যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ডে এক বাংলাদেশি কিশোরীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা : সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মেরিনা ১০ পৌরসভায়ও প্রার্থী চূড়ান্ত

পরের সংবাদ

কথিত পীরদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীসহ সারাদেশে কথিত পীরদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ ও প্রশাসন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অনেক জায়গার ভণ্ড পীরের আস্তানা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নামধারী অনেক পীরের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, দখলদারি ও সাধারণ লোকজনকে নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তারা অসহায় সরলমনা সাধারণ ধর্মভীরু লোকজনের মনে ‘স্বপ্ন জাগিয়ে’ প্রতারণার মাধ্যমে টাকা ও সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছে। কথিত ওরসের নামে লোকজনের কাছ থেকে গরু, মহিষ, ছাগল, উট, দুম্বা নিয়ে বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ পুরনো।
পীরদের কথিত কেরামতি ও অপকর্ম প্রসঙ্গে পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এদের পুরোটাই ভণ্ডামি। লোকজনের সরলতার সুযোগে ‘মুশকিল আসানের’ কথা বলে তারা তাদের একরকম ফাঁদে ফেলে টাকা হাতাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন থানায় এসব পীরের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ধোঁকা দিয়ে টাকা হাতানো ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো কেরামতি নেই। তাবিজ, রতœ, পাথর ও পানিপড়া দেয়ার নামে তারা ভণ্ডামি করছে। সিলেট রেঞ্জের একজন কর্মকর্তা জানান, নিজেকে পীর দাবি করে অনেকে আস্তানা গেড়ে বসে। তাদের ব্যাপারে তথ্য পেলেই গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে।
জানা গেছে, রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর মো. দিল্লুর রহমানের

বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তার অপকর্মে হাইকোর্ট পর্যন্ত হতবাক হয়েছেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একের পর এক অভিযোগ তুলে উচ্চ আদালতে গেছেন ভুক্তভোগীরা। এই পীরের বিরুদ্ধে অন্যের সম্পত্তি দখলে গায়েবি মামলা দিয়ে হেনস্তা করার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রকৌশলীর সন্তান দিল্লুর রহমান বিভিন্ন ব্যক্তির সম্পত্তি দখলের জন্য ‘মামলাবাজ সিন্ডিকেট’ গড়ে তোলেন ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে। এই সিন্ডিকেটের মামলা থেকে আপন ভাইও রেহাই পাননি।
পীর দিল্লুরের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উগ্রপন্থায় মদদ দেয়ার অভিযোগও পুরনো। তার আয়ের সঙ্গে সংগতিবিহীন সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দিল্লুরকাণ্ড ফাঁস হওয়ার পর পীরদের অপকীর্তি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। যদিও দেশে মূলত কতজন পীর রয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নামধারী পীররা কথিত আস্তানা বানিয়ে মুরিদ নামে অসহায় মানুষের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ হাতাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা সরলমনা মানুষকে মনের আশা পূরণের স্বপ্ন জাগিয়ে প্রতারণা করছে।
পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তার দেয়া তথ্যমতে, আস্তানা গেড়ে বসা ভণ্ডপীরদের ব্যাপারে নিয়মিত গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। অনেক পীরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। দেওয়ানবাগী, সায়েদাবাদী, কুতুববাগ, জৈনপুরী, আটরশী, চরমোনাই, ফুরফুরা, শর্শিনা, মাইজভাণ্ডারী, মোসাবিয়াসহ অনেক পীরের বিরাট ভক্ত বলয় রয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রমতে, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের সাতারা গ্রামে সবদের আলী চিশতী নামে এক ভণ্ডপীরের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সরকারি খাস সম্পত্তি দখল করে গড়ে ওঠা এই ভণ্ডপীরের আস্তানাটি ধ্বংস হওয়ায় স্বস্তি ফিরে স্থানীয়দের মাঝে। অভিযানকালে কথিত পীরের আস্তানা থেকে কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ, কনডম, যৌনশক্তি বর্ধক বেশ কিছু ট্যাবলেট, দা, গাঁজা সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি, নিষিদ্ধ ফেনসিডিলের খালি বোতল, তবলা, একতারা, কিছু বই পুস্তক ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযানের খবর পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ায় ওই ভণ্ডপীরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের হাঁপানিয়া গ্রামে কথিত পীর আবদুল হালিমের আস্তানা ভাঙচুর করেছে গ্রামবাসী। এক নারীভক্তকে নিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হলে হালিমকে ঝাড়ুপেটা করে আস্তানা থেকে বের করে দেন তারা। সেখান থেকে ২০০ গজ দূরে নিজের বসতঘরে হালিম কিছু মাটি ফেলে মালেকের মাজার প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানেও তিনি চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও অপকর্ম চালিয়ে যান। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তার আস্তানায় হামলা চালায়।
সাভারের আশুলিয়ায় মা-মেয়েসহ একই পরিবারের তিন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ভণ্ডপীর মনির হোসেনকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। ভণ্ডপীর মনির হোসেন আশুলিয়ার কুরগাঁও এলাকার মৃত আ. রহিমের ছেলে।
অন্যদিকে হেলিকপ্টার হুজুর হিসেবে খ্যাত এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী ওরফে জৈনপুরী পীরের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি দখলের মামলা দায়ের করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় এস্টেট অফিসের কানুনগো মো. ইকবাল মাহমুদ বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেন। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগরে ঢোল-ঢগর বাজিয়ে নেচেগেয়ে অনুসারীদের নিয়ে কিশোরের লাশ দাফনসহ ইসলামবিরোধী নানা অপকর্মের হোতা কথিত ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীম ওরফে শামীম রেজা ও তার অনুসারীদের বিরেুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিসি-এসপি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গণস্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়