বিজিএমইএ সভাপতি : বন্ধ মিল চালু হলে ফেব্রিক্সের চাহিদা মেটানো সম্ভব

আগের সংবাদ

খাদ্য নিরাপত্তাই প্রধান চ্যালেঞ্জ : সরকারি হিসাব মতে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবুও চালসহ খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়

পরের সংবাদ

আমদানির চাপে ঊর্ধ্বমুখী ডলার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেজুঁতি : বেড়েই চলেছে ডলারের দাম। এতে প্রতিদিনই মান হারাচ্ছে টাকা। গত বুধবারই ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ১০ পয়সা। এর মানে এক দিনের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ১০ পয়সা বেড়ে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ৫৭ পয়সায় উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ৮৫ টাকা ৫৭ পয়সা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হলেও দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
এদিকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে খোলাবাজারে চড়েছে ডলারের দাম। খোলাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে এখন খরচ হচ্ছে ৮৯ টাকা। সাধারণত ডলারের দাম বাড়লে রেমিটার ও রপ্তানিকারকরা লাভবান হন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হন আমদানিকারক ও সাধারণ মানুষ। কারণ ডলারের দাম বাড়লে পণ্যমূল্যও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি আয়ে ধীর গতি ও রেমিট্যান্সপ্রবাহের নি¤œমুখিতার মধ্যে আমদানিতে গতি আসায় অনেক ব্যাংকে দেখা দিয়েছে ডলারের সংকট। ফলে কিছুদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ডলারের দাম।
করোনা মহামারির মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। গত ৫ আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। এখন প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ৫ আগস্ট আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। গত বুধবার বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা ৫৭ পয়সায়। এর মানে দুই মাসেরও কম সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকা ৭৭ পয়সা দর হারিয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ায় এখন আমদানি বেশ বাড়ছে। আবার বিলম্বে পরিশোধ শর্তে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়েছিল, সেগুলোর এখন পেমেন্ট করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এতে দামও বাড়ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলার রিজার্ভ রয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের কাছে ডলার কিনতে পারে কারণ আমাদের ডলারের ঘাটতি নেই।
সংকট সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি : বাজার স্থিতিশীল করতে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে ১ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে ৩২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর গত আগস্ট মাসের পুরো সময়ে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের ১ জালাই থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে ৭৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। মহামারির শুরুর দিকে প্রবাস আয়ে যে চাঙ্গাভাব ছিল, চলতি বছরের জুন থেকে তা নি¤œমুখী প্রবণতায় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত আগস্ট মাসে প্রবাসীরা ১৮১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত বছরের আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবার আগস্টে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। একইভাবে রপ্তানি আয়েও চলছে ধীর গতি। গত জুলাই-আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে দশমিক ৩১ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে আমদানি ব্যয়ের গতি বেশ চাঙ্গা। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাই মাসে আমদানি বাবদ ৪২২ কোটি ডলার খরচ হয়। চলতি বছরের জুলাইয়ে খরচের এই পরিমাণ দাঁড়ায় ৫১৪ কোটি ডলার। এই হিসাবে আমদানি খরচ বেড়েছে ২১.৬০ শতাংশ।
রপ্তানিকারকরা খুশি : টাকা অবমূল্যায়িত হওয়ায় খুশি দেশের রপ্তানিকারকরা। কারণ এতে আগের তুলনায় বেশি আয় হচ্ছে তাদের। কিন্তু এই রপ্তানিকারকদের একটি অংশ যেখানে আমদানিকারক, সেই দিক থেকে তারা আবার নাখোশও। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বাংলাদেশে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হচ্ছে। আবার প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। তাই টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ায় খুব বেশি লাভবান হতে পারছেন না এসব ব্যবসায়ী।
এ ব্যাপারে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকা আরো খানিকটা অবমূল্যায়ন হলে করোনার এ কঠিন সময়ে রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হতো। তিনি বলেন, আমরা আমদানি-রপ্তানি দুটিই করি ডলারে। রপ্তানির পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে একটু একটু করে ডলারের দাম বাড়লে আমাদের উপকার হয়। প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, তুরস্ক ও ভারত ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার অনেক অবমূল্যায়ন ঘটিয়েছে বলে উদাহরণ দেন ফারুক।
এলসি খোলার হিড়িক ব্যবসায়ীদের : পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার হিড়িক পড়েছে। গত আগস্টে ৭১৮ কোটি ৪০ লাখ (৭ দশমিক ১৮ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৬১ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে এত বিশাল অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা খরচ দেখা যায়নি। এলসি সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-আগস্ট সময়ে এলসি খুলতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়েছে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে; সেটা ৪৪৭ কোটি ৪৮ লাখ (৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন) ডলার।
আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৫০ শতাংশ বেশি। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। সেসব দেশের মানুষ আগের মতো পণ্য কেনা শুরু করেছে। দেশের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে আসছে। মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। সে চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন উদ্যোমে উৎপাদন কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সে কারণেই সব ধরনের পণ্য আমদানিই বেড়ে গেছে, বাড়ছে এলসি খোলার পরিমাণ। এছাড়া বিশ্ববাজারে, জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ অন্য সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলসি খুলতে বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে বলে জানান তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়