যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ডে এক বাংলাদেশি কিশোরীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা : সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মেরিনা ১০ পৌরসভায়ও প্রার্থী চূড়ান্ত

পরের সংবাদ

বন্ধু, কী খবর বল?

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘দেখা হবে বন্ধু কারণে বা অকারণে, দেখা হবে বন্ধু চাপা কোনো অভিমানে, দেখা হবে বন্ধু সাময়িক বৈরিতায়…।’ বৈশ্বিক মহামারি করোনার বৈরি সময় পেরিয়ে টানা ৫৬৫ দিনের সুদীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষ। অবশেষে ফের একসঙ্গে ফেরা। সেই বটতলা, সেই টিএসসি, সেই মধুর ক্যান্টিন, সেই হাকিম চত্বর, সেই অপরাজেয় বাংলা। পুরনো হল, পুরনো গেট, পুরনো বিছানা, পুরনো খাট, পুরনো বারান্দা, পুরনো পড়ার টেবিল। প্রাণের স্পন্দনে ফিরেছে প্রাণ। মাঝখানে করোনাকালীন বিছিন্ন সময়ে জমে থাকা হাজারো কথামালারা ডানা মেলেছে। ‘আবার দেখাই যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয়’ সুর যেন বাজছে সবার হৃদয়ে। কেউবা চিৎকার করে গাইছেন, ‘পুরানো সেই দিনের কথা, ভুলবি কি রে হায়…।’
আঠারো মাস পর গত মঙ্গলবার অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হল। করোনা ভ্যাকসিনের অন্তত এক ডোজ নেয়ার শর্তে হলে থাকার অনুমতি পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আগমনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে ক্যাম্পাসে। ফের কলরবে মুখরিত হলগুলো। উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আপ্লæত হয়েছেন শিক্ষকরাও।
দেড় বছর পর ফের আগের আমেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল বুধবার, ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা বেজে ৪০ মিনিট। শামসুন নাহার হল সংলগ্ন সড়কদ্বীপে গল্প করছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের চার বন্ধু। বললেন, ডিজিটাল এই যুগে ম্যাসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিওকলে কথা হতো, দেখা হতো। কিন্তু সরাসরি দেখার মতো আবেগ কাজ করে না। মনে হয় প্রাণ ফিরে পেয়েছি।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাশ

কার্যক্রম ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯ মার্চ অন্যদের মতোই নিজ গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে চলে যান শামসুন নাহার হলের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অতসী কর্মকার। হল খুলে দেয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। বললেন, এখন ক্লাশ শুরু হবে। আবার পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে উঠব। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। একসঙ্গে লাইব্রেরি ওয়ার্ক হবে। গ্রুপ ওয়ার্ক হবে।
করোনাকালে ডাস ছিল নীরব, নিস্তব্ধ। গতকাল কিছুটা গতি ফিরেছে। শিক্ষার্থীদের পদচারণা বেড়েছে। বেড়েছে চা-সিঙ্গারা-কফি বিক্রির ধুম। টিএসরি ফুলকন্যাদের মুখে হাসির ঝিলিক। করোনাকালে ফুল বিক্রি ছিল না বললেই চলে। এখন আবার তারা ফুল বিক্রি করবে। ফুলের গন্ধের মতো তাদের জীবনেও সৌরভ ছড়াবে ফুল বিক্রির অল্প ক’টি টাকা।
এদিকে গত কয়েক দিনে জমে ওঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। গতকালও শিক্ষার্থীদের কর্মচাঞ্চল্যে ভরপুর ছিল লাইব্রেরি। অন্যদিকে প্রাণের আড্ডা ছিল ক্যাম্পাসের সর্বত্র। কলাভবনের বটতলা, মধুর ক্যান্টিন, ডাকসু চত্বর, রেজিস্ট্রার ভবন, হাকিম চত্বর- সর্বত্র ছিল প্রাণের স্পন্দন। কলাভবনের সামনে দুপুর ২টায় একদল শিক্ষার্থী ব্যস্ত সেল্ফিবাজিতে। মুখে কথার ফুলঝুরি। কথারা যেন শেষ হতে চাইছে না। চলছে খুনশুটি। কেউ কেউ আবার গাইলেন, ‘বন্ধু, কি খবর বল? কতদিন দেখা হয় না।’ সঙ্গে অন্যরাও গলা মিলালেন। যেন বন্ধুত্বের মিলন উৎসব। কোনো তাড়া নেই। শুধু গল্প আর গল্প। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে কলাভবনের বটতলায় বন্ধুত্বের সাক্ষী হয়ে।
এদিকে প্রাণচাঞ্চল্যে ফিরতে শুরু করেছে টিএসসিতেও। বেড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। ক্লাশ শুরু হলেই সংগঠনগুলোও কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এতদিন যে স্থবিরতা ছিল, তার অবসান ঘটেছে। যত দ্রুত সম্ভব সব শিক্ষার্থীকে আমরা হলে নিয়ে আসতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ভ্যাকসিন নেয়ার হার বাড়ানো এবং করোনা কমার ওপর সশরীরে ক্লাস করার বিষয়টি নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়