যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ডে এক বাংলাদেশি কিশোরীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা : সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মেরিনা ১০ পৌরসভায়ও প্রার্থী চূড়ান্ত

পরের সংবাদ

স্বাধীন জীবনযাপনের জন্যই গৃহত্যাগী হয় সেই ৩ ছাত্রী

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাসা থেকে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও শিক্ষা সনদ নিয়ে গৃহত্যাগ করা রাজধানীর পল্লবীর কলেজ পড়–য়া সেই ৩ ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। উদ্ধারকৃতরা হলো- মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী কাজী দিলখুশ জান্নাত নিসা, পল্লবী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা ও দুয়ারীপাড়া কলেজের শিক্ষার্থী স্নেহা আক্তার। গতকাল বুধবার ভোরে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। তারা কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফিরছিল।
র‌্যাব বলছে, অতিরিক্ত পারিবারিক বিধিনিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে যায়। পরে স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার থেকে সমুদ্রপথে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করে গৃহত্যাগ করে তারা।
র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার ওই তিন ছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর নিশার বড় বোন এড. কাজী রওশন দিল আফরোজ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার ছায়া তদন্তে ওই ৩ ছাত্রীর অবস্থান কক্সবাজার বলে নিশ্চিত হয় র‌্যাব। পরে র‌্যাবের একটি টিম তাদের উদ্ধারে কক্সবাজারে গেলে তারা মঙ্গলবার রাতে একটি বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ওই ৩ ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ধীরে ধীরে অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। দিন দিন লেখাপড়ার প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তারা। যার ফলশ্রæতিতে তাদের পরিবার পড়াশোনার জন্য ও ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিত। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধিনিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ে। পরিবারের এসব আচরণ তাদের কাছে অত্যাচার মনে হতো। তারা মূলত উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন পছন্দ করত। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি বিশেষ করে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।
তারা বেশি বেশি জাপানি সিনেমা-সিরিয়াল, সাংস্কৃতিক প্রোগাম দেখে জাপানি ভাষা কিছুটা আয়ত্ত করে নেয়। এরপর দেশ ছেড়ে স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কারণ জাপানি সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার, স্বাধীনতা, দত্তক হওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধ নেই।
এরই ধারাবাহিকতায় ২ মাস আগে বন্ধু তরিকুলের সঙ্গে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে হাফসা চৌধুরী নামে এক নারীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। হাফসার সঙ্গে পরিকল্পনা করে কক্সবাজার রুট দিয়ে নৌপথে জাপান যাওয়ার উদ্দেশেই ৩ বান্ধবী গৃহত্যাগ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তারা বাসা থেকে বের হওয়ার পর মোবাইল ভেঙে ফেলে। পরে হাফসার পাঠানো দুজন লোকের মাধ্যমে তারা একটি মাইক্রোবাসে কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছায়। চট্টগ্রামের ট্রেন না পেয়ে তারা বাসযোগে কুমিল্লা ময়নামতি যায়। পথিমধ্যে তারা নতুন মোবাইল

কেনাসহ পশ্চিমা বেশভূষা ধারণ করে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে বাসে কক্সবাজার যায় তারা।
গত শুক্রবার থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা কলাতলীতে একটি হোটেলে অবস্থান করে। এ সময় হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ এবং শফিক নামের দুই লোক তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নেয়। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে আবার নিজেদের বাসায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।
র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক আরো জানান, এই ৩ ছাত্রীর গৃহত্যাগে সহায়তাকারী হাফসা চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, সে নারী পাচারকারী দলের সদস্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়