যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ডে এক বাংলাদেশি কিশোরীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা : সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মেরিনা ১০ পৌরসভায়ও প্রার্থী চূড়ান্ত

পরের সংবাদ

আবরার হত্যার দুই বছর > বিচার শেষ না হওয়ায় আক্ষেপ পরিবারের : রায় নভেম্বরেই আশা রাষ্ট্রপক্ষের

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্রে করে সহপাঠীদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন দিতে হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। বুয়েটের হলে আবরারের ওপর কয়েক ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে চালানো নির্যাতনের সেই ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করে সারাদেশে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে। আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তোপের মুখে বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের দুই বছরেও শেষ হয়নি বিচার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার জন্য আদালত বন্ধ থাকায় এখনো আবরার হত্যার বিচার শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে, চলতি বছরের নভেম্বরে রায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছে আবরারের পরিবার। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে নিহত আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ বলেন, করোনার কারণে দুই দফায় আদালত বন্ধ ছিল। এখন আবার বিচারক করোনায় আক্রান্ত। যাই হোক, এখন যেন বিচার কাজে বিলম্ব না হয় সেই প্রত্যাশা করছি। তিনি আরো বলেন, ছেলে মারা গেল দুই বছর হলো। তাও যেন কষ্ট কোনোভাবেই কমছে না। যত দিন যাচ্ছে, ছেলের কথা তত বেশি মনে পড়ছে। আমরা আশা করি, ছেলে হত্যা মামলাটির বিচার কার্যক্রম যেন দ্রুত শেষ হয় এবং রায়ে আসামিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।
জানা গেছে, আবরার হত্যা মামলায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলায় মোট ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে মামলাটি। এই আদালতেই গত ১৪ মার্চ মামলার ২২ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছিলেন। মামলায়

মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা বলেন, মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য গত বছর আমাদের আদালতে পাঠানো হয়। আমরাও সেভাবে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিচার কার্যক্রমে দেরি হয়ে যায়। মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। আগামী ২০ অক্টোবর মামলাটির দিন ধার্য আছে। আমরা সেদিন রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তি তুলে ধরব। এরপর আসামিপক্ষ যুক্তি তুলে ধরবেন। আশা করছি, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বিচার শেষ হবে এবং আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, বর্তমানে আবরার হত্যা মামলটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বিচারক অসুস্থ হয়ে ছুটিতে থাকায় লম্বা সময় পর দিন পড়েছে পরবর্তী শুনানির জন্য। আমরাও চাই, মামলাটির দ্রুত বিচার কাজ শেষ হোক। আসামিদের মধ্যে যারা দোষী শুধু যেন তারা সাজা পায়। আর যারা নির্দোষ তারা যেন মুক্তি পায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নির্যাতন করে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এ ঘটনার পরের দিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ৬ জনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় এখনো পলাতক রয়েছেন ৩ জন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়