গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব : শিল্পকলায় দ্বিতীয় দিনে ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

জাতিসংঘ থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার নেপথ্যে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা

পরের সংবাদ

ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা : ভোলায় গৃহকর্তা জেলে ১৭ দিন ধরে অঘোষিত গৃহবন্দি পরিবার

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এইচ এম নাহিদ, ভোলা থেকে : পরিবারটির প্রধান ভোলা জেলা সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে ও জয়রাম নামে ফেসবুক আইডির ম্যাসেঞ্জারে নবী মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে অবমাননাকর কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে আজ ১৭ দিন পর্যন্ত কার্যত অঘোষিত গৃহবন্দি হয়ে রয়েছে পরিবারটি। ওদিকে ঘটনার পরদিন থেকে গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে ৫৪ ধারায় আটকাদেশ নিয়ে জেলহাজতে রয়েছে।
ঘটনার পর থেকে ভোলার মুসলিম ঐক্যপরিষদ মূল অপরাধীর বিচারের দাবিতে দফায় দফায় প্রতিবাদ সমাবেশ করছে। এ কারণে পরিবারটি আতঙ্কিত হয়ে গৃহবন্দির মতো জীবনযাপন করছেন। ঘটনার পর থেকে পুলিশ পরিবারটির নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে বলে দাবি করছে ভোলা জেলা পুলিশ।
ব্যবসা বাণিজ্য, শিশুদের স্কুলে যাওয়া খেলাধুলা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি সদস্য বর্তমানে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন বলে দাবি করছেন গৌরাঙ্গের স্ত্রী রিনা রানী দে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমার স্বামীকে একটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী তৃপ্তি রানী দে (১৮) অসুস্থ, একমাত্র ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শঙ্কিত। অজানা হামলার আশঙ্কায় বাসার বাইরে বের হতে পারি না। অনেক কষ্টের জীবন, এ রকম থাকার চেয়ে না থাকাই অনেক ভালো।
গৌরাঙ্গের ছোট ভাই রাজকুমার দে বলেন, খুব আতঙ্কে জীবনযাপন করছি দাদা। আমরা পরিবারের সদস্যরা বাইরে যাওয়ার চিন্তাও করতে পারি না। অজানা এক আতঙ্ক সব সময় ঘুরপাক খাচ্ছে। দাদা যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তার বিচার আমরাও চাই। তবে বিনা কারণে যেন আমার দাদা ষড়যন্ত্রকারীদের টার্গেটে পরিণত না হয় সেই বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। ভোলা সদর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির

সভাপতি শান্ত ঘোষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার্যত গৌরাঙ্গ কাকার পরিবারকে কেউ গৃহবন্দি করে রাখেনি। মূলত, ঘটনার পর থেকে তারা নিজেরাই নিজেদের এক ধরনের অজানা আতঙ্কে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর, সেহেতু তারা নিজেদের জনসমাগম থেকে একটু দূরে রেখেছেন। তাছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
জেলা সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অসিম চন্দ্র সাহা বলেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ গৌরাঙ্গ দার বিরুদ্ধে এসেছে। তাই তদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে দাদার পরিবারকে কেউ গৃহবন্দি করে রাখেনি, সামাজিক কারণেই তারা নিজেরাই বাজার সদাই করা ছাড়া বাসা থেকে তেমন বের হন না। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাদার পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলা মুসলিম ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোবাশ্বের উল হক নাঈম বলেন, ভোলা জেলার মানুষ খুব শান্তি প্রিয়। সব ধরনের ধর্ম-বর্ণের মানুষ নিয়েই আমাদের বসবাস। আমরা ভোলার মুসলিমরা কখনোই কোনো ধর্মকে কটাক্ষ করে কথা বলি নাই, বরং অন্য ধর্মের মানুষের ধর্ম-কর্ম পালনে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। অথচ পর পর তিনবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে আমরা ধর্মীয় অবমাননার শিকার হচ্ছি। বিগত ২টি ঘটনার বিচার হলে আজ তৃতীয় ঘটনার জন্ম হতো না। তাই প্রশাসনের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করব- প্রকৃত ঘটনায় যে বা যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করা। তবে সে ক্ষেত্রে গৌরাঙ্গের পরিবার নিরাপরাধ। আমরা তথা মুসলমানদের পক্ষ থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছাড়া অন্য দৃষ্টিতে দেখার প্রশ্নই আসে না। আমি ভোলা জেলা মুসলিম ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে ম্যাসেজ দিতে চাই, ঘটনাটি যাতে অন্যদিকে নিয়ে কোনো অপশক্তি সুবিধা আদায় করতে না পারে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি দিতে হবে।
পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সার বলেন, ভোলায় এ রকম ঘটনা আগেও ঘটেছে বিধায় বিষয়টি তদন্তে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে তদন্তকাজ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। গৌরাঙ্গ নামের আইডির কোনো কিছু আমরা চাইতেই পারি নাই। কারণ একটা আইডির ডিটেইলস চাইতে গেলে সেখানে লিংকসহ পাঠাতে হয় ফেসবুক আইডির। আমরা ওইটার লিংক পাই নাই। আমরা জয়রামের লিংক পেয়েছি। আমরা আশাবাদী যে এটাও বের করতে পারব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়