যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ডে এক বাংলাদেশি কিশোরীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা : সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মেরিনা ১০ পৌরসভায়ও প্রার্থী চূড়ান্ত

পরের সংবাদ

রপ্তানি আইনের খসড়া চূড়ান্ত : পণ্য জালিয়াতিতে কঠোর হচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রপ্তানিপণ্যে জালিয়াতি, মানহীন পণ্য পাঠানোর ঘটনায় ভোগান্তির শিকার হতে হয় সব রপ্তানিকারককে। কখনো কখনো পড়তে হয় নিষেধাজ্ঞার মুখে। এ কারণে একটি নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। বিদেশে মানহীন পণ্য রপ্তানির চালান ধরা পড়লে কিংবা রপ্তানির ক্ষেত্রে সনদ জালিয়াতির ঘটনা ঘটলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ভাবমূর্তি। তবে এসব ক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আইন দেশে নেই।
অথচ এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কড়াকড়ির কারণে ভোগান্তির শিকার হতে হয় ওই খাতের অন্য সব রপ্তানিকারককে। কখনো কখনো পড়তে হয় নিষেধাজ্ঞার মুখেও। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সংশ্লিষ্ট দেশ বা অঞ্চলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ধারাবাহিকতা। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে চায় সরকার। তাছাড়া স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে রপ্তানি বাণিজ্যের মানোন্নয়নের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই বাংলাদেশের সামনে। আবার মানসম্মত দেশের পণ্য রপ্তানি হলে এর কারণে বিদেশে চাহিদা ও সুনাম দুটোই বাড়ে বাংলাদেশের। সে তাগিদ থেকেও রপ্তানিপণ্য ও সেবার মান উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এর অংশ হিসেবে দেশে রপ্তানি পণ্য ও সেবার মান নিয়ন্ত্রণে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘রপ্তানি (মান নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষণ ও সনদ প্রদান) আইন-২০২১। খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ আইনের বিধান অমান্য করে দেশ থেকে মানহীন পণ্য বিদেশে রপ্তানির চেষ্টা করছে বলে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, অথবা কর্তৃপক্ষের রপ্তানি সনদ জালিয়াতি করে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে, তাহলে এর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারাদণ্ড দেয়া হবে। একই সঙ্গে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে গুনতে হবে জরিমানাও। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধ আদালতে প্রমাণ হলে প্রথমবার ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের পাশাপাশি এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। দ্বিতীয়বার হলে অর্থদণ্ড হবে তিন লাখ টাকা এবং তার সঙ্গে ভোগ করতে হবে দুই বছরের কারাদণ্ড। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল সরকারি সংস্থার কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর যদি এ অপরাধের সঙ্গে যোগসাজশ থাকে, তারও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও দুই বছরের কারাদণ্ড হবে।
আবার কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত বা ল্যাবে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কেউ অভিযুক্ত রপ্তানিকারকের কাছে আগাম ফাঁস করে দেয়, তাহলে তাকে ছয় মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। পাশাপাশি গুনতে হবে ২৫ হাজার টাকার অর্থদণ্ডও। এছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে এ ধরনের অপরাধ কোনো কোম্পানি কর্তৃক সংঘটিত হলে অপরাধ সংঘটনের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানির পরিচালক, সচিব, ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হবেন। তবে এ আইন নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চান না বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
বর্তমানে দেশে রপ্তানি খাতের বিকাশ, বৈদেশিক বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো বা ইপিবি। অনুসরণ করা হচ্ছে প্রতি তিন বছর পরপর প্রণীত রপ্তানি উন্নয়ন নীতিমালার দিকনির্দেশনা। এর বাইরে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো খুব বেশি কাজ করতে পারে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর বাইরেও রপ্তানিকারকদের সরকারের বিভিন্ন সংস্থার শরণাপন্ন হতে হয়। এক সংস্থার সঙ্গে আরেক সংস্থার সমন্বয় দুরূহ হয়ে পড়ে। এতে রপ্তানিকারকের সময় এবং খরচ দুটোই যেমন বেশি লাগে, তেমনি একই কারণে পণ্যের মান রক্ষার ক্ষেত্রেও দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর দুর্বলতা দেখা যায়। সরাসরি শাস্তির আওতায় আনা যায় না। সব দিক বিবেচনা করেই আইন এবং কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার দিকে এগুচ্ছে সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রমতে, আইনের এ খসড়ার ওপর এখন চলবে অংশীজনদের মতামত গ্রহণ, আংশিক সংযোজন, বিয়োজন এবং ভেটিংয়ের কাজ। এরপর তা মন্ত্রিসভায় উত্থাপন হবে। বাংলাদেশ রপ্তানি সনদ প্রদান কর্তৃপক্ষ গঠন হলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মকাণ্ডে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। বরং এতে রপ্তানি খাত একটি শৃঙ্খলায় আসবে এবং পণ্য মান নিয়ন্ত্রণ ও জালিয়াতি প্রতিরোধ সহজ হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
রপ্তানি (মান নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষণ ও সনদ প্রদান) আইন-২০২১ এর খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে রপ্তানিকৃত সব পণ্যের জন্য এক বা একাধিক স্ট্যান্ডার্ড স্পেসিফিকেশন নির্ধারণ করা হবে। এর পাশাপাশি গঠন করা হবে ‘বাংলাদেশ এক্সপোর্ট সার্টিফিকেশন অথরিটি’, যা রপ্তানি পরিদর্শন, মান নিয়ন্ত্রণ ও সনদ প্রদান কাউন্সিল নামে পরিচিতি পাবে। তবে এ তিনটি উইংই গঠিত হবে পৃথকভাবে এবং এদের কার্যক্রম পরিচালনা হবে স্বতন্ত্রভাবে, যেখানে রপ্তানি পণ্য ও সেবার চালান পরিদর্শন করবে শুধু ‘রপ্তানি পরিদর্শন বোর্ড।’ এদের পরিদর্শন প্রতিবেদন ও সংগৃহীত রপ্তানি চালানের নমুনা পাঠানোর ভিত্তিতে ল্যাবরেটরিতে মান নিশ্চিত করবে ‘মান নিয়ন্ত্রণ বোর্ড’। সব শেষে এ ২টি বোর্ড বা সংস্থার সুপারিশের ভিত্তিতে রপ্তানিকারকের অনুকূলে রপ্তানি সনদ প্রদান করবে এক্সপোর্ট সার্টিফিকেশন অথরিটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়