বাংলাদেশকে জমি লিজ দিতে চায় আফ্রিকা

আগের সংবাদ

যে কারণে সাংসদদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শেষ হয় না

পরের সংবাদ

হাইল হাওরকে গিলে খাচ্ছে মাছের খামার ও বাড়িঘর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিকুল চক্রবর্তী, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে : সদর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা নিয়ে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে ছিল হাইল হাওরের অবস্থান। বর্তমানে ব্যক্তিগত জমির সঙ্গে সরকারি বিল ও ভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে শত শত মাছের খামার। দাম কম এবং হাওরে চলাচলের রাস্তা ভালো হওয়ায় অনেকেই হাওরের করছেন বাড়িঘর। এতে ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম হাইল হাওরের বিলগুলো। হাওর সংকুচিত হওয়ার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলে স্থানীয় পরিবেশবিদদের ধারণা গত ৩০/৪০ বছরে হাইল হাওরের অর্ধেকই শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে গেছে।
একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণামতে, এই হাওরে ছোট বড় মিলিয়ে ১৩১টি বিলের মধ্যে এখন ৪০ ভাগই নেই। প্রতিনিয়ত বিলগুলো ঘিরে গড়ে উঠছে মাছের খামার, আর চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বিল। অন্যদিকে বেকার হচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। আর শহরের ময়লা আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে হাওর।
সরজমিনে দেখা যায়, হাইল হাওরের চইড়া বিল, বাষট্টি (ছোট ছোট ৬২টি বিল নিয়ে গঠিত) বিলের কয়েকটি, কুঞ্জ বেরী, ধলি ডোবা, ঘোড়ামারা ও কাকমারাসহ অনেক বিলের কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ কাগজেকলমে বিল আছে ইজারাও হয়।
শ্রীমঙ্গল উত্তর উত্তরশূর এলাকার মো. আব্দুল তোয়াহিদ আকাশ জানান, ৬২ বিল ইজারা নিয়েছি। সেখানে গিয়ে দেখি ফিশারি। দখলদারদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আসে মামলা মকদ্দমার ভয়। তিনি জানান, এক সঙ্গে ৬২টি বিল নিয়ে ছিল একটি বিল। যার মধ্যে এখন আছে ৭টি বিলের অস্তিত্ব, বাকিগুলো ফিশারি হয়ে গেছে। পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার বাসিন্দা ৩নং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনার মিয়া জানান, লাভের আশায় সরকারকে রাজস্ব দিয়ে তাদের সমিতির নামে চইড়া বিল লিজ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিলে যেতে পারেননি।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারাজুল কবির জানান, হাইল হাওরের আয়তন ১৪ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পড়েছে ১০ হাজার হেক্টর। আর রেকর্ড অনুযায়ী বিলের সংখ্যা ৯৯টি। এর ভিতরে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আছে ৫৯টি। যার মধ্যে ২০ একরে নিচে ৩৯টি এবং ২০টি ২০ একরের উপরে। যা থেকে উপজেলার মাছের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। এর থেকে বছরে ৩৩শ টন মাছ উৎপাদন হয়।
পরিবেশকর্মী প্রীতম দাশ ও অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী বলেন, এই হাওরের বিলে প্রায় শত প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। বর্তামানে এর প্রায় ৩০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তিনি জানান, এই হওরে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার এক মাত্র নদী গোফলা। যার সঙ্গে এসে মিশেছে অর্ধশত ছড়া। অনেকে সেই ছড়াগুলোও দখল করে নিচ্ছে। এতে পানি প্রবাহ পরিবর্তন হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়ছেন হাওরের বোরো চাষিরাও।
এ ব্যাপারে বালিশিরা পাহাড় রক্ষা সোসাইটির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহমদ জানান, জলাভূমি তৈরি করে ফিশারি তৈরি করা রাঘব বোয়ালদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে এবং হাওরে জমির শ্রেণি পরিবর্তন শতভাগ বন্ধ করতে হবে। হাইল হাওরের চারপাশে প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক জেলে পরিবারের বসবাস। ইতোমধ্যে অর্ধেকের জীবিকা পরিবর্তন হয়েছে।
হাইল হাওরে নিয়ে কাজ করা সিএনআর এসএর সাইট অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, তাদের অনুসন্ধানে হাইল হাওরে ১৩১টি বিলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০১টি বিল ইজারারও রেকর্ড পেয়েছেন। ৩০টি বিলের কোনো হদিস নেই।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, দখলদারদের উচ্ছেদ করে তা আবার বিলে রূপান্তরিত করা হবে। যারা সরকারি জমি যারা দখল করেছন বা করবেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, মৌলভীবাজার একটি বৈচিত্র্যময় জেলা। যেখারে রয়েছে হাওর, পাহাড়, সমতল ভূমি, নদী ও প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র্য। এ জেলার বৈশিষ্ট্যই হলো এর প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। আর এটি যদি নষ্ট হয়ে যায় তবে এ জেলা তার ঐতিহ্য হারাবে। তাই এ বিষয়ে জেলাবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। বিলগুলো খননের বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরে আনবেন বলেও জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়