বিজিএমইএ সভাপতি : বন্ধ মিল চালু হলে ফেব্রিক্সের চাহিদা মেটানো সম্ভব

আগের সংবাদ

খাদ্য নিরাপত্তাই প্রধান চ্যালেঞ্জ : সরকারি হিসাব মতে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবুও চালসহ খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়

পরের সংবাদ

বিশ্ব ডিম দিবস আজ : দেশেই প্রতিদিন পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে ডিম উৎপাদন বেড়েছে। আমিষের চাহিদা পূরণে একসময় পিছিয়ে থাকলেও এখন অনেকটা স্বনির্ভর বাংলাদেশ। ডিম উৎপাদনেও স্বাবলম্বী। চাহিদা পূরণে যতটা প্রয়োজন ঠিক ততটাই ডিম উৎপাদনে সক্ষম দেশের খামারিরা। দেশে প্রতিদিন মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের প্রায় পাঁচ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। পৃথক হিসাবে কেবল মুরগির ডিম উৎপাদিত হয় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে ২০৫৭ দশমিক ৬৪ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে, যা ২০১৯-২০ এ ছিল ১৭৩৬ কোটি পিস। এক বছরের ব্যবধানে ৩২১ কোটি পিস ডিম বেশি উৎপাদন হয়েছে। অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের মাথাপিছু ডিমের গড় প্রাপ্যতা বেড়ে ১২১টিতে উন্নীত হয়েছে। যা আগে ছিল ১০৪টিতে।
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) তথ্য বলছে, একজন সুস্থ মানুষের বছরে গড়ে ১০৪টি ডিম খাওয়া উচিত। এই বাস্তবতায় আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস। দিবসটি উদযাপনে এবারের সেøাগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রতিদিন ডিম খাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই।’
ডিম উৎপাদকরা বলছেন, আমিষের চাহিদা পূরণে ডিমের চাহিদা অপরিসীম। সম্ভাবনাময় এই খাতটি নানামুখী সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। মুরগি পালনের পর ডিম উৎপাদনে ব্যয় অত্যধিক হলেও পর্যাপ্ত দাম মিলছে না। মুরগির খাবারের মূল্য ক্রমবর্ধমান, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে উচ্চ দাম, রোগ-বালাইয়ে দেদার মুরগি মরলেও ইন্স্যুরেন্স বা বিমা না থাকায় খামারিরা পথে বসেন। এতে করে নতুন করে কেউ আর এই ব্যবসায় পা বাড়াচ্ছেন না। বরং বড় মূলধনের ব্যবসায়ীরা মুরগি চাষ বাদ দিয়ে অন্যদিকে ঝুঁকছেন।
তাদের মতে, বড়রা লোকসানে পড়ে এই ব্যবসা ছাড়লেও নিজস্ব জায়গার উপর ছোট পরিসরে গড়া খামারিরা কোনোমতে টিকে রয়েছেন। দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা পালন করছে। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ না নিলে তারাও ঝরে পড়বেন। ডিম থেকে আমিষের চাহিদা পূরণে সংকট দেখা দেবে। স্বয়ংসম্পূর্ণ এই খাতটি আবারো অন্ধকারে ডুববে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলছেন, ক্রমবর্ধমান মানুষের চাহিদা পূরণে মুরগির নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন চলছে, যাতে বেশি পরিমাণ

ডিম উৎপাদিত হয়। সাধারণত কোনো মুরগি বছরে ৫০ থেকে ৬০টি ডিম দিত। কিন্তু উদ্ভাবিত নতুন জাতের মুরগি বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দিচ্ছে, যা দেশে ডিম উৎপাদনে সাড়া জাগিয়েছে। আরো কীভাবে ডিম উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে গবেষণা চলছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে ডিমের বাণিজ্যিক উৎপাদন দৈনিক প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ পিস। সেই হিসাবে এক বছরে দেশে ডিম উৎপাদিত হয় ১ হাজার ৩৮৭ কোটি পিস। বছর বছর ডিমের এই উৎপাদন বাড়ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গত ১১ বছরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ক্রমাগতভাবে ডিম উৎপাদন বাড়ছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন ছিল ৪৬৯ কোটি পিস। ১১ বছরের ব্যবধানে এই উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণের বেশি। অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০০৯-১০ সালে ডিম উৎপাদন হয় ৫৭৪ কোটি পিস, ২০১০-২০১১ সালে ৬০৭ কোটি পিস, ২০১১-১২ সালে ৭৩০ কোটি পিস, ২০১২-১৩ সালে ৭৬১ কোটি পিস, ২০১৩-১৪ সালে ১০১৬ কোটি পিস, ২০১৪-১৫ সালে ১০৯৯ কোটি পিস, ২০১৫-১৬ সালে ১১৯১ কোটি পিস, ২০১৬-১৭ সালে ১৪৯৩ কোটি পিস ও ২০১৭-১৮ সালে ১৫৫২ কোটি পিস। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন হয়েছে এক হাজার ৭১১ কোটি পিস। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডিম উৎপাদন হয়েছে এক হাজার ৭৩৬ কোটি পিস। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০৫৭ কোটি ৬৪ লাখ পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে ৩২১ কোটি পিস ডিম বেশি উৎপাদন হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, মাথাপিছু চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে ডিম উৎপাদন হচ্ছে পোল্ট্রি খাতে। এক বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের মাথাপিছু ডিমের গড় প্রাপ্যতা বেড়ে ১২১টিতে উন্নীত হয়েছে। যা আগে ছিল ১০৪টিতে।
বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার এসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, দেশের খামারিরা চাহিদা অনুযায়ী ডিম উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী যত ডিম প্রয়োজন সবই উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু এই খাতটি নানা সংকটে ভুগছে। বিদ্যুতের বাড়তি দাম, মুরগির খাবারের দামও বেশি। ডিমপাড়া বাচ্চার দাম বাড়িয়েছে হ্যাচারি মালিকরা, যা এই খাতের সংকটকে আরো বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, এগ প্রডিউসার এসোসিয়েশনভুক্ত খামার ছিল এক হাজার কিন্তু এখন ১০০ থেকে দুই শতে এসে ঠেকেছে। ব্যবসায় টিকতে না পেরে অনেক খামার বন্ধ করে দিয়েছে। বড় বড় খামারিরা লোকসান থেকে বাঁচতে অন্যদিকে ঝুঁকছেন। হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ী টিকে রয়েছেন। কিন্তু বিদ্যমান সমস্যা সমাধান না করলে তাদের টিকে থাকাও কষ্টসাধ্য হবে।’
কর্মসূচি : বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টানে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়