বাংলাদেশকে জমি লিজ দিতে চায় আফ্রিকা

আগের সংবাদ

যে কারণে সাংসদদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শেষ হয় না

পরের সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে হিমাগারে মজুত ৫০০ টন আলু : দরপতনে চরম বিপাকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে : আলুর দরপতনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকসহ ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। গেল বছরে লাভ বেশি পাওয়ায় এ বছর কৃষকরা বেশি জমিতে আলু আবাদ করেন। ফলনও পান বাম্পার। কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও হোটেলসহ খাবারের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় বাজারে আলুর বিক্রি কমে যায়। ফলে চাহিদা না থাকায় হিমাগারগুলোতে সংরক্ষিত বিপুল পরিমাণ আলু অবিক্রীতই রয়ে গেছে। এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের একমাত্র হিমাগার এগ্রো মহানন্দা কোল্ড স্টোরেজে প্রায় ৩০০ কৃষক ও ব্যবসায়ীর ৫০০ টন আলু মজুদ রাখা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে লাভের আশায় আলু মজুত করে এখন বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা। গত বছর করোনা ও বন্যায় অসহায় মানুষের পাশে সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি অনেক মানুষ এগিয়ে আসায় ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে আলুই ছিল অন্যতম সামগ্রী। ফলে সে বছর আলুতে প্রচুর লাভের মুখ দেখেন আলু ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরে বেশি দামের আশায় অনেকে আলু হিমাগারে মজুদ করেন। কিন্তু বাজারে ভালো দাম না থাকায় এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।
এ বছর হিমাগার খরচসহ প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৮-২০ টাকা। আর বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০ থেকে সাড়ে ১০ টাকায়। এতে প্রতি কেজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৭ থেকে ১০ টাকা। তাই হিমাগারগুলোতে পাইকারি ব্যবসায়ী না যাওয়ায় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে হিমাগারগুলোতে আলু পচে নষ্টও হচ্ছে ব্যাপক হারে।
সদর উপজেলার আঙ্গারিয়াপাড়া মহল্লার আলু চাষি শামিম আহমেদ জানান, প্রতি বছর প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেন তিনি। এখন প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে এ বছর প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো লোকসান গুনতে হবে তার। লোকসান ঠেকাতে এবং কৃষক বাঁচাতে সরকারকে আলু বিদেশে রপ্তানি করার দাবি জানান তিনি। ব্যবসায়ী মহব্বত আলী বলেন, চলতি বছর হিমাগার খরচসহ বস্তা প্রতি খরচ হয়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। বিক্রি করতে গিয়ে বস্তা প্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা করে দাম পাচ্ছি। কেজি প্রতি যা ১০ থেকে ১১ টাকা করে। ২০ লাখ টাকার আলুতে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা পাচ্ছি। আলু নিয়ে পথে বসে গেছি।
শতাধিক শ্রমিকের সর্দার মো. সাকিম বলেন, আলু বের না হওয়ার কারণে শ্রমিকদের নিয়ে বসে বসে আমাদের দিন কাটছে। দাম না পেয়ে মালিক যেমন পথে বসেছে, তেমনি কাজ না পেয়ে আমাদের অবস্থাও একই। অন্যান্য বছর এই সময়ে হিমাগার থেকে দৈনিক ৮০০ থেকে ১০০০ বস্তা আলু বের করা হয়। কিন্তু এখন দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ বস্তা করে আলু বের হচ্ছে। এসব বিষয়ে নিয়ে এগ্রো মহানন্দা কোল্ড স্টোরেজের সহকারী ব্যবস্থাপক গোলাম জাকারিয়া জানান, চলতি বছরে জেলার একমাত্র হিমাগারে ৫৫০০ টন আলু সংরক্ষণ করেছি। দাম না পেয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না। প্রতি কেজি আলুতে হিমাগার খরচসহ সাড়ে ১৯ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বাজারে আলুর দাম ১০ থেকে ১১ টাকা কেজি। এ কারণে কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার কর্তৃপক্ষ সবাই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা অস্বাভাবিক হারে লাভ করেছেন। ফলে চলতি বছরে জেলায় আলু চাষের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া অন্যবারের মতো এবার বৃষ্টি ও বন্যায় বিভিন্ন শাকসবজিও নষ্ট হয়নি। এর ফলে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি ও শাকসবজির বাম্পার ফলনে আলুর দাম কমেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়