বিজিএমইএ সভাপতি : বন্ধ মিল চালু হলে ফেব্রিক্সের চাহিদা মেটানো সম্ভব

আগের সংবাদ

খাদ্য নিরাপত্তাই প্রধান চ্যালেঞ্জ : সরকারি হিসাব মতে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবুও চালসহ খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়

পরের সংবাদ

সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী পানি সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে বিশ্বে প্রতিদিন ৫ বছরের কম বয়সি প্রায় ১৪০০ শিশুর মৃত্যু ঘটছে। অন্য পরিসংখ্যান বলছে, এ সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার হবে। তার মানে শিশুরা পানি সংকটের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। সুপেয় পানি প্রাপ্তির সুযোগ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘ পানি অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হলেও এখনো এ অধিকার থেকে বঞ্চিত ৭৬ কোটিরও বেশি মানুষ। তাই সুপেয় পানির অধিকার রক্ষা করা আজ জরুরি। না হলে সংকটাপন্ন এলাকাগুলো আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা বলছে, পাইপলাইনের পানির ৮০ ভাগেই ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। পুকুরের পানিতেও একই মাত্রায় এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ৩৮ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতেও এই ক্ষতিকর অণুজীবের অস্তিত্ব মিলেছে। পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহের জন্য ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করা হয়। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আর্সেনিক দূষণ আক্রান্ত মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। অগ্রগতি সত্ত্বেও ১ কোটি ৯৪ লাখ মানুষ এখনো সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে থাকা আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। এছাড়া পানিতে ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরাইড ও লৌহ দূষণের কারণেও খাওয়ার পানির মান খারাপ থাকে।
বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ পানির উৎসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি মাত্রায় ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি পাওয়া যায়। স্বল্প শিক্ষিত নগরবাসী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশুদ্ধ বা সুপেয় পানির অভাব এখানে ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। পৃথিবীতে যত মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার চেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে। পানিবাহিত রোগের প্রভাবে মৃত্যুর পরিমাণ এখনো বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করে হাজারো মানুষ। এদের অধিকাংশই আবার শিশু। ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পানিতে থাকা আর্সেনিক ও জীবাণুর কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসডিজির নতুন এ দুটি সূচক অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে এখন এই দিকগুলোতে নজর দিতে হবে। সুপেয় পানির সুযোগবঞ্চিত জনসংখ্যার দিক দিয়ে আমাদের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। সিরিয়া ও ইরাকের মতো দেশগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়াসহ খরার কারণে অঞ্চলগুলোতে খাবার ও কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। উপকূলীয় এলাকায় পলিমাটির আধিক্য ও গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অঞ্চলগুলোতে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শুষ্ক মৌসুমে খরা, অনাবৃষ্টি ও বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে পুকুর ও খাল শুকিয়ে যাওয়ায় চলতি বছরে দেশের বেশির ভাগ এলাকার মানুষ সুপেয় পানির চরম কষ্টে পড়েন।
আর ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে যোগ হবে আরো ২০০ কোটি মানুষ। বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে চাহিদা বাড়ছে তাতে আশঙ্কা করা যায়, বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার বিপরীতে মিঠা পানির প্রাপ্তি যথেষ্ট নয়। আমাদের দেশে দুর্গম ও পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ এলাকা এবং শহরের বস্তি ও নিম্ন আয়ের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের আওতায় আনতে সরকারের পাশাপাশি ইউনিলিভার বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ, ‘প্রবাহ’, ওয়াটার এইডসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজ করে যাচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে সারাদেশে ‘প্রবাহ’-র ১১০টি প্লান্টের মাধ্যমে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে ৫ লাখ ৬০ হাজার লিটারেরও বেশি, যা দিয়ে নিশ্চিত হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের প্রতিদিনের নিরাপদ খাবার পানি। এসডিজি-৩ ও ৬ পূরণে সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রয়োজন এ ধরনের বেসরকারি উদ্যোগও। টিউবওয়েলের পানি আর্সেনিকমুক্ত রাখার লক্ষ্যে গত দুই দশকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু একে পর্যাপ্ত বলা যাবে না। টিউবওয়েলের পানি আর্সেনিকমুক্ত করতে আরো কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন জরুরি হয়ে পড়েছে। একইভাবে নদী, খাল, পুকুরসহ পানির সব উৎসকে নিরাপদ করতে নতুন করে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি নিরাপদ পানি ব্যবহারে সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে সচেতন করতে হবে। মোটকথা, কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে সরকারকে সবার জন্য সুরক্ষিত সুপেয় পানি ও সুরক্ষিত পয়োব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ও জোগান নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা সাজানো উচিত। বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশ বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আনন্যা মানাসুহা
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়