গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব : শিল্পকলায় দ্বিতীয় দিনে ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

জাতিসংঘ থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার নেপথ্যে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা

পরের সংবাদ

পাবনা চিনিকল বন্ধ : আখ নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আবুল কালাম আজাদ, পাবনা থেকে : টানা লোকসানের কারণে গত বছর সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করে। এর মধ্যে পাবনা চিনিকলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে অলস পড়ে আছে জেলার এই বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১-২২ মৌসুমেও আখ মাড়াই হচ্ছে না। এরই মধ্যে মিলে কর্মরত কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেশির ভাগকেই বিভিন্ন মিলে বদলি করা হয়েছে। মিল জোন এলাকার অধিকাংশ কৃষকও এ বছর আখ চাষ করেননি। মিল কর্তৃপক্ষও আখ চাষের জন্য কৃষকদের ঋণ এবং কৃষি উপকরণ সরবরাহ করেনি। যেসব কৃষক নিজ উদ্যোগে আখ চাষ করেছেন তারাও আখ সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
জানা গেছে, পাবনা চিনিকলে দৈনিক মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১ হাজার ৫০০ টন আখ। এর জন্য ১০ হাজার একর জমিতে আখ আবাদ করা প্রয়োজন হতো। এই মিলে আখ মাড়াই শুরুর পর থেকে ২০০২-২০০৩ মৌসুমে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৫৩৭ একর জমিতে আখ আবাদ করা হয়। এ ধারা ২০০৭-৮ অর্থবছর পর্যন্ত চলতে থাকে। কিন্তু ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে বিভিন্ন ফসলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আখের আবাদ হ্রাস পেতে থাকে। ফলে মাড়াই মৌসুমে আখের স্বল্পতা দেখা দেয়। এদিকে আখ দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়ায় পাবনার ঈশ্বরদী অঞ্চলের চাষিরা স্বল্পমেয়াদি ফসলের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে আখ উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়া এ অঞ্চলের লিচুর ফলন ভালো হওয়ায় অনেক কৃষক তাদের জমিতে লিচু বাগান করেছেন।
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে পাবনা জেলার মিল জোন এবং নন-মিল জোন মিলে আখ আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ২৯৯ হেক্টর জমিতে। মিলে চিনি উৎপাদন বন্ধ ঘোষণার পর ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলায় মোট ১ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে আখ আবাদ করা হয়েছে। মিল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে আখ মাড়াই স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এই মৌসুমে মিল জোন থেকে প্রায় ৩০ হাজার টন আখ পাশ্ববর্তী মিলগুলোতে সরবরাহ করা হয়। এর আগে ২০১৯-২০ মাড়াই মৌসুমে পাবনা সুগার মিলে ১ লাখ টন আখ মাড়াই করা হয়েছিল।
এদিকে গত মৌসুম থেকে পাবনা চিনিকলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অলস পড়ে আছে পাবনা সুগার মিলের শত কোটি টাকার সম্পদ। পরিচর্যার অভাবে মিলের পুরো এলাকা আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। দ্রুত মিল চালু করা না গেলে মিলের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন মিলের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও কৃষকরা। কৃষকদের স্বার্থে মিলের উৎপাদন পুনরায় চালু করার দাবি করেন তারা।
চলতি মৌসুমে পাবনা চিনি কল কর্তৃপক্ষ আখ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ না করলেও অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে তাদের জমিতে আখ চাষ করেছেন। তারা এখন উৎপাদিত আখ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তবে মিল কর্তৃপক্ষ বলছেন, পাবনা অঞ্চলে উৎপাদিত আখ নর্থ বেঙ্গল চিনি কল থেকে ক্রয় করা হবে। এদিকে অনেক কৃষক তাদের জমিতে উৎপাদিত আখ কেটে বিভিন্ন হাটবাজারে খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন।
পাবনা চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন জানান, পাবনা চিনি কল পাবনা জেলার একটি বৃহৎ শিল্প। মিলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি এই মিলকে ঘিরে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু বন্ধ থাকায় অনেক মানুষের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি আখচাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর যত দিন পাবনা মিল চালু করা না হয়, তত দিন ঈশ্বরদী এলাকাকে নর্থ বেঙ্গল চিনি কল জোনের আওতায় আনা হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী মিলটি যেন পুনরায় চালু করার ঘোষণা দেন।
ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষক নেতা মুরাদ আলী মালিথা বলেন, পাবনা চিনি কলে গত বছর আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণার পর চলতি বছর মিল কর্তৃপক্ষ আখ চাষের জন্য কৃষকদের কোনো সহযোগিতা করেননি। তারপরেও অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে আখ চাষ করেছেন। তারা এখন আখ সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
পাবনা সদর উপজেলার দক্ষিণ মাছিমপুর গ্রামের কৃষক মো. ছলিম জানান, আমি এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে আখ আবাদ করেছি। প্রতি বছর মিল থেকে সহযোগিতা করা হলেও এ বছর কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। এমনকি আখ ক্রয়ের ব্যাপারেও কিছু জানা যাচ্ছে না। মিলে বিক্রি করতে না পারলে নিজেদেরই গুড় তৈরির ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাবনা চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানায়, পাবনা চিনিকলের অন্তর্গত ১০টি চিনি উৎপাদনের জোন আছে। তবে উৎপাদন কম হওয়ায় এ বছর মিলের চারটি আখ উৎপাদন জোনকে পাবনার নিকটবর্তী গোপালপুর চিনিকলের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ফলে কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। যে চারটি জোন নাটোরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে, সেগুলো হলো ঈশ্বরদী জোন, মুলাডুলি জোন, ল²ীকুণ্ডা জোন ও মিলগেট জোন। এসব জোনের আওতাধীন কৃষকরা নির্ধারিত সময়ে আখ সরবরাহ করতে পারবেন।
পাবনা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফ উদ্দীন আহম্মেদ জানান, আখের স্বল্পতা, বিভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদি ফসলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আখের আবাদ হ্রাস পেতে থাকা এবং লোকসানের কারণে মিল মাড়াই স্থগিত করা হয়েছে। মিলে প্রায় ৬০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। এদের মধ্যে চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকে কর্মকর্তাদের এবং গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিভিন্ন মিলে বদলি করা হয়েছে। অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীই বদলি হয়ে গেছেন।
এমডি আরো বলেন, সরকার মিল বন্ধ ঘোষণা করেনি। এই মিলকে আরো আধুনিকীকরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেটা চিনি কলও হতে পারে আবার অন্য কোনো ইন্ডাস্ট্রিও হতে পারে।
১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া মৌজায় ৬০ একর জমির উপর পাবনা চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে আখ মাড়াই মৌসুমে কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। কারখানাটি বাণিজ্যিকভাবে চিনি উৎপাদন শুরু করে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে। চালুর পর থেকেই কারখানাটি উৎপাদন ঘাটতি ও লোকসানের কবলে পড়ে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়