বাংলাদেশকে জমি লিজ দিতে চায় আফ্রিকা

আগের সংবাদ

যে কারণে সাংসদদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শেষ হয় না

পরের সংবাদ

প্যান্ডোরা পেপারস : শেল কোম্পানি কিভাবে গজায়, বাঁচে ও বাঁচায়?

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : বিশ্বের অতিধনী গোষ্ঠীর একটি বড় অংশ যে দুর্বৃত্ত মানসিকতার, সে সত্যটাই উঠে এসেছে প্যান্ডোরা পেপারসের সর্বশেষ নথি ফাঁসের ঘটনায়। ৯০টি দেশের ব্যবসায়ী, আমলা এবং রাজনীতিকরা বিদেশের নামসর্বস্ব শেল কোম্পানিতে তাদের সম্পদ বিনিয়োগ করেছেন। এটি তারা করেছেন নিজের দেশের বৈধ আয়কর ফাঁকি দেয়ার আশায়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট আইসিআইজি জানায়, বিশ্বের ১১টি দেশের ৬০০ সাংবাদিক কয়েক মাস ধরে কাজ করে ১ কোটি ২০ লাখ গোপন নথি ফাঁস করতে সমর্থ হন।
আইসিআইজির ওয়েবসাইটে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতির ১০ শতাংশ প্রায় করবিহীন অঞ্চলে নিবন্ধিত হাজার হাজার কাগুজে কোম্পানির খাতায় জমা হচ্ছে। পরিণতিতে এসব দেশের সরকার বছরে কম বেশি ৮০,০০০ কোটি ডলার আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকেই প্রশ্ন করেন, কীভাবে গজায় এসব ‘শেল‘ অর্থাৎ খোলসসর্বস্ব কোম্পানি? কীভাবে গোপন থাকে অবৈধ টাকার পাহাড়? পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কর ফাঁকির সব নিরাপদ আস্তানা, যেমন, পানামা, নেদারল্যান্ডস, মাল্টা ও মরিশাস। পাঁচ বছর আগে ‘পানামা পেপারস‘ নামে কর ফাঁকি নিয়ে ফাঁস হওয়া নথিপত্রে দেখা গিয়েছিল যে পানামাভিত্তিক একটি আইন প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে হাজার হাজার শেল কোম্পানি নিবন্ধনের ব্যবস্থা করে দেয়। এক হিসাবে, বিশ্বের ৬০টির মতো দেশ এবং অঞ্চল রয়েছে যেখানে এসব ‘খোলস’ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
বিশ্বের ধনী লোকজনই মূলত এসব ট্যাক্স-হেভেন কাজে লাগান। অনেক মানুষ যারা ব্যাংকের ঋণ ফেরত দিতে চান না, তারাও তাদের টাকা-পয়সা ট্যাক্স হেভেনগুলোতে নেয়ার চেষ্টা করেন। বড় বড় অনেক বহুজাতিক কোম্পানি যারা বিশ্বজুড়ে লেনদেন করে, তারাও কর ফাঁকির জন্য ট্যাক্স হেভেনে ভিন্ন নামে সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলে। নাইকি বা অ্যাপেলের মতো কোম্পানির বিরুদ্ধেও ট্যাক্স হেভেন ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এসব কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক কোনো কর্মী নেই। আইসিআইজির গত বছরের এক রিপোর্টে বলা হয় যে, কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জে একটি ভবনেই ছিল ১৯ হাজার কাগুজে কোম্পানির ঠিকানা।
এসব কোম্পানির নথিপত্রে মূল মালিকদের কোনো নাম ঠিকানা নেই। কিন্তু পর্দার আড়াল থেকে তারাই এগুলোতে বিনিয়োগ করা অর্থ লেনদেন করেন। তারাই কোম্পানির নামে নানা দেশে জমিজমা ঘরবাড়ি কেনেন, শেয়ার বাজারে টাকা খাটান। তাদের সাহায্যের জন্য রয়েছে বহু আইনজীবী বা একাউনটেন্ট। অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানি খোলার খরচ অবিশ্বাস্যরকম কম এবং জটিলতা নেই বললেই চলে। আইসিআইজির রিপোর্ট অনুযায়ী, কোম্পানি খোলা এতই সহজ যে একটি ইমেল বা একটি ফোনকলেই কাজ হয়ে যায়। খরচ এবং কাগজপত্র বা সই-সাবুদের সংখ্যা নির্ভর করে কোথায় কোম্পানি খোলা হচ্ছে এবং কোনো আইনজীবী এই কাজটি করে দিচ্ছেন তার ওপর।
আমেরিকার অতি-ধনীরা কোনো আয়করই প্রায় দেন না। টাকা পাচার নিয়ে লেখা বই সিক্রেসি ওয়ার্ল্ডের লেখক জেক বার্নস্টেইন এক সাক্ষাৎকার মার্কিন দৈনিক বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, অনেক ট্যাক্স হেভেনে এমন আইনও রয়েছে যে কোম্পানি মালিকের নাম পরিচয় প্রকাশ করা যায় না। আপনি ভুয়া পরিচালকও রাখতে পারেন, যারা কিছু পয়সার বিনিময়ে মানুষের কাছে আপনার কোম্পানির মালিক হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে। কিন্তু কেন বন্ধ হচ্ছে না এই প্রতারণা? আইসিআইজির বেন হলম্যান লিখেছেন, বিশ্বের প্রভাবশালী কিছু দেশ এ ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে থাকছে। এমনকি প্রবণতা টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতাও করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্য, যেমন, ডেলাওয়ার, ওয়াইওমিং, নেভাডা, সাউথ ডাকোটাও ট্যাক্স হেভেন হিসাবে পরিচিত। বিদেশ থেকে কে এখানে টাকা এনে কোম্পানি খুললো এবং কোথায় তা খাটাল, তা নিয়ে এসব রাজ্যের তেমন মাথাব্যথা নেই। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব, প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩০ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়