বিজিএমইএ সভাপতি : বন্ধ মিল চালু হলে ফেব্রিক্সের চাহিদা মেটানো সম্ভব

আগের সংবাদ

খাদ্য নিরাপত্তাই প্রধান চ্যালেঞ্জ : সরকারি হিসাব মতে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবুও চালসহ খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়

পরের সংবাদ

আহমদ কবির’র অপ্রকাশিত লেখা হরিণের গোশত

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইত্যাদি। ছেলে বুঝে নিলেন আজকের দিনে অপরাধ একটা হয়েছে, মাকে বোঝাবে কী করে, তার ধারে কাছেই তো যাওয়া যাচ্ছে না। অগত্যা চাচির শরণাপন্ন হলেন, চাচি আবার তার শাশুড়িও। বললেন, চাচি, মা তো বেজায় ক্ষেপে আছে, আপনি একটা বিহিত করুন। চাচি মায়ের কাছে গিয়ে বললেন, বুজান, এতগুলো হরিণের গোশত ফেলে দেয়া ঠিক হবে কি? রেখে দিন, কাজে লাগবে, তাছাড়া হরিণের পেটের বাচ্চার গোশত অসুখে-বিসুখেও লাগে। কিন্তু এসব কথায় মায়ের রাগের চিড়ে ভিজল না, মায়ের ওই একই কথা- ফেলে দাও সব, শিকারের নামে পোয়াতি হরিণকে মারার মতো নাফরমানি কাজ আমার ঘরে চলবে না। চাচি আর কী করবেন! রাতও হয়ে গেছে; অতগুলো গোশত কাজের মেয়েকে দিয়ে চাচি ঘরে নিয়ে এলেন, একটি কামরায় বড় ডেকচিতে কাঁচা গোশত রেখে দিলেন উপরে বড় ঢাকনা দিয়ে। আগামীকাল একটা হিল্লে করা যাবে। শঙ্কা রাতের মধ্যে মাংস ঠিক থাকবে তো? মা এ বৃত্তান্ত জানতেন না। এসব ডামাডোলের মধ্যে সন্ধ্যার কিছু পরে মেয়ের একটি ফুটফুটে মেয়ে হলো। নাতনির মুখ দেখে মা আনন্দে আত্মহারা, অন্যরাও। মৌলবি জ্যাঠা এসে আজান দিলেন। বাড়ির নানা ঘর থেকে সদ্য প্রসূত ও প্রসূতিকে দেখার জন্য মহিলারা আসতে লাগলেন, কেউ প্রদীপ নিয়ে বা লণ্ঠন হাতে। অনেকটা রাত পর্যন্ত ঘরে কোলাহল। তারপর যে যার ঘরে চলে গেলেন। নাতনিকে পেয়ে ততক্ষণে মায়ের মেজাজ একেবারে খাদে নেমে এসেছে। বড় বললেন, সারাদিন তোর বিশ্রাম হয়নি, এখন নিজের কামরায় গিয়ে ঘুমুগে যা। শারীরিক ও মানসিক অবসাদ ক্লিষ্ট ছেলে ঘুমিয়ে গেলেন।
কিন্তু পরদিন থেকে বেজায় বিপত্তি। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ বেহাই বাড়ি থেকে লোক আসতে লাগল পিল পিল করে। নবজাতিকাকে দেখার জন্য। তাদের বংশের এক নতুন প্রতিনিধি, বেশির ভাগই এসেছেন হেঁটে, মহিলারা গরুর গাড়িতে। তখন রিকশা, বাস কিছুই ছিল না, রাস্তা ছিল কাঁচা। এত কষ্ট করে প্রায় ৭-৮ মাইল ভেঙে এসেছে এতসব মেহমান, কেউ কেউ হয়তো রাতে থাকবেনও, তাদের তো অবশ্যই খাওয়াতে হবে। কিন্তু উপায় কী? তখন গাঁয়ের হাট বসত বিকেলে তাও দু’দিন- রোববার আর বিষুদবার। রোববার চলে গেছে, বিষুদবার দু’দিন পরে। বিষুদবারের হাটেই গরু জবাই করা হতো। ঘরে পালা মুরগি ও কয়েকটা ডিম দিয়ে তো এত মানুষকে আপ্যায়ন করা যাবে না। মা মহা শংকটে পড়লেন। হঠাৎ মায়ের মনে পড়ল হরিণের গোশতের কথা। কিন্তু এ প্রশ্ন তো ছেলেকে-জাকে করা যায় না। গতদিন গোশত নিয়ে তিনি যা করেছেন! তবু উপায়ান্তর না দেখে অনেকটা বিব্রত অবস্থায় ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন হরিণের গোশতগুলো কী করলি? ছেলে সোজা উত্তর দিল, ফেলে দিয়েছি। মায়ের আসার প্রদীপ একেবারে নেভেনি। চাচির কাছে জানতে চাইলেন, গোশতগুলো কোথায় রাখা হয়েছে? চাচিও জানালেন ফেলে দেয়ার কথা। ভেঙে পড়া অসহায় মা অতি বিষণ্ন মুখে ফিরছিলেন নিজের ঘরে, তখন পেছন থেকে মৃদু কণ্ঠে চাচি বললেন, বুজান, গোশতগুলো আছে, আমি রেখে দিয়েছি। মুহূর্তে মায়ের মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। কলকণ্ঠে বললেন, কই সে গোশত। সেই গোশত দিয়ে মা বেহাই বাড়ির সত্তর আশি জন অতিথির আতিথ্য সম্পন্ন করলেন। কিছুমাত্র অসুবিধা হয়নি। ক্ষুব্ধ বড় ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে অতি প্রসন্ন হাস্যোজ্বল মুখে বললেন, ভাগ্যিস তুই শিকার করে এতগুলো গোশত এনেছিলি! না হলে তো আমি একেবারে বেইজ্জত হয়ে যেতাম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়