বাংলাদেশকে জমি লিজ দিতে চায় আফ্রিকা

আগের সংবাদ

যে কারণে সাংসদদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শেষ হয় না

পরের সংবাদ

মৎস্য অধিদপ্তর নির্বিকার : আলফাডাঙ্গায় চায়না দুয়ারি দিয়ে অবাধে মাছ শিকার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কবীর হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) থেকে : আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ‘চায়না দুয়ারি’ সুতি জাল ও নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে অবাধে চলছে মাছ শিকার। নদী-খাল-বিল ও হাওরে এসব ফাঁদ পেতে ব্যাপক হারে ছোট-বড় মাছ শিকার করছে জেলেরা। গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে নতুন ফাঁদ চায়না দুয়ারি বিভিন্ন জলাশয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের বিলুপ্তির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে জোরালো কোনো ভূমিকা নেই বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লোহার রডের গোলাকার বা চতুর্ভুজ আকৃতির কাঠোমোর চারপাশে ‘চায়না জাল’ দিয়ে ঘিরে এই চায়না দুয়ারি নতুন ফাঁদ তৈরি করা। ক্ষেত্রভেদে ‘চায়না দুয়ারি’ ৫২ হাত আবার ৭০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। এই ফাঁদ দিয়ে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মধুমতি ও বারাশিয়া নদীসহ বিভিন্ন বিল ও হাওরে মাছ শিকার করছে এক শ্রেণির জেলেরা।
স্থানীয়রা জানান, এই ফাঁদ বসালে নদীর পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়, এর জালের ছিদ্র ছোট হওয়ায় ছোট-বড় কোনো মাছ বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বানা ইউনিয়নের বেলবানা গ্রামের মৎস্যজীবী টুকু মোল্যা বলেন, দুয়ারি নদীর তলদেশে বসানো হয়। উভয় দিক থেকে ছুটে চলা যে কোনো মাছ সহজেই এতে আটকা পড়ে। একবার যে কোনো ছোট-বড় মাছ ঢুকলে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার মধুমতি ও বারাশিয়া নদীতে আড়াআড়ি বাঁশের বেড়া দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের মাছ শিকার করছে কিছু স্থানীয় ব্যক্তিরা। প্রশাসনের চোখের সামনে এভাবে নীতির বিরুদ্ধে কাজটি চলে আসছে নিরন্তর। সমাজের এক শ্রেণির দানবের একাই খাব নীতিতে প্রকৃতির ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমন বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মধুমতি নদী থেকে বেরিয়ে আসা এ পানিতে রয়েছে মাছের ডিম ও চারা পোনা।
ক্ষুদ্রাকৃতির কোনো মাছের পক্ষে সম্ভব নয় এ ফাঁদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চলে এলেও প্রশাসনের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। বানা ইউপি সদস্য বাকা কাজী বলেন, নদীতে অবৈধভাবে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দিয়ে মৎস্য শিকার করা হচ্ছে।
বানা ইউনিয়নের রুদ্রবানা গ্রামের ভাক্তার মো. কুবাদ হোসেন বলেন, উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নের নাটুড়িয়া খালে ও বানা খেয়াঘাট হতে মাকড়াইল খেয়াঘাট এলাকায় মধুমতী নদীর উভয় প্রান্ত পর্যন্ত অবৈধভাবে বেশ কয়েকটি বাঁধ দিয়ে চলছে মৎস্য শিকার। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সুতি জাল, কারেন্ট জাল, চায়না জাল দিয়ে অবাধে চলছে মৎস্য নিধন।
উপজেলার শিল্পকলা একাডেমির সদস্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মুজাহিদ ইসলাম নাঈম জানান, বর্তমানে সকল প্রকার মা-মাছ ডিম দিতে শুরু করেছে। দুর্বৃত্তদের অত্যাচারে মধুমতিতে পূর্বের মতো আর মাছ নেই। অবৈধ পাতন জালে রেণু পোনাও রেহাই পাচ্ছে না। আমাদের দেশে মাছের রক্ষণাবেক্ষণ, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে, তাদের কাজ কী?
উপজেলার বানা ইউপি (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান রাজ ইসলাম খোকন বলেন, বাজারের দেশীয় মাছে পোনা দেখে মনটা খারাপ হয়। নিষিদ্ধ এই ফাঁদ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফাঁদ অধিক মূল্যে বিক্রি করছে।
আলফাডাঙ্গা পৌর বাসিন্দা, সংবাদকর্মী এনায়েত হোসেন বলেন, এই বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর পাড়ে সকালে মাছ কিনতে গেলে দেখা যায় দেশীয় সুস্বাদু লিটা মাছের বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাছগুলো এক দেড় মাস পানিতে থাকতে পারলে বেশ বড় হতো। এই ‘চায়না দুয়ারি’ এসে আমাদের দেশীয় মাছের বংশ শেষ করে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একদিন দেশীয় মাছ আমরা সহজে পাব না। এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তর নির্বিকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুমন রায় বলেন, খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘চায়না দুয়ারি’ আমাদের দেশীয় জাতের মাছ ধ্বংস করছে। ব্যাপক হারে এই ফাঁদ ব্যবহার করলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই ফাঁদ প্রতিরোধ করতে এবং জেলেদের নিরুৎসাহিত করতে আমরা জেলার সব উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়