুখ দেখে আমরা শুতে যাই, পরের দিন সেই মুখ আর দেখতে পাই না। কিছু না কিছু বদল আসবেই। সত্য-মিথ্যা প্রমাণের জন্য ছবি তুলে পরখ করে দেখেছি। ক্যামেরাতেও সেই পরিবর্তন স্পষ্ট। তবে এক বছরের কথা না বললেই নয়। প্রতি বছর দশমীর বরণের পরে মায়ের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে অগ্নিদেব জোড় হাতে মাকে পরের বছরের আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় দেন। বলেন, ‘‘আবার এসো মা।’’ এক বছর এই নিমন্ত্রণ জানাতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। সে বছর কেউ কিছুতেই দেবী প্রতিমা নাড়াতে পারেননি! শেষে আমার স্বামী হাত জোড় করে জানু পেতে মায়ের সামনে বসে আমন্ত্রণ জানাতেই নড়ে ওঠে কাঠামো। হ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়