গঙ্গা-যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব : শিল্পকলায় দ্বিতীয় দিনে ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়

আগের সংবাদ

জাতিসংঘ থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার নেপথ্যে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা

পরের সংবাদ

নোয়াখালীর ঘরে ঘরে জ¦র-সর্দির প্রাদুর্ভাব : হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী থেকে : নোয়াখালী জেলায় ঘরে ঘরে জ¦র-সর্দি-কাশির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত ২০ দিন ধরে হঠাৎ এসব রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে জ¦র-সর্দি-কাশির রোগীর চাপ দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে করোনার লক্ষণ একই হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নোয়াখালীর বাসিন্দারা।
জেলা সদরের সোনাপুর এলাকার নাসির উদ্দিন বলেন, প্রথমে তার মাথাব্যথা ও জ¦র জ¦র ভাব শুরু হয়। হালকা শুকনো কাশিও ছিল। রাতে ১০০-১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত জ¦র হয়। পরে শুরু হয় সর্দি। করোনা কিনা ভেবে একটু আতঙ্কিত হন তিনি। ভয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন তিনি। শুরু করলেন জ¦র-সর্দির ওষুধ খাওয়া।
জ¦র না কমায় তিন দিন পর করোনার পরীক্ষা করান তিনি। করোনা রিপোর্ট এলো নেগেটিভ। জ¦রও কিছুটা কমে গেছে। তবে শরীর ব্যথা ও দুর্বল। করোনা নেগেটিভ আসার পর পরিবারের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করলেন তিনি। ঠিক ওই দিন রাতে তার ছেলেরও জ¦র আসে।
প্রথমে ১০১ ডিগ্রি, পরে ১০৩ ডিগ্রি, তারও একই অবস্থা। জ¦র-সর্দি-কাশি। ছেলের জ¦র দেখে আতঙ্কিত হন তিনি। পরদিন সকালে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ছেলেকে জ¦রের ওষুধ খাওয়াতে শুরু করেন। ৪ দিন পর আসতে আসতে কমে গেল জ¦র। এরপর একইভাবে জ¦র শুরু হলো নাসিরের স্ত্রীর।
এ চিত্র শুধু নাসিরের পরিবারে নয়। নোয়াখালী জেলার প্রতিটি এলাকার ঘরে ঘরে এখন জ¦র-সর্দির প্রাদুর্ভাবে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ঘরের একজনের জ¦র হলে অন্য সবারই জ¦র হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এটা মৌসুমি জ¦র। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে বেশি করে তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ৫ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জ¦র-সর্দি-কাশির ৯৭ জন মহিলা রোগী ভর্তি রয়েছেন। ৮ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৭৯ জন পুরুষ রোগী। প্রতি ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতা রয়েছে ২৪ জন রোগীর। বেড অনুযায়ী রোগী রয়েছে দ্বিগুণ।
পুরুষ ওয়ার্ডের নার্সিং অফিসার জাকির হোসেন বলেন, রোগীদের চাপ অনেক বেড়েছে। ফ্লোরে রোগীদের সরিয়ে হাঁটতে হয়। গত ২০ দিন ধরে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে পুরুষের ৮ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৮ জন রোগীর জায়গায় ভর্তি রয়েছেন ৭৯ জন রোগী। এই দুই ওয়ার্ডে গড়ে প্রতিদিন ৬০ জন রোগী ভর্তি হন। মহিলাদের ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির হার পুরুষের চেয়ে বেশি। মহিলাদের প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জন করে রোগী ভর্তি হন। কম জনবল দিয়ে দ্বিগুণ রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান এই নার্সিং অফিসার।
নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়াকুব আলী মুন্সী জানান, দিনে বেশি গরম ও রাতে কিছুুটা ঠাণ্ডা হয়। তাই এ ধরনের জ¦র ও সর্দি হয়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এই জ¦র, সর্দি ও কাশির প্রাদুর্ভাব ঘটে। এটাকে আমরা সিজনাল ফ্লু বলি। সিজনাল ফ্লুর জন্য ভয়ের কিছু নেই।
তিনি আরো জানান, এমন জ¦র হলে আমরা প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার খেতে বলি। জ¦র-ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ আর ঠাণ্ডার জন্য অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে বলা হয়। স্বাভাবিক খাবার, ফল, শাকসবজি বেশি খেতে হবে। তাহলে ভালো হয়ে যায়।
ডা. ইয়াকুব আলী মুন্সী বলেন, যদি কারো ইনফেকশন যোগ হয়ে যায়, তখন তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। কাশি হলে কফ বের করার জন্য এক ধরনের সিরাপ দেয়া হয়। এ জ¦র ও সর্দি ৫-৭ দিন পর ভালো হয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, এই জ¦র হলে অনেকেই নিজের মতো করে নাপা বা অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খান। এটা মোটেও ঠিক না। যদি জ¦র হয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসক দেখিয়ে তার পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে হবে। কেননা, এখন করোনা ভাইরাসও রয়েছে।
সিজনাল জ¦র-সর্দি নাকি কারোনার জন্য জ¦র-সর্দি, তা চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি ভালো বুঝবেন এবং সেই অনুপাতে পরামর্শ দেবেন।
তাই নিজেরা নিজের মতো করে ওষুধ না খেয়ে অবশ্যই চিসিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, যদিও এখনকার এই জ¦র-সর্দি-কাশি সিজনাল ফ্লু, তারপরও করোনার কারণে মানুষের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এটাকে করোনা ভেবে হতাশ হওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যে আমাদের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীর চাপ কম থাকলেও বর্তমানে জ¦র-সর্দি-কাশির ফ্লু দেখা দেয়ায় সেখানে রোগীর চাপ বেড়েছে। এই জ¦র-সর্দি-কাশি দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়