বাংলাদেশকে জমি লিজ দিতে চায় আফ্রিকা

আগের সংবাদ

যে কারণে সাংসদদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শেষ হয় না

পরের সংবাদ

কালাইয়ে আমনখেতে পোকার আক্রমণ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মামুনুর রশীদ, কালাই (জয়পুরহাট) থেকে : কালাইয়ে আমন ধানের খেতে বাদামি গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ করেছে। কৃষকরা তা দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমন ধান রোপণের মৌসুমে পানির সমস্যা হলেও কৃষকরা সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে জমিতে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালাই পৌরসভাসহ উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ইউপিতে এবার চলতি আমন মৌসুমে ১২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ে অর্জিত হয়েছে।
এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান রোপণ হয়েছে ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে এবং উফশী জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে ১১ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে অত্র উপজেলায় উচ্চ ফলন শীল (উফশী) স্থানীয় জাতের বিনা-৭, ব্রি ধান-৩৪, ৩৯, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৬, ৬২, ৭১, ৭২, ৮৭ এবং ভারতীয় উফশী জাতের ধান রঞ্জিত, মামুন, মাসুরি, পটলপাইরি, স্বর্ণা, জিরাশাইল, কাটারিভোগ এবং হাইব্রিড-ধানি গোল্ড, বিনাধান-১৭, এ জেড-৭০০৬ ধানের চাষ করা হয়েছে।
অধিক ফলন ও আগাম আলু লাগানোর আশায় আগাম জাতের বিনাধান-১৭ ও ব্রি ধান-৮৭ রোপণে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।
পাকুরিয়া উত্তর খারিজা গ্রামের কৃষক মোত্তালিব ফিরোজ ও হাতিয়র গ্রামের কৃষক মাহমুদুল হাসান ও মফিদুল ইসলাম বলেন, আগাম জাতের বিনাধান-১৭ ও ব্রি-ধান-৮৭ লাগালে ফলনও পাওয়া যায় এবং অতিদ্রুত ওই জমিতে আলু লাগানো যায়, তাই আমরাসহ অনেকেই ওই ধান লাগিয়েছি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, পৌরসভার আঁওড়া মহল্লার কৃষক আলমগীর হোসেন মাস্টার ও শহিদুল ইসলাম আকন্দ, সড়াইল মহল্লার কৃষক আব্দুল আজিজ, পুনট ইউপির পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান ও আব্দুল গফুর মণ্ডল, পাঁচগ্রামের কৃষক রাইহান মৃধা, পাঁচপাইকা গ্রামের কৃষক কোরবান আলী, নান্দাইল দিঘী গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন তালুকদার, জিন্দারপুর ইউপির কাদিরপুর গ্রামের কৃষক আজিজুল হক ও আবেদা বেগম, হাজিপুর গ্রামের কৃষক আলাউল ইসলাম মণ্ডল, আহম্মেদাবাদ ইউপির বোড়াই গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী মাস্টার সকলেই বলেন অধিক ফলনের আশায় আমরা আমন ধানের পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছি। গত বছরের তুলনায় অন্যান্য রোগবালাই কম হলেও বাদামি গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ ব্যাপক, যা দমন করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিলীমা জাহান জানান, আমন মৌসুমে অধিক ফলনের জন্য কৃষকদের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগানোর পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই তাদের লাইনে সঠিক মাত্রার বয়সের চারা রোপণ, জৈব ও রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক সুষম মাত্রায় প্রয়োগের নির্দেশনা দেয়া হয়। এ বছর অন্যান্য রোগবালাই সিথ ব্লাইট বা খোল পোড়া, মাজরা পোকার আক্রমণের তুলনায় বাদামি গাছ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ অধিক।
ধানের মারাত্মক ক্ষতিকর এ পোকা অধিকাংশ কৃষকদের কাছে কারেন্ট পোকা নামে পরিচিত। বাদামি রঙের এ পোকা আকারে ছোট, পেট মোটা ও লম্বায় ৩-৫ মিলিমিটার হয়ে থাকে। এরা দলবদ্ধভাবে ধান গাছের নিচের দিকে অবস্থান করে গাছ থেকে রস চুষে খায়, ফলে ধান গাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে যায়। এদের দ্রুত বংশবৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পড়লে ধানের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষতি সাধন হতে পারে। এর রোধকল্পে নিয়মিত গাছের গোড়া পর্যবেক্ষণ করতে হবে, পোকা দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে দিয়ে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং গাছের নিচের দিকে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
কারেন্ট পোকার দমনে কৃষকদের করণীয় ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই কৃষকদের মাঝে ৫ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউপিতে ব্লকভিত্তিক গ্রুপ মিটিং বা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে ১০ জন উপ-সহকারী কৃষি অফিসার এর দমনে করণীয় বিষয়ে কৃষকদের মাঝে পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রেখেছে। কয়েকদিন আগে জমিতে পানির একটু সমস্যা হয়েছিল। কৃষকরা সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে পানি দেয়া শুরু করছিল, কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় তা কেটে গেছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূল থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জন হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়