যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ডে এক বাংলাদেশি কিশোরীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা : সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মেরিনা ১০ পৌরসভায়ও প্রার্থী চূড়ান্ত

পরের সংবাদ

ভক্তের আবাহনে মর্ত্যরে পথে দেবী : দিন গননা শুরু

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : “আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জির;/ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা;/প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।/আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে ওঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।/তাই আনন্দিতা শ্যামলী মাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন।/আজ চিৎ?-শক্তিরূপিণী বিশ্বজননীর শারদ স্মৃতিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা।” …ভরাট কণ্ঠে চেনা সুরে প্রতিটি মণ্ডপ ও মন্দিরে গতকাল বুধবার ভোর থেকে দেবী দুর্গার আবাহনে উচ্চারিত হয়েছে এই কথামালা।
ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী পূজার্চনার পাশাপাশি চলেছে দুর্গা সপ্তশতী থেকে গৃহীত দেবী চণ্ডীর স্তোত্র বা চণ্ডীপাঠ। শিল্পীরা একের পর এক পরিবেশন করেছেন বাংলা ভক্তিগীতি, ধ্রæপদী সংগীত। দেবীবন্দনার পাশাপাশি মহিষাসুর বধের কাহিনী নৃত্যের মাধ্যমেও ফুটিয়ে তুলেছেন তারা।
গতকাল বুধবার মহালয়ার দিন ঢাকের বাদ্যি, কাঁসর ঘণ্টা, মঙ্গল শাঁখ ও উলু ধ্বনিতে মুখরিত ছিল মন্দির প্রাঙ্গণ। শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই ‘মহালয়া’ হিসেবে পরিচিত। হৃদয়ের ভক্তি আর করোনা মুক্ত স্বাভাবিক বিশ্বের আকুতি জানিয়ে মহামায়া দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আবাহন জানিয়েছেন ভক্তরা।
মহালয়ার মধ্য দিয়ে পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের

শুরু হয়েছে। ভোরবেলা থেকেই অনেকে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ বিসর্জন করেছেন। সনাতন ধর্মে বলা হয়, পিতৃপক্ষে প্রয়াত আত্মারা স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আসেন। তাই এদিন মৃত আত্মীয়-পরিজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন অনেকে। পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশে জল-তিল-অন্ন উৎসর্গ করেও তর্পণ করা হয়।
পুরাণমতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এই পুজার আয়োজন করায় দেবীর এ পুজোকে বাসন্তী পুজাও বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে শ্রী রামচন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে হিন্দুমতে অকালবোধনও বলা হয়। ধর্মমতে, এই দিনে দেব-দেবীকুল দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন।
মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের দিন গোনার পালা। বছর শেষে দেবী দুর্গার আগমনে চারদিকে কেবল আনন্দ আয়োজন। মহালয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১১ অক্টোবর বোধনের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর ১৫ অক্টোবর হবে দেবী বিসর্জন।
সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবীতে) আসবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। এর ফল হচ্ছে ছত্রভঙ্গ। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। চলতি বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে ।
গতকাল ভোরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে উদযাপিত হয় মহালয়া। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ¦ালন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। সঙ্গে ছিলেন হাইকমিশনারের স্ত্রী সংগীতা দোরাইস্বামী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা। পূজা উদযাপন পরিষদ ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত ভক্তদের সঙ্গে মতবিনিময় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন হাইকমিশনার। এ ছাড়া গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রাজধানীর বনানী মাঠে মহালয়ার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ধর্মের মূল কথা হলো মানুষের কল্যাণ। ধর্মের মূল বাণী বুকে ধারণ করে যদি আমরা অনুশীলন করি তাহলে পৃথিবী অনেক শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু পৃথিবীতে আমরা দেখতে পাই ধর্মের অনেক অপব্যাখ্যা করা হয়। অপব্যাখ্যা করে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার অপচেষ্টা হয়। সেই কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় হানাহানির সৃষ্টি হয়। কিন্তু কোনো ধর্মই এই হানাহানির কথা বলেনি।
পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনার কারণে গতবারের মতো এবারো হচ্ছে না বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা। সংশ্লিষ্ট মণ্ডপ বা মন্দির কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে সুবিধাজনক সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা নেবেন। তবে ওই দিন শুক্রবার হওয়ায় বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত জুমার নামাজের সময়ে প্রতিমা বিসর্জনের বিষয়টি পরিহার করতে হবে।
এদিকে গতকাল জনস্বার্থে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের সব পূজামণ্ডপে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরের প্রবেশপথে থাকবে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। প্রয়োজনে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা রাখতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়