তরুণীরাই মূল টার্গেট : একটি চক্রের হাতে ২ হাজার নারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক

আগের সংবাদ

সিসিটিভির আওতায় আসছে রাজধানী : এ মাসেই হতে পারে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

পরের সংবাদ

ভালো অবস্থানে নতুন প্রজন্মের ব্যাংক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেজুঁতি : করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের ব্যাংকিং খাত অনেকটাই স্থবির। ঋণপ্রবাহ কম থাকায় ব্যাংকগুলো আমানতের টাকা বিনিয়োগ করতে পারছে না। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি অধিকাংশ ব্যাংক আশানুরূপ মুনাফা পায়নি। তবে একটি ব্যাংক ছাড়া নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে ঋণ বিতরণ এবং আমানতের পরিমাণ। একইসঙ্গে খেলাপি ঋণ, প্রভিশন সংরক্ষণ, সম্পদের বিপরীতে আয় ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের অনুপাতসহ (সিআরএআর) ২০২০ সাল শেষে সবকটি সূচকে ভালো করেছে অধিকাংশ নতুন ব্যাংক।
এদিকে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দুর্নীতিতে ডুবতে বসা ফারমার্স ব্যাংক নাম পাল্টে পদ্মা ব্যাংক নামে যাত্রা শুরুর তিন বছরের মাথায় ‘যে কোনো ধরনের বিপর্যয়’-এর আশঙ্কা করে সরকারের যে কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ (মার্জার) বা অধিগ্রহণ (অ্যাকুইজিশন) করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে গত ৮ জুলাই ব্যাংকটির দুরবস্থার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে। পরবর্তীতে ব্যাংক বাঁচাতে বিদেশি বিনিয়োগ আনার ঘোষণা দেয় ব্যাংকটি। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেলমর্গান এন্ড কোম্পানির সঙ্গে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক চুক্তি করেছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়। ডেলমর্গান ৭০ কোটি ডলার (৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ আনতে মধ্যস্থতা করবে। জানা গেছে, ২ সেপ্টেম্বর পদ্মা ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ডেলমর্গান এন্ড কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু বলেন, আগামী ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই এ বিনিয়োগ আসবে। বিনিয়োগের মধ্যে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আসবে মূলধন বিনিয়োগ হিসেবে। আর বাকি টাকা আসবে ঋণ হিসেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের মোট সম্পদের ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এখন নতুন প্রজন্মের ১২ ব্যাংকের দখলে। এসব সম্পদের মধ্যে ঋণ এবং অগ্রিম প্রায় ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৯ সালের তুলনায় খেলাপির হার কমে ২০২০ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অনুমোদন দেয়া হয় চতুর্থ প্রজন্মের ১২টি নতুন ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে এনআরবি, এনআরবি গেøাবাল ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। বাকি ৯টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। এগুলো হলো- ইউনিয়ন, মেঘনা, মিডল্যান্ড, মধুমতি, পদ্মা সাবেক (দ্য ফারমার্স), সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স, পুলিশ কমিউনিটি ও সীমান্ত ব্যাংক। চলতি বছরে নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক। এগুলোর মধ্যে একটি শরিয়াহভিত্তিক, একটি বিশেষায়িত এবং বাকি ১০টি প্রচলিত ব্যাংকিংসেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংকগুলোর মোট সম্পদের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। এখন ব্যাংক সম্পদের ৪ দশমিক ৯ শতাংশ নতুন ব্যাংকের দখলে থাকলেও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। একই সঙ্গে নতুন ব্যাংকগুলোর ঋণ ও অগ্রিম ২০১৯ এর তুলনায় দশমিক তিন শতাংশ বেড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছেছে। কারণ সে সময় ঋণের হার ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নতুন এ ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের চিত্র সার্বিক ব্যাংকিং খাতের তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে। ২০২০ এর ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট সম্পদের মধ্যে ঋণের অংশ ছিল ৬৯ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে আগের বছর এর হার ছিল ৭১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের মোট খেলাপির পরিমাণ ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, যা তাদের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে নতুন প্রজন্মের এ ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে অনেকটা সতর্ক ছিল। ভালো গ্রাহককে ঋণ দেয়ায় এর খেলাপি অন্য সব ব্যাংকগুলোর তুলনায় অনেকটা কম। বর্তমানে নতুন এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি রয়েছে বিতরণকৃত ঋণের ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও ২০১৯ এর ডিসেম্বর শেষে সব তফসিলি ব্যাংক ও নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
নতুন ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, একটি ব্যাংক ব্যতীত ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ অন্যান্য ব্যাংক সফলভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করে। এছাড়া নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর সম্পদের বিপরীতে আয় রিটার্ন অন অ্যাসেটস (আরওএ) সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ২০২০ সালে ব্যাংক খাতের (০ দশমিক ৩ শতাংশ) তুলনায় নতুন ব্যাংকগুলোর (০ দশমিক ৯ শতাংশ) আরো অনেক বেশি। একটি ব্যাংক ছাড়া নতুন ব্যাংকগুলোর মুনাফা প্রবণতা ভালো ছিল। নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। ২০১৩ সালের এপ্রিলে ব্যাংকটির যাত্রা শুরু। যাত্রা শুরুর চার বছরেই নানা অনিয়মে ধুঁকতে থাকা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঢেলে সাজানো হয়। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফরাসত আলী পদত্যাগ করার পর ওই দায়িত্ব নেন এস এম পারভেজ তমাল। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়। ব্যাংকটিতে বর্তমানে ১০ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকার ওপর আমানত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা ঋণ ও অগ্রিম রয়েছে। শহর ও গ্রামে ৮৩টি শাখায় তাদের কার্যক্রম চলছে। ৪৫০টি উপশাখা রয়েছে ব্যাংকটির, যা সব ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়াও শরিয়াভিত্তিক ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো ‘আল আমিন ব্যাংকিং’ চালুর মাধ্যমে সব শাখা ও উপশাখায় সেবা দেয়া হচ্ছে।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এস এম তমাল পারভেজ ভোরের কাগজকে বলেন, এনআরবিসি ব্যাংকের মূল লক্ষ্য জনগণের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়া। এজন্য প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন সেবা চালু করেছি। নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমানতের ক্ষেত্রে আমরা রেকর্ড পর্যায়ে রয়েছি। গ্রুপ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আমরা মাইক্রো ফাইন্যান্সিংয়ের আওতায় ঋণের ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণে এনজিওর মাধ্যমে আমাদের ফান্ডিং করছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা কেউ ঘরহীন থাকবে না। সে লক্ষ্যে যারা ছোট ছোট বাসা বাড়ি করে তাদের ঋণ দিচ্ছি। সামনে আমাদের নেটওয়ার্ক বাড়াতে নতুন সেবা আনতে যাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়