যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ডে এক বাংলাদেশি কিশোরীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা : সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মেরিনা ১০ পৌরসভায়ও প্রার্থী চূড়ান্ত

পরের সংবাদ

অন্তহীন জটিলতা ও ষড়যন্ত্র এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবির্ভূত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কী ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। স¤প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।
এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ‘বিদ্রোহী’ বাঙালি সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার ও জওয়ানদের কাছে পরিষ্কার হয়ে আসে যে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীকে প্রতিরোধ ও হটিয়ে দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সৈন্যবল, অস্ত্রশস্ত্র ও লজিস্টিক সাপোর্ট তাদের নেই। পরিকল্পনাবিহীন ভীতসন্ত্রস্ত বাত্যাতাড়িত হয়ে বাঙালি সশস্ত্র বাহিনী ক্রমশই ভারত সীমান্তের দিকে দ্রুত ভিড় জমাতে থাকে। সীমান্ত অঞ্চলের সর্বত্রই একই অবস্থা লক্ষণীয় ও দৃষ্টিগোচর হতে থাকে।
কর্নেল ওসমানী প্রধান সেনাপতি- জীবন বাজি রাখা :
৪ এপ্রিল। বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত, ক্লান্ত ও নুয়ে পড়া সামরিক অধিনায়করা তেলিয়াপাড়ার হেড কোয়ার্টারে সমবেত হন। কর্নেল ওসমানী, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, লে. কর্নেল সালাউদ্দিন মো. রাজা, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী, লে. কর্নেল আব্দুর রবসহ কতিপয় বাঙালি সামরিক নেতৃত্ব ঐদিন কর্নেল ওসমানীকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের

ক্ষেত্রে কার্যকর ছিল- বঙ্গবন্ধু কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলনের সময় তাকেই সেনা-অফিসার সংগঠিত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বাঙালি সামরিক অফিসারদের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে কোনোরূপ জটিলতা না থাকলেও ভেতরে ভেতরে কোনো কোনো অফিসারের মধ্যে এ বিষয়ে স্পষ্টতই দ্বিমত ছিল।
মেজর শফিউল্লাহ মনে করেছিলেন যেহেতু এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল তার দখলে এবং তার অধীনস্ত বাহিনী অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করেছে সেজন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত হওয়া উচিত। খালেদ মোশাররফ ও অত্যন্ত সাহসী, পরিকল্পিতভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধ পরিচালনায় পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন। সে জন্য যুদ্ধের প্রধানতম দায়িত্ব তার ওপর অর্পিত না হলেও সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার একটি বিশিষ্ট ভূমিকা থাকবে, এটা তার মনে স্বাভাবিক আকাক্সক্ষা হিসেবেই কাজ করে থাকবে। অন্যদিকে গোয়েন্দা কার্যক্রমে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ মেজর জিয়াউর রহমানের ‘উচ্চাভিলাষী কণ্ঠ’ চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে ইতোপূর্বেই প্রচারিত হয়ে পড়েছিল। জিয়াউর রহমান সশস্ত্র প্রতিরোধে প্রথমে অংশ গ্রহণ না করে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বিপ্লবী সরকারের প্রধান বলে নিজেকে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ভুল বুঝতে পেরে মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। জিয়াউর রহমানের প্রাথমিক অসংলগ্ন ঘোষণা ছিল ঐতিহাসিক ভ্রান্তি। কেননা বাংলাদেশের যুদ্ধ সামরিক বিদ্রোহ নয় বরং এটা ছিল প্রথম থেকেই স্বাধীনতা যুদ্ধ। তেলিয়াপাড়া সামরিক নেতাদের বৈঠকে উপস্থিত হয়ে জিয়াউর রহমান অতি সহজেই উপলব্ধি করেন যে সামরিক বাহিনীর সেনাপতিরূপে বেতার ঘোষণা তার জন্য শুভ প্রতিক্রিয়া বয়ে আনেনি। জিয়াউর রহমান অত্যন্ত স্পষ্টভাবে দেখতে পেলেন, তার পক্ষে সশস্ত্র বাহিনী পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ পদটি দখল করা সম্ভব হবে না।
ইতোমধ্যেই মেজর সফিউল্লাহ-খালেদ মোশাররফ সমঝোতমূলক ঐক্য সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। মেজর সফিউল্লাহ ছিলেন খালেদ মোশাররফের কাছাকাছি লোক। পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে চাকরিরত অবস্থায় জিয়াউর রহমানের বাঙালিদের এড়িয়ে চলা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সম্পর্কে অনিশ্চয়তায় রাজনীতি সচেতন খালেদ মোশারফের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের সশস্ত্র নেতৃত্বদানে জিয়াউর রহমান ছিল অগ্রহণযোগ্য। সফিউল্লাহ-খালেদের সমঝোতায় আহত জিয়াউর রহমানের ঐ অবস্থায় কর্নেল ওসমানীকে যুদ্ধ পরিচালনায় সামরিক নেতৃত্ব প্রদানের বিষয়টি সম্মতিজ্ঞাপন ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না। শফিউল্লাহর চেয়েও কর্নেল ওসমানীই ছিলেন সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
অন্যদিকে খালেদ মোশাররফও ময়মনসিংহ-সিলেটের এক বিরাট ভূখণ্ড শত্রæমুক্ত করে নিজেকে সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে প্রতিরোধ যুদ্ধকালীন সময়ে ঘোষণা করে বসেন।
আগামীকাল প্রকাশিত হবে
‘ব্রিগেড গঠন : চাপ এবং
রণকৌশলে মারাত্মক ভুল’
‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এ ছাড়া সংগ্রহ করা যাবে নযড়ৎবৎশধমড়লঢ়ৎড়শধংযধহ.পড়স থেকেও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়