বাংলাদেশকে জমি লিজ দিতে চায় আফ্রিকা

আগের সংবাদ

যে কারণে সাংসদদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শেষ হয় না

পরের সংবাদ

ওয়েবিনারে আলোচকদের অভিমত : কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশে কার্যকর নীতি প্রণয়ন দরকার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জীবনযাত্রার উন্নতির সঙ্গে সমহারে বাড়ছে মানুষের ব্যবহার্য্য দ্রব্যাদির পরিমাণও। ফেলে দেয়া বর্জ্যরে মধ্যে কঠিন বর্জ্য আমাদের পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্য সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করছে। কিন্তু এর উৎপাদন সম্পর্কিত নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে সঠিক বাস্তবায়ন করতে পারলে বর্জ্য থেকে সম্ভাবনার সম্পদ হিসেবে ব্যবহার হতে পারে, আর সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে পরিবেশ দূষণ বাড়বে। এমন বাস্তবতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে এড়িয়ে পরিচ্ছন্ন দেশ গড়া অসম্ভব। এ অবস্থায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি কার্যকর বাস্তবায়নযোগ্য নীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন আলোচকরা।
গতকাল মঙ্গলবার ইউএসএআইডিও এবং এফসিডিওর আর্থিক সহযোগিতায়, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহায়তায়, ডিএসকে কনসোর্টিয়াম ও ভোরের কাগজের যৌথ আয়োজনে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এছাড়া ওয়েবিনারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনেকগুলো সুপারিশ উঠে আসে। সুপারিশগুলোকে পর্যালোচনা করে একটি কার্যকর বাস্তবায়নযোগ্য নীতি প্রণয়নের তাগিদ দেন বক্তারা। দুস্থ্য সহায়তা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক দিবালোক সিংহের সভাপতিত্বে ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পানি সরবরাহ শাখা) মো. ইব্রাহীম, বিশেষ অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব মো. সেলিম রেজা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (নগর উন্নয়ন শাখা) মো. নুরে আলম সিদ্দিকী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর সিতওয়াত নাঈম, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি মঈনউদ্দিন আহমেদ, আইটিএন বুয়েটের প্রজেক্ট ম্যানেজার আলাউদ্দিন আহমেদ, ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের চিফ অপারেটিং

অফিসার ড. আবদুল্লাহ আল-মুয়ীদ, ওয়াটারকিপার বাংলাদেশের কোঅর্ডিনেটর শরীফ জামিল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জয়েন্ট সেক্রেটারি স্থপতি ইকবাল হাবিব, বেলার খুরশেদ আলম, ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাজু বসাক, দৈনিক অবজারভারের সিনিয়র রিপোর্টার বনানী মল্লিক, আইনজীবী আবদুর রহিম, আইনজীবী স্মৃতি আক্তার, আইনজীবী শহিদা আক্তার, ঢাকা ক্লিনিং প্রজেক্টের টেকনিক্যাল এডভাইজার সুমন আহসানুল ইসলাম। ওয়েবিনারে ঢাকা কলিংয়ের কনসোর্টিয়াম সমন্বয়ক সানজিদা জাহান আশরাফি প্রজেক্ট পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।
মো. ইব্রাহীম বলেন, আমরা উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বর্জ্যরে পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বর্জ্য থেকে সম্পদে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া আমাদের খুুঁজে বের করতে হবে। আমাদের এখানে বর্জ্য অপসারণের জন্য জমির পরিমাণ খুবই কম জানিয়ে তিনি বলেন, বর্জ্য অপসারণই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ অবস্থায় বর্জ্য হ্রাস করার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের লক্ষ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যদি বর্জ্য অপসারণ করতে গিয়ে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে বিদ্যুৎ পাই, এটা আমাদের জন্য একটা বাড়তি সুবিধা। এছাড়া আমরা পিপিপির মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণের বিষয়টিও ট্রায়ালে রেখেছি। পাশাপাশি আমরা যদি অরগানিক বর্জ্যকে মাটির দিকে ফিরিয়ে দিতে পারি, আর ইনঅরগানিক বর্জ্য প্রসেস করতে পারি, তাহলে আমাদের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটা হয়ে যায়। আমরা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে বিধি করতে যাচ্ছি, এখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, তার একটা গাইডলাইন আমরা এখান থেকে পেয়ে যাব। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিধিমালা চূড়ান্ত করব।
ড. দিবালোক সিংহ বলেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকরে আমাদের দেশে যে আইন আছে সেটা কতটা বাস্তবায়ন হবে এবং সরকারের বাজেটে এ বিষয়ে কতটুকু বরাদ্দ রাখা হয়, সে বিষয়ে সবার আগে নজর দিতে হবে। এছাড়া হতদরিদ্র এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নজর দেয়া অর্থাৎ তারা যেহেতু অল্প শিক্ষিত তাই তাদের সচেতন করা জরুরি। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে এই কাজে সম্পৃক্ত করতে পারলে একদিন হয়তো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নশীল দেশ রাশিয়ার মতো জিরো টলারেন্সে নামিয়ে আনতে পারব।
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নিজস্ব প্রজেক্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরে ঢাকা কলিংয়ের কনসোর্টিয়াম সমন্বয়ক সানজিদা জাহান আশরাফি বলেন, পরিবেশবিদদের নিয়ে এই প্রজেক্টের আওতায় ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুটি করে ওয়ার্ড নিয়ে মোট চারটি ওয়ার্ডের বস্তিতে জরিপ চালানো হচ্ছে। সরকারের যেসব কর্মকর্তা এ কাজে নিয়েজিত আছেন তারা যদি সুষ্ঠুভাবে কাজগুলো শেষ করতে পারেন তাহলে বস্তির মানুষগুলোর মধ্যে আচরণগত অনেক পরিবর্তন আসবে এবং তারা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে পারবে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব কাজ করা হবে যাতে সিটি করপোরেশনের বাজেটে বস্তিবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট রাখবে। পাশাপাশি মিডিয়াকে এ কাজে সম্পৃক্ত করে প্রচার করতে হবে।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বর্জ্য এখন বিশাল ব্যবসার জায়গা। চায়না সিএমএসি কোম্পানির সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও উত্তর সিটি মিলে সমন্বয় করে ওয়েস্ট এনার্জি নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। উত্তর সিটির গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্টেক রয়েছে সেখানে করপোরেশনের নিজস্ব জমিতে ল্যান্ড ফিল্ড তৈরি করা হয়েছে। যেখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে ৫০০ টন বর্জ্য নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে।
সিটি করপোরেশন বর্তমানে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টন বর্জ্য উৎপাদন করে জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে এবং এই পরিধি বেড়ে যাওয়ার পেক্ষিতে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে- একদিন যদি পরিষ্কার করা না হয় পরের দিন এই নগর বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। এসব কিছু চিন্তা করেই আমরা পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছি।
ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সিতওয়াত নাঈম বলেন, দক্ষিণ সিটিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা একটি মাস্টার প্ল্যান ফলো করছি। সেটি হলো ২০১৮ থেকে ৩২ সাল পর্যন্ত। মেয়র ইতোমধ্যে এই প্ল্যানটি অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি প্রগ্রেসিভ ডেভেলপমেন্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যা সমন্বিত প্ল্যান ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
ঢাকা দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ডের জনসংখ্যার সঙ্গে বর্জ্যরে পরিমাণও বেড়েই চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য আমরা পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছি। কোনো খোলা জায়গায় বর্জ্য থাকবে না। এর মধ্যে ২৪টি এসটিএস তৈরি হয়েছে। ২২টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ইউএসএআইডির বাংলাদেশের পলিটিক্যাল প্রসেস এন্ড সিএসও টিম লিডার স্লাভিসা রাডোসেভিচ বলেন, এই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থানার সংকট একটা বৈশ্বিক সমস্যা। ঢাকা কলিং প্রজেক্ট ঢাকার ক্ষেত্রে অত্যন্ত যুগোপযোগী। মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এই প্রজেক্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আলোচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা উঠে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেকগুলো ভালো ভালো নীতি আছে। এই নীতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে যেন বাস্তবায়নযোগ্য একটি নীতি বের করা যায়, সেদিকে জোর দেয়া উচিত। এখান থেকে ভালো একটা মডেল তৈরি করা যেতে পারে, যাতে বস্তি এলাকার মানুষ কিভাবে এই বর্জ্যগুলোর ব্যবস্থাপনা করবে এই মডেলটি অনুসরণ করা যেতে পারে বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গাও।
বস্তিবাসীর পক্ষে কড়াইল বস্তি থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে স্মৃতি আক্তার বলেন, সবচেয়ে বড় এই বস্তিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। এখানে সবাই ময়লা যেখানে-সেখানে ফেলে রাখে বা ঢিল মেরে ঝিলে ফেলে দেয়। কাছাকাছি যে এসটিএস রয়েছে, সেখানে ময়লা ফেলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তাই সিটি করপোরেশনের বরাদ্দে বস্তিবাসীর উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ রাখার অনুরোধ জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়