বাংলাদেশকে জমি লিজ দিতে চায় আফ্রিকা

আগের সংবাদ

যে কারণে সাংসদদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শেষ হয় না

পরের সংবাদ

ভারতকে রুখে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে ব্রুজনের শিষ্যদের

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পরশুদিন ভারতকে ১০ জনের দল নিয়েও রুখে দেয় বাংলাদেশ। এ ম্যাচের ফলাফল রূপকথার চেয়ে কম না। প্রথমে গোল হজম করে এরপর লাল কার্ড দেখে বিশ্বনাথ ঘোষ মাঠ ছাড়ার পর মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ হারবে। কিন্তু সেই ম্যাচটিতেই পরে গোল করে ভারতের কাছ থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে এনেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এই ম্যাচটির পর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন বর্তমানে সঠিক পথে আছে বাংলাদেশ। আর এমন একটি ম্যাচ খেলার পর এখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে আছে তারা।
এমন সময়ই আগামীকাল বাংলাদেশ তাদের তৃতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলতে নামবে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে হেরে গেছে। আর তাই তো বাংলাদেশের বিপক্ষেও তারা যে খুব ভালো কিছু করতে পারবে না এটি বলা যায়। এখন বাংলাদেশ যদি তাদের তৃতীয় ম্যাচে মালদ্বীপকে হারিয়ে দিতে পারে তাহলে সাফের টানা চার আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
মালদ্বীপের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটির আগে দুঃসংবাদ পেতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। আর সেটি হলো বাংলাদেশের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচ মাতানো বিশ্বনাথ ঘোষ ও রাকিব হোসেনকে মালদ্বীপের ম্যাচটিতে পাওয়া যাবে না। ভারতের বিপক্ষে ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ সরাসরি লাল কার্ড দেখায় এখন এক ম্যাচের জন্য তাকে বসে থাকতে হবে। অন্যদিকে টানা দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখেছেন মিডফিল্ডার রাকিব হোসেন। ফলে বিশ্বনাথের মতো তিনিও খেলতে পারবেন না।
তবে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করছেন না কোচ অস্কার ব্রুজন। ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষের জায়গায় তার হাতে একাধিক বিকল্প রয়েছে। বিশ্বনাথের জায়গায় রহমত মিয়া, টুটুল হোসেন বাদশা, রিয়াদুল হাসান রাফিকে খেলাতে পারবেন তিনি। তবে দুই হলুদ কার্ড দেখে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়া রাকিব মিডফিল্ডে কার্যকর ছিলেন।
দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা এ দুই খেলোয়াড়কে না পাওয়ার প্রসঙ্গে প্রধান কোচ অস্কার ব্রুজন বলেন, ‘তাদের দুইজন ছাড়াই আমাদের প্রস্তুত হতে হবে মালদ্বীপ ম্যাচের জন্য। সময় আছে আর দুই দিন।’ আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের ফুটবলারদের প্রতিনিয়ত কার্ড দেখা একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়মিত একাদশের দুই ফুটবলারের শূন্যতা পূরণটাও মালদ্বীপের বিপক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এবার খেলছে পাঁচটি দেশ। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। এই পাঁচটি দেশ প্রত্যেকের বিপক্ষে প্রত্যেকে খেলবে। যে দুটি দেশ পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানে থাকবে তারা ফাইনালে খেলবে। বাংলাদেশ গ্রুপপর্বে ইতোমধ্যেই খেলে ফেলেছে দুটি ম্যাচ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে রুখে দেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ফলে দুই ম্যাচেই তারা তুলে নিয়েছে চার পয়েন্ট। বর্তমানে চার পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আছে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে।
সাফের এবারের আসরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সমান দুটি করে ম্যাচ খেলেছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। নেপাল প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় সাফের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপের বিপক্ষে। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা খেলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আর দুই ম্যাচের মধ্যে দুটিতেই জয় তুলে নিয়ে বর্তমানে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানে আছে নেপাল। পরশুদিন বাংলাদেশ যেদিন ভারতের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর ১-১ গোলের ড্র ম্যাচটি খেলে। সেদিনই নেপাল খেলতে নামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। আর এ ম্যাচটিতে তারা শ্রীলঙ্কাকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দেয়। দুই ম্যাচ শেষে এখন ফাইনাল খেলার পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে নেপাল ও বাংলাদেশ। বিশেষ করে নেপাল যেহেতু তাদের প্রথম দুটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতেই জয় তুলে নিয়েছে ফলে তাদের ফাইনালের টিকেট অনেকটাই নিশ্চিত। এখন নিজেদের শেষ দুটি ম্যাচের মধ্যে একটিতে জয় তুলে নিলেই হবে। অবশ্য নেপাল তাদের পরবর্তী দুটি ম্যাচে খেলতে নামবে ভারত ও বাংলাদেশের বিপক্ষে।
ভারত যেহেতু নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ড্র করেছে। এখন ফাইনালের টিকেট পেতে হলে তাদের শেষ তিনটি ম্যাচের মধ্যে সবগুলোতে জয় তুলে নিতে হবে। ভারত তাদের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর যথাক্রমে তারা খেলবে নেপাল ও মালদ্বীপের বিপক্ষে। ফলে ফাইনালে যেতে হলে ভারতকে এখন দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত হারের স্বাদ না পাওয়া বাংলাদেশ তাদের শেষ দুটি ম্যাচে খেলবে মালদ্বীপ ও নেপালের বিপক্ষে।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ অবশ্য জয়ই তুলে নিতে পারত বলে মনে করেন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। এ ব্যপারে গতকাল এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পজিটিভ ফুটবল খেলছি। চেষ্টা করছি সবাই পাসিং ফুটবল খেলার। সবার আত্মবিশ্বাস আছে। এ মুহূর্তে আমরা যেভাবে খেলছি, সামনেও সেভাবে খেলতে চাই।’
‘ভারত অবশ্যই ভালো দল। তারা র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আগের ম্যাচগুলোতে পার্থক্য গড়ে দিচ্ছিল সুনিল ছেত্রি। কিন্তু ওদের বিপক্ষে আমরা অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করেছি। যদি কাজে লাগাতে পারতাম, তাহলে ম্যাচটা আমরা জিততে পারতাম। এখন সামনে মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচ, আমরা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।”
‘ফরোয়ার্ডদের গোল করতে হবে। তবে ডিফেন্ডাররাও গোল করতে পারে। আসল কথা, যে কেউই গোল করলে সেটা দলের জন্য ভালো। সামনে মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলা, ওদের দলে আলি আশফাক, আলি ফাসিরের মতো ফরোয়ার্ড আছে, কিন্তু ওদের রক্ষণভাগ আমাদের চেয়ে ভালো না। যদি আমরা সুযোগ কাজে লাগাতে পারি, তাহলে ম্যাচটা বের করে নিতে পারব।’

‘আমরা শেষ দুইটা ম্যাচ যেভাবে খেলেছি, সেভাবে যদি খেলতে পারি, মাঝমাঠে ভালো করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা ওদের ডিফেন্সকে আতঙ্কে রাখতে পারব।’
এদিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত ড্র করায় দেশটির কোচ একটুও খুশি হতে পারেনি। তিনি বলেছেন ভালো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তার শিষ্যরা পূর্ণ তিন পয়েন্ট তুলে নিতে পারেনি। এ ব্যাপারে ভারতীয় কোচ বলেন, ‘ম্যাচটি ভালোই হয়েছে। বাংলাদেশ ১০ জন ছিল। আমাদের জেতা উচিত ছিল। আমরা ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচে দারুণভাবে ছিলাম। ৭৫ মিনিটের পর আমাদের ফুটবলাররা নার্ভাস ছিল। আমরা নিজেরাই নিজেদের শাস্তি দিয়েছি। ফুটবলাররা কিছু ভুল পাস করছিল। ভুল পাসে তারা নার্ভাস হয়েছিল।’
রেফারি ভারতের ফরোয়ার্ডকে ট্যাকেল করায় বাংলাদেশের ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের পেনাল্টি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা ভারতীয় কোচ এই ম্যাচেও খানিকটা খোঁচা দিলেন, ‘এটি অবশ্যই লাল কার্ড। সে পেছন থেকে ট্যাকেল করেছে। দুটি লাল কার্ড এবং বিশ্বনাথকে তিন দিনের জেলে পাঠানো উচিত।’ কথাটি অবশ্য ভারতীয় কোচ বলেছেন মজা করেই।
এদিকে বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করে। সাফের এ আসরটির আগে বাংলাদেশ টানা চারটি আসর থেকে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে। এখন সবার প্রত্যাশা আগের দিনের কথা ভুলে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়