তরুণীরাই মূল টার্গেট : একটি চক্রের হাতে ২ হাজার নারীর অ্যাকাউন্ট হ্যাক

আগের সংবাদ

সিসিটিভির আওতায় আসছে রাজধানী : এ মাসেই হতে পারে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

পরের সংবাদ

ডুবছে আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান : ধারাবাহিক লোকসানে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় সব সূচকেই শক্ত অবস্থানে ছিল। প্রতি বছর ভালো মুনাফা করেছে; পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সব আর্থিক সূচকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা নীতি ছাড়ের সুযোগে করোনা মহামারির মধ্যে যখন সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভালো অবস্থানে উঠে এসেছে তখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি; বরং আরো অবনতি হয়েছে। এমনকি ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ ঋণই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের শুরুতে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চলতি দায়িত্ব পান চৌধুরী মনজুর লিয়াকত। এরপর ওই বছরের অক্টোবরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। তার হাতে দায়িত্ব আসার পর থেকেই অধঃপতনে যেতে থাকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। ইউনিয়ন ক্যাপিটালের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মূলত প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এমডির অদক্ষতার কারণেই প্রতিষ্ঠানটি তলানিতে নেমেছে। তিনি প্রতিষ্ঠানের উন্নতির চেয়ে ব্যক্তিগত উন্নতিতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এতে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের আমানতকারীরা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন।
বাংলাদেশ লিজিং এন্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ এসোসিয়েশনের একজন সদস্য বলেন, ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫-৭টি অনিয়মের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাকিগুলো বেশ ভালো আছে। কিন্তু দুর্বলগুলোর কারণে পুরো খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুই বছরে গড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ ও ব্যবসা কমেছে। বিতরণ করা ঋণ ও লিজ খেলাপি হওয়ার প্রবণতা বাড়ায় তারল্য সংকট বেড়েছে। এ সদস্য আরো বলেন, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের অনিয়মের কারণে পুরো খাতের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে শেয়ারবাজার ভালো থাকায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পারফরম্যান্স খুবই ভালো। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ খাতকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২১ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। পরের বছর মুনাফা করে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালেও ৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা মুনাফা করে। কিন্তু পরের বছরে এসেই প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো লোকসানে চলে আসে এবং রীতিমতো ধস নামে। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান চৌধুরী মনজুর। ওই বছর ইউনিয়ন ক্যাপিটাল প্রায় ১০৬ কোটি টাকা লোকসান করে। এর পরের বছরও থেকে যায় লোকসানের বৃত্তে। ২০২০ সালে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের লোকসান হয় ৫৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০২১ সালের প্রথমার্ধেও (জানুয়ারি-জুন) ১৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। অর্থাৎ চৌধুরী মনজুর লিয়াকতের দায়িত্বপালনকালে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের লোকসান হয়েছে ১৭৪ কোটি টাকার বেশি। এমন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানকে বিপুল লোকসানে ডুবিয়ে এখন আরেকটি ভালো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন এ এমডি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শুধু লোকসানের হিসাবে নয়, তার সময়ে অন্য সব সূচকেও তলানিতে নেমেছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১০১ কোটি ৪২ লাখ টাকার মূলধন সংকটে রয়েছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। ২০১৬ সালে যেখানে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল প্রায় দেড় টাকা সেখানে ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬ টাকা ১৩ পয়সা, ২০২০ সালে লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৮ পয়সা। আর ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ৮৪ পয়সা।
প্রতিষ্ঠানটির সম্পদমূল্যও কমেছে চৌধুরী মনজুর লিয়াকতের সময়ে। ২০১৮ সালে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) ছিল ১৪ টাকা ৬ পয়সা। সেখানে ২০২০ সালে এনএভি কমে হয়েছে ৪ টাকা ১২ পয়সা। এছাড়া প্রতিষ্ঠনটি তালিকাভুক্তির পর থেকে প্রতি বছর শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দিয়ে এলেও কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত স্টক ও ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে কোনো ডিভিডেন্ড দিতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের বিনিয়োগকারীরা। এ বিষয়ে চৌধুরী মনজুর লিয়াকতের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে বিপুল অঙ্কের খেলাপিতেও ডুবতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ইউনিয়ন ক্যাপিটালের খেলাপির হার ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। করোনাকালীন বিশেষ নীতিছাড়ের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে প্রায় অর্ধেক ঋণই খেলাপি হয়ে পড়তে পারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির। এদিকে আলোচনা চলছে, এমন ব্যক্তিকেই ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পেতে চাইছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এস.এম বখতিয়ার আলম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়